দক্ষিণ আফ্রিকায় হিংসার মোকাবিলায় শিল্পকলা
২৮ জুন ২০২৪শিল্পকলার মাধ্যমে অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্রত নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পী মাইকেল বেল৷ তরুণ প্রজন্মকে ভুল পথ থেকে দূরে রাখার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি৷ মাইকেল বলেন, ‘‘জগতকে শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করাই হলো মৌলিক আইডিয়া৷ সেইসঙ্গে উঠতি শিল্পীদের বিশ্বের সামনে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার মঞ্চ সৃষ্টি করাও জরুরি৷’’
মাইকেল কেপ টাউন শহরের কুখ্যাত কেপ ফ্ল্যাটস এলাকার মিচেল্স প্লেনে বাস করেন৷ জায়গাটি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক পাড়ার তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে৷ সেখানে সহিংসতা ও মাদক সেবন সাধারণ ঘটনা৷ মাইকেল একবার এক নৃশংস হামলার শিকার হয়েছিলেন৷ সে যাত্রায় কোনোরকমে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন তিনি৷ সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাইকেল বলেন, ‘‘২০০৮ সালের এক সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরছিলাম৷ আমার উপর হামলা হয়েছিল৷ মাথায় বন্দুকের নল, গলায় ছুরি ধরেছিল৷ কিন্তু আমি কোনোভাবে লড়াই করে পালাতে পেরেছিলাম৷’’
তাঁর বোন বাহিয়া ক্লাসেন সেই এলাকায় সমাজকর্মী হিসেবে সক্রিয়৷ তিনি বলেন, ‘‘মাইকেল খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে৷ কিন্তু সে হাল ছাড়ে নি৷ জানেন, সে এতগুলি বছর ধরে লোকটার মুখ দেখেছে৷ এখনো তারা একই জায়গায় হাঁটে৷ তাদের কিছুই হয় নি৷’’
সেই অভিজ্ঞতা থেকে কীভাবে পেইন্ট নামের সংস্থার জন্ম হলো? সেটির কাজই বা কী? মাইকেল বেল বলেন, ‘‘সেই ক্রোধ, সেই ট্রমা কাজে লাগিয়ে আমি মুক্ত এলাকার প্রাচীর ও পাড়ার পার্কগুলিতে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেই৷ ইতিবাচক পরিবর্তন ফুটিয়ে তোলা, জায়গাগুলিকে ইতিবাচক করে তোলার পাশাপাশি সুন্দর ও রঙিন পরিবেশ গড়ার তাগিদও কাজ করেছে৷’’
মাইকেল বেল ‘পেইন্ট' প্রতিষ্ঠা করে অপরাধ চক্র নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতে খোলা আকাশের নীচে গ্যালারি সৃষ্টির লক্ষ্য স্থির করেন৷ পেইন্ট কীভাবে সেই কমিউনিটিকে সুন্দর করে তুলছে? কীভাবেই বা এলাকায় অপরাধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে? মাইকেল বলেন, ‘‘এই সব প্রাচীরে গ্যাং-গুলির অনেক চিহ্ন, সাংকেতিক গ্রাফিতি ছিল৷ খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল৷’’
স্থানীয় শিল্পী ও পাড়ার মানুষের সঙ্গে তিনি কাজ করেন৷ তারা সেই স্পেস বা এলাকার রূপান্তর ঘটিয়েছেন৷ বাহিয়া ক্লাসেন বলেন, ‘‘যারা মাইকেলকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, সে তাদের কমিউনিটির জন্য কাজ করার ও পেইন্টিং করতে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল৷’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে কল্পনাও করতে পারেন নি যে মিচেল প্লেনের সাংকেতিক গ্রাফিতিভরা প্রাচীরগুলি শৈল্পিক অভিব্যক্তির ক্যানভাস হয়ে উঠবে৷ স্থানীয় শিল্পী রিজা পোর্টগিয়ারও সহযোগিতা করেছেন৷ তারা এই কাজের মাধ্যমে সচেতনতা আরো বাড়ানো এবং মহাসাগরের সুরক্ষায় প্রেরণা জোগানোর আশা করছেন৷ রিজা বলেন, ‘‘আমি জায়গাটিকে দক্ষিণ আফ্রিকা, কেপ টাউনের সমুদ্রে চরে বেড়ানো সামুদ্রিক জীবের বাসস্থান রাখতে চাই৷''
পেইন্ট প্রকল্পের সহ প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল বেল বলেন, ‘‘সেই ২০১৮ সালে আমরা প্রথম এই ম্যুরাল বা দেয়ালচিত্র সৃষ্টি করেছিলাম৷ সেটি পরিচয় ও সংস্কৃতির প্রতীক৷ মানুষ সেটির আকর্ষণে সেখানে যায়৷ যেমনটা দেখছেন, কেউ তার উপর ট্যাগ বসায় নি৷’’
রাস্তায় একটু এগোলেই এলাকার আগের অবস্থার চিত্র ফুটে উঠবে৷ মাইকেল বেল বলেন, ‘‘ইতোমধ্যেই এলাকার নানা গ্যাং নিজস্ব সংখ্যার মাধ্যমে সেই জায়গা চিহ্নিত করেছে৷ অর্থাৎ অপর প্রান্তের গ্যাং সেখানে প্রবেশ করতে পারে না৷’’
পেইন্ট প্রকল্পের প্রভাব অনেকের উপরই পড়ছে৷ সেই প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের জীবনে আশার আলো এসেছে, অ্যাঞ্জেলো ওয়াটারলু তাঁদেরই একজন৷ শিশু বয়সে তিনি শিল্প ভালোবাসতেন৷ কিন্তু তারপর মাদক ও গ্যাং কালচার তাঁকে টেনে নেয়৷ অ্যাঞ্জেলো বলেন, ‘‘এই শিল্পের মাধ্যমে আমরা যা কার্যকর করতে চাইছি, সেটা হলো আমরা নিজেদের কাহিনি তুলে ধরছি৷ কারণ এটা দৈনন্দিন সংগ্রাম৷''
সেই প্রকল্প অ্যাঞ্জেলোর জীবন বদলে দিয়েছে৷ তাঁর জগতের পরিসর বেড়ে গেছে৷ তিনি অন্যান্য শিল্পীরও সান্নিধ্যে আসছেন৷ তিনি এখন স্থানীয় শিশুদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন৷
লিজ ফিশ/এসবি