জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে
২০ আগস্ট ২০১৩এখন পৃথিবীর জনসংখ্যা সাত বিলিয়নের মতো৷ তাতেই প্রাকৃতিক সম্পদের অর্ধেকের বেশি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষ বাড়লে যে এই চাপ আরো বাড়বে তা বলাই বাহুল্য৷ আর কম আয়ের দেশগুলিতেই এই সমস্যা তীব্র হবে৷ আফ্রিকা, বিশেষ করে সাহারার দক্ষিণের দেশগুলিতে জনসংখ্যা চারগুন বৃদ্ধি পাবে৷ ‘জার্মান ফাউন্ডেশন ফর ওয়ার্লড পপুলেশন'-এর মুখপাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উটে শ্টালমাইস্টার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই সব দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জ্ঞান ও সুযোগ সুবিধার তেমন অগ্রগতি হয়নি, যেমনটি আশা করা গিয়েছিল৷''
গরিব দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮ কোটি নারী অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্তানসম্ভবা হচ্ছেন৷ এর কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই কিংবা এই ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো সুযোগ সুবিধা নেই৷ এই ভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীর জনসংখ্যা ২১০০ সালে ১১ বিলিয়নেরও অনেক বেশি হবে৷ এই অনুমান জাতিসংঘের৷
অন্যদিকে শিল্পোন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যা কমতে থাকবে৷ এই শতকের মাঝামাঝি জার্মানিতে প্রায় ১ কোটি মানুষ কম হবে৷ ‘‘এখনই আমরা বিশেষজ্ঞ কর্মীর অভাব নিয়ে কথা বলছি৷ জনসংখ্যা কমতে থাকলে অন্যান্য দেশ থেকে আসা মানুষদের যে আমাদের প্রয়োজন হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়'', ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন শ্টালমাইস্টার৷
দারিদ্র্য বিমোচনে শান্তি প্রতিষ্ঠা
সমস্যার অপর পিঠ হলো, দ্রুত গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গরিব দেশগুলি তাদের বাসিন্দাদের অন্ন বস্ত্র জুটাতেই হিমশিম খাচ্ছে৷ বিশ্বব্যাপী পানি, শক্তি ও খাদ্যদ্রব্য ক্রমশ দুর্লভ হয়ে আসছে৷ এরফলে পরিবেশদূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি, ইউএনডিপি-র প্রধান হেলেন ক্লার্ক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা উন্নয়ন করতে গিয়ে যদি চাপপাশের সব কিছু ধ্বংস করে ফেলি তাহলে আর এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে৷'' তাঁর মতে এক্ষেত্রে জরুরি হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো৷ এছাড়া প্রয়োজন ইকোলজিক্যাল অর্থনৈতিক কাঠামো, সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা৷ ‘‘আগামী ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আমরা দেখবো যে দুর্যোগ কবলিত ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত সংকটপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে'', জানান ক্লার্ক৷
ইথিওপিয়া উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে
পরিবেশরক্ষা, সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক উন্নতি একই ছত্রছায়ায় আনা গেলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব৷ হেলেন ক্লার্কের মতে ইথিওপিয়া এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হতে পারে৷ ‘‘দেশটি ২০২৫ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়৷ একই সাথে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য আনতে চায়৷ '' আফ্রিকার জনঅধ্যুষিত একটি দেশ সম্পর্কে এই রকম আশার কথা শোনলেন ক্লার্ক৷ আর এইভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির অন্যতম একটি দেশ অন্য দেশেগুলির জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে৷ অবশ্য এজন্য আগামী দশকগুলিতে নারী শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে করতে হবে আরো বিনিয়োগ৷ ক্লার্ক মনে করেন, ‘‘কোনো দেশই তার সর্বশক্তি কাজে লাগাতে পারবে না, যদি না মেয়েদের এতে সম্পৃক্ত করা যায়৷''
তরুণ জনগোষ্ঠী সুযোগও সৃষ্টি করে
উটে শ্টালমাইস্টারও শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন৷ তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে শুধুই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার ব্যাপারে সতর্ক করেন তিনি৷ ‘‘উন্নয়নশীল দেশগুলিতে তরুণ জনগোষ্ঠীর হার বেশি হওয়ায় একটা বিরাট সুযোগও সৃষ্টি হয় দেশগুলির জন্য'', বলেন শ্টালমাইস্টার৷ ‘‘এশিয়ার কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে এটা লক্ষ্য করা যায়৷ তারা সঠিক সময় শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে৷ ফলে গড়ে উঠেছে শিক্ষিত ও কর্মতৎপর এক তরুণ সমাজ৷ যারা তাদের দেশকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছে৷''
এছাড়া শিক্ষা বঞ্চিত বা শুধু প্রাথমিক স্কুলে পড়া মেয়েদের তুলনায় হাইস্কুল পড়া মেয়েরা সন্তানও নেন কম৷ শ্টালমাইস্টার ২১০০ সালের এক সুন্দর বিশ্বের স্বপ্ন দেখেন: ‘‘এমন এক বিশ্বের, যেখানে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অভাব থাকবে না৷'' আর সেই বিশ্বে প্রতিটি মেয়ের কাছেই শিক্ষার আলো পৌঁছাবে৷ যারা কবে এবং ক'জন সন্তান নেবেন সে ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷