দুই মার্কিনির ইসরায়েল সফর নিয়ে বিতর্ক
১৬ আগস্ট ২০১৯ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের উপর এতকাল দলীয় রাজনীতির ছায়া সেভাবে দেখা যায় নি৷ ওয়াশিংটন ও তেল আভিভে সরকার প্রধান যেই থাকুন না কেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত থেকেছে৷ এমনকি সাময়িক মতপার্থক্যও তার উপর আঁচ ফেলতে পারে নি৷ দুই দেশের সংসদের মধ্যেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গেছে৷ অথচ বৃহস্পতিবার সেই বিশেষ সম্পর্ক নিয়ে মৌলিক প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হলেন দুই দেশের একাধিক মহল৷11
ঘটনার সূত্রপাত অ্যামেরিকায়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কড়া ভাষায় ডেমোক্র্যাটিক দলের ৪ জন সংসদ সদস্যের সমালোচনা করে আসছেন৷ তাঁরা সবাই নারী, বিদেশি বংশোদ্ভূত এবং প্রথম বার সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে দু'জন – ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রশিদা তলাইব ও সোমালি বংশোদ্ভূত ইলহান ওমর মুসলিম ধর্মাবলম্বী৷ এই দুই ব্যক্তির ইসরায়েল সফরের পরিকল্পনার খবর শুরুতেই বিতর্ক শুরু করেছিল৷ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের কড়া নীতির সমালোচনা করে আসছেন তাঁরা৷ এমনকি ইসরায়েলকে একঘরে করে রাখার বিডিএস আন্দোলনের প্রতিও সমর্থন দেখিয়েছেন তাঁরা৷ তা সত্ত্বেও ইসরায়েলের কট্টরপন্থি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার তাঁদের সফর বানচাল করতে চায় নি৷ গত মাসে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নিজে সেই কথা জানিয়েছিলেন৷
তা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে ইসরায়েলের সরকার তলাইব ও ওমরের সফল বাতিল করেছিল৷ এই সিদ্ধান্তের ঠিক আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় সে দেশকে পরোক্ষভাবে এই সিদ্ধান্ত নেবার ডাক দিয়েছিলেন৷ তাঁর মতে, এই দুই সংসদ সদস্যকে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দিলে তা হবে সে দেশের প্রবল দুর্বলতার পরিচয়৷
ইসরায়েলে আগাম নির্বাচনের প্রায় এক মাস আগে নেতানিয়াহু সেই ‘প্রচ্ছন্ন হুমকি' উপেক্ষা করতে পারেন নি বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ আত্মপক্ষ সমর্থন করে নেতানিয়াহু বলেন, তাঁর সরকার মাত্র কয়েক দিন আগে দুই মার্কিন সংসদ সদস্যের ভ্রমণসূচি হাতে পেয়েছিল৷ সেই সূচি অনুযায়ী তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট কর্মসূচি জোরদান করা ও রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের বৈধতা খর্ব করা৷
নেতানিয়াহু সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ ট্রাম্প প্রশাসনও চাপের মুথে পড়ে৷ এই অবস্থায় ইসরায়েল ‘মানবিক’ কারণে রশিদা তলাইবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে৷ ফলে তিনি পশ্চিম তীরে গিয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন৷ইসরায়েলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লেখা এক চিঠিতে তিনি এই সফরে ইসরায়েল-বিরোধী কার্যকলাপ না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প-এর অনুগামীরাও এমন কড়া অবস্থানের প্রতি সমর্থন করবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ ট্রাম্প নিজে এই চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন নি৷ উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত সব মার্কিন প্রশাসন মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও তাদের ভ্রমণের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে৷
ইসরায়েলের উদারপন্থি মহলেও গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সরকারের অবস্থানের নিন্দা করা হয়েছে৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর দলীয় রাজনীতির কালো ছায়ার বিরুদ্ধে দুই দেশেই অনেকে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন৷ আগামী নির্বাচনে ওয়াশিংটনে ডেমোক্র্যাট দল ক্ষমতায় এলে নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)