দুইটি বাড়ি হেলে গেলো কলকাতায়, মেয়র বলছেন, বেআইনি বাড়ি খোঁজা সম্ভব নয়
বাঘা যতীন, কামারহাটির পর এবার ট্যারায় পাশাপাশি দুইটি বহুতল বাড়ি একে অপরের দিকে হেলে পড়লো। অভিযোগ, বেআইনি নির্মাণের।
ট্যারায় হেলে পড়েছে দুইটি ছয়তলা বাড়ি
দিন দুয়েক আগে একটি বাড়ি হেলে পড়ার খবর পরসভা পায়। তারপর বুধবার ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডের দুইটি বাড়ি একে অপরের দিকে বিপজ্জনকভাবে হেলে পড়ে। একটি বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। অন্যটি তৈরি হয়ে মানুষ থাকছিলেন। এভাবে দুইটি বাড়ি হেলে পড়ায় আতঙ্ক দেখা দেয়।
একটি বাড়ি ভাঙার নোটিশ
এরমধ্যে যে বাড়িটিতে মানুষ বসবাস করতেন, সেটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। বুধবারই সেখানে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। পুরসভা দ্রুত বাড়িটি ভেঙে ফেলতে চায়।
জিনিসপত্র সরাচ্ছেন বাসিন্দারা
বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিনিসপত্র বের করছেন। এভাবে ফ্ল্যাট ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে তারা ক্ষুব্ধ। অনেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ মেয়রের হাতে। তাহলে তিনি কেন দায় নেবেন না?
বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ
স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই অভিয়োগ করেছেন, এই দুইটি বাড়ি বেআইনিভাবে তৈরি হয়েছে ও হচ্ছিল। ওই জায়গায় ছয়তলা বাড়ি হয় না। দুইটি বাড়ির মধ্যে যতটা জমি ছাড়া দরকার, সেটাও ছাড়া হয়নি। দুইটি বাড়ির মধ্যে খুব কম জায়গা ছিল। কিন্তু এর দায় পুরসভা স্বীকার করছে না।
বেআইনি বাড়ি খোঁজা সম্ভব নয়, বলছেন মেয়র
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ''যে চুরি করে, যে চুরির জিনিস কেনে, দুপক্ষই সমানভাবে দোষী। পুরো শহরে কোথায় বেআইনি বাড়ি হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়।'' তিনি জানিয়েছেন, ''আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলব। তাদের বিকল্প থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখব।'' প্রশ্নটা হলো, পুরসভা যদি বেআইনি বাড়ির খোঁজ না রাখে তো কে রাখবে?
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ
স্থানীয় মানুষ বলছেন, গত একবছর ধরে নির্মীয়মান বাড়িটি তৈরি হচ্ছে। সেটা যে বেআইনি তা পুরসভার কর্মীরা জানতে পারলো না, এটা হয় নাকি? স্থানীয় বাসিন্দা সমর নন্দী রিপাবলিক টিভিকে জানিয়েছেন, ''বেআইনি বাড়ি নিয়ে কী বলব, এ তো সব জায়গায় হচ্ছে। রাজারহাটেও হচ্ছে। কিছু বলে না, কিছু করেও না।''
কী বলছেন কাউন্সিলার?
এলাকার কাউন্সিলার সন্দীপন সাহা বলেছেন, ''দুইদিন আগে স্থানীয় সূত্র থেকে খবর আসে। বিল্ডিং বিভাগকে জানাই। তারা আইনি ব্যবস্থা শুরু করেছে। তারা বুধবার ঘটনাস্থলে এসেছিল।'' কিন্তু এরকম ১২ ফুটের মতো রাস্তায় ছয়তলা বাড়ি তৈরির অনুমতি পুরসভা দিয়েছিল কি না, এরকম বাড়ি ওই জায়গায় করা যায় কিনা, সব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ''এটা বিল্ডিং বিভাগ বলতে পারবে।''
উল্টোডাঙায় হেলে থাকা বাড়ি
কলকাতায় ৩০টির মতো হেলে পড়া বাড়ি আছে বলে পুরসভার হিসাব। তারমধ্যে উল্টোডাঙায় এমন একটি বাড়ির ছবি ধরা পড়লো ডিডাব্লিউর ক্যামেরায়। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি হেলে আছে।
বিশেষজ্ঞের মত
সিনিয়র ইঞ্জিনিয়র অভ্রতনু ধর ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''কোনো বাড়ি ভেঙে পড়া বা হেলে পড়ার কারণ হলো ভালোভাবে ফাউন্ডেশন ডিজাইন না করা। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে মাটি পরীক্ষা না করে ফাউন্ডেশন বানানো হচ্ছে, এই মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী না বানানো হলে সেই ক্ষেত্রে বাড়ি বসে যাওয়া বা হেলে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কলকাতায় এখন প্রোমোটাররা ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য ছাড়াই বিল্ডিং এর কনস্ট্রাকশন করছে।''