ভারতের খাদ্য সুরক্ষা
৯ আগস্ট ২০১৩স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, খাদ্য সুরক্ষা বিল বা খাদ্য নিরাপত্তা আইন দারিদ্র্যমোচনে কতটা সহায়ক হবে – এই নিয়ে৷
সরকারের দাবি খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ হলে ভারতের ১২০ কোটি জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৮০-৮২ কোটি মানুষ পাবে খাদ্য, তথা পুষ্টির আইনি অধিকার৷ এর মধ্যে ৯০ শতাংশ গ্রামে এবং ৫০ শতাংশ শহরাঞ্চলে৷ গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে মাথাপিছু প্রত্যেককে দেয়া হবে মাসে পাঁচ কিলো খাদ্যশস্য, যা পাওয়া যাবে কম দামে এক থেকে তিন টাকা কিলো দরে৷ বিরোধীদের বক্তব্য, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী৷ এতে রাজ্য সরকারগুলির কাঁধে পড়বে তিন হাজার কোটি টাকার বাড়তি বোঝা৷
বিরোধীদের বক্তব্য যাই হোক না কেন, ভারতের মতো দেশে যেখানে অপুষ্টি ব্যাপক সেখানে এই বিল, অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা আইন যে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত – তাতে সন্দেহ নেই৷ আইনের উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন, আসল কথা এর সফল বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা৷ সেজন্য দরকার সামাজিক নজরদারি৷ গণবণ্টন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো৷ নইলে এর অবস্থাও হবে মিড-ডে মিল স্কিমের মতো৷ গ্রামে-গঞ্জে প্রান্তিক পরিবারের ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াদের পুষ্টিকর আহারদান কর্মসূচি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দুর্নীতিতে মুখ থুবড়ে পড়বে৷
২০০৯ সালে জাতীয় পুষ্টি সংস্থার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দেশে আদিবাসী এলাকায় ৪০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ শতাংশ মহিলা অপুষ্টির শিকার৷ গোটা দেশে এই হার ৩৬ শতাংশের বেশি৷ খাদ্য সুরক্ষা শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগে হবে না৷ তাই এগিয়ে আসতে হবে পঞ্চায়েত এবং মহিলাদের৷
দেশে আরো একটা বিতর্ক দেখা দিয়েছে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নিয়ে৷ কাদের বলা হবে গরিব? এর মাপকাঠি কী? পরিকল্পনা কমিশনের মতে, কারোর মাথাপিছু খরচ গ্রামে ২৭ টাকা আর শহরে ৩৩ টাকা হলে, তিনি গরিব নন৷ এটাকে মাপকাঠি ধরে কংগ্রেসের দাবি প্রথম মনমোহন সিং সরকারের আমলে গরিবি রেখার নীচে ছিল ৩২ শতাংশ মানুয, ২০১১-১২ সালে যা কমে হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ৷
বলা বাহুল্য, তা মেনে নিতে পারেননি বিরোধীরা৷ তাঁদের অভিযোগ, গরিবি রেখার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যা কম দেখিয়ে খাদ্য সুরক্ষা বা ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে সরকার৷ পরিকল্পনা কমিশনের উচিত, মূল্যবৃদ্ধির হার এবং জীবনযাত্রার খরচকে মাথায় রেখে দারিদ্র্যের নতুন সংজ্ঞা ঠিক করা, যাতে বাস্তবের সঙ্গে মিল থাকে৷ তবে একথা ঠিক, খাদ্য নিরাপত্তা আইন ঠিকমতো রূপায়িত হলে দারিদ্র্য এবং পুষ্টির ওপর তার লক্ষণীয় সদর্থক প্রভাব পড়বে৷