অপরাধীদের সাজা ঘোষণা স্থগিত
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের সাজা ঘোষণার জন্য গত ৯ মাস ধরে যন্ত্রণাবিদ্ধ মনে দিন গুনছিল ২৩ বছরের প্যারা-মেডিক্যাল ছাত্রীর পরিবার, যাকে সবাই ডাকতো ‘নির্ভয়া' এবং ‘দামিনি' বলে৷ শুধু তাঁর পরিবার নয়, অপরাধীদের সাজা ঘোষণার দিনটির দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশের নাগরিক সমাজ৷ সাজা ঘোষণার দিন পিছিয়ে দিলেন ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টের বিচারকগণ৷ সাজা ঘোষণা করা হবে শুক্রবার ১৩ই সেপ্টেম্বর৷ আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা লঘু সাজার পক্ষে সওয়াল করেন বুধবার ১১ই সেপ্টেম্বর৷
দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ড কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে৷ বিতর্ক চলছে ভারতে মেয়েদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার নিয়ে৷ আমজনতার চাপে সরকার ফৌজদারী অপরাধ আইন সংশোধনী আইন পাস করা হয় সংসদে৷ ধর্ষণের মত যৌন অপরাধের দ্রুত বিচার ও শাস্তির জন্য গঠন করা হয় ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট৷ সংশোধনীতে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়৷
চারকগণ মনে করেন, গণধর্ষণ কাণ্ডের অপরাধীরা যে বিভৎসতার পরিচয় দিয়েছে, তা পশুকেও লজ্জা দেয়৷ প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, ডিএনএ , মেডিক্যাল এবং ফরেনসিক রিপোর্টে তা প্রমাণিত হয়েছে৷ পর পর ৬ জন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে৷ ধর্ষণের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য মেয়েটিকে খুন করতে তাঁর গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টেনে বের করে আনে৷ তারপর নগ্ন অবস্থায় চলতি বাস থেকে মেয়েটিকে এবং তাঁর ছেলে বন্ধুটি ফেলে দেয়া হয়৷ ৬ জন ধর্ষকের মধ্যে একজন নাবালক বলে তাঁর বিচার হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে৷ সাজা হিসেবে তাকে তিন বছর সংশোধনাগারে আটক থাকতে হবে৷ আরেকজন অপরাধী বিচার চলাকালীন জেলের ভেতরেই আত্মহত্যা করে৷
বেশিরভাগ মহিলারা মনে করেন, ধর্ষণের মত অপরাধ দমনে ফাঁসি এক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে৷ ভবিষ্যতে যারা ঐ কাজ করতে যাবে, তাদেরকে অন্তত দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে৷ তবে মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, মানবসমাজের এই আদিম রিপু একেবারে বিলুপ্ত হবার নয়৷ তবে সংখ্যাটা হয়ত অনেক কম করা যাবে৷ নাহলে ১৬ই ডিসেম্বরের গণধর্ষণ কাণ্ডের পরও প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ দিল্লিতেই এ বছরের ১৫ই অগাস্ট পর্যন্ত ১০৩৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ এর আগের বছর সংখ্যাটা অনেক কম ছিল৷
পুলিশের মতে, এর কারণ আগে ধর্ষণের কথা স্বীকার করতে মেয়ে লজ্জা পেত৷ গোপন রাখতে চাইতো সামাজিক লজ্জায়৷ সামাজিক সচেতনতা এবং জনসমর্থন বাড়ার ফলে ধর্ষিতারা সাহস করে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে এগিয়ে আসছেন৷ পাশাপাশি এটাও সত্যি, সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি৷ মেয়েরা দেহসর্বস্ব ভোগ্যপণ্য নয়৷ নিজের ইচ্ছামত জামাকাপড় পরলেই তাঁকে ধর্ষণের শিকার হতে হবে, এটা মানা যায়না কোনোমতেই৷