দুবাইতে ইসরায়েলি পর্যটকদের ঢল
১৫ জানুয়ারি ২০২১একটি চুক্তি পুরো ছবিটা বদলে দিয়েছে। ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তি। এরপর মরুভূমির বুকে বাণিজ্যিক ও পর্যটক আকর্ষণের দিক থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর দুবাই আরো বেশি আন্তর্জতিক চেহারা পেয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর ইসরায়েলিদের নিয়ে প্রথম বিমান আসে দুবাইতে। সেই শুরু। তার পরের আট সপ্তাহে সাড়ে তিন ঘণ্টার বিমানযাত্রা করে দুবাইয়ে পৌঁছে গেছেন ইসরায়েলের ৫০ হাজার মানুষ। এখন দুবাই ও ইসরায়েলের মধ্যে চারটি বিমানসংস্থা দিনে ১৫টি করে ফ্লাইট চালায়।
আমিরাত এখন আর অল্প কিছু ইহুদির বাসস্থান নয়, বরং স্থানীয় ইহুদি ও পর্যটকদের নিয়ে গমগম করছে দুবাই। সদ্য খোলা কোশার রেস্তোরাঁয় প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে। বিলাসবহুল হোটেলে বিশাল করে ইহুদিদের বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে ইহুদিদের ছুটির সময়ও হোটেলে অনুষ্ঠান হয়েছে। বিশ্বের সব চেয়ে উঁচু বাড়ি ব্রুজ খালিফার সামনের স্কোয়ারে হিব্রু গান গাওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের পর্যটকদের অভাবনীয় ভিড়
২০২০-র অধিকাংশ সময়টাই ইসরায়েলের মানুষের কেটেছে কড়া লকডাউনের মধ্যে। এরপর এখন ধনী ইহুদিদের আমিরাত যাওয়ার ঢল নেমেছে। নতুন রেস্তোরাঁ, পর্যটক আকর্ষক জায়গা ও শপিং মলের আকর্ষণে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন দুবাইতে।
ইসরায়েলের মানুষদের দুবাই যেতে ভিসার ঝামেলা পোহাতে হয় না। ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখপাত্র অ্যাডাম কোহেন বলেছেন, এখন আমিরাত সহ তিনটি দেশে গেলে ইসরায়েলিদের আর কোয়ারান্টিনে থাকতে হচ্ছে না।
তবে ইসরায়েল থেকে আসা একাধিক পর্যটকের কোভিন ১৯ সংক্রমণ থাকায় তাঁদের হোটেলের ঘরে নিভৃতবাসে থাকতে হয়েছে। এখন বাইরের দেশ থেকে ইসরায়েলে ফিরলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারান্টিনে থাকতে হচ্ছে। আর লকডাউন থাকলে বাইরের দেশের মানুষকে ইসরায়েলে আসতে দেয়া হচ্ছে না, তাই এখন যাত্রা একতরফা হচ্ছে। ইসরায়েল থেকে মানুষ বাইরে যাচ্ছেন এবং ঘরে ফিরছেন। বাইরের মানুষ ইসরায়েলে ঢুকতে পারছেন না।
ফলে এখনো পর্যন্ত আমিরাতের অল্প কিছু মানুষই বাণিজ্যিক কারণে ইসরায়েল যেতে পেরেছেন। দুবাইয়ের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ইসরায়েলের মানুষকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিতে হচ্ছে। একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে তাতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব ঘোষণা দিতে হচ্ছে।
মুসলিম এলাকায় ইহুদি প্রভাব
দুবাইতে যে এত ইসরায়েলের মানুষ আসছেন, তার একটা প্রভাবও পড়ছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জনপ্রিয় এক ক্যাটারার কোশার কিচেন খুলে দিয়েছেন। আবু ধাবির পর্যটন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায় একটি চুক্তি করেছে। সেখানে কর্মকর্তাদের তারা প্রশিক্ষণ দেবে, যাতে তারা কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁকে কোশার কিচেনের সার্টিফিকেট দেয়ার আগে সবদিক খতিয়ে দেখতে পারেন।
তবে শুধু অস্থায়ী পর্যটকরাই আসছেন তাই নয়, দুবাইতে একটি ইহুদি স্কুল তৈরি হচ্ছে। ইহুদিদের চিরাচরিত ধর্মীয় স্নানের উৎসবের সঙ্গেও তারা পরিচিত হচ্ছেন। স্থানীয় ইহুদি লেভি ডাচম্যান তো সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন।
ইসারায়েলিরা আমিরাতে গিয়ে কীরকম ব্যবহার করবেন, তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। যেমন প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া, চীৎকার করা আমিরাতে বরদাস্ত করা হয় না। সেখানে কাউকে অপমান করলে জেলে যেতে হয়। এই কড়াকড়ি সত্ত্বেও ইসরায়েলের মানুষ দুবাইকে নিরাপদ মনে করেন। দুবাইতে সব চেয়ে বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে এবং সেখানে অপরাধের হার সবচেয়ে কম।
ব্যবসার রমরমা
ইসরায়েলের থেকে এত মানুষ যাওয়ার পর ব্যবসা বাণিজ্যও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। শুধু পর্যটন নয়, তার প্রভাব অন্য ক্ষেত্রেও পড়ছে। দুই দেশই আইটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রকে খুব গুরুত্ব দেয়। হীরা কেনা-বেচার ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে। দুবাই ডায়মন্ড এক্সচেঞ্জ ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের ডায়মন্ড এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তি করেছে। তার এক মাসের মধ্যেই তেল আভিভে ইসরায়েলের ডায়মন্ড ট্রেড সেন্টারের পাশে দুবাই এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধির অফিস চালু হয়ে গেছে।
জেনিফার হোলেইস/জিএইচ