‘খাবার না পেলে আমরা মরে যাব'
২৭ মে ২০১৬বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের থানচি উপজেলায় এখন প্রায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি৷ উপজেলার চেয়ারম্যান কেওভাচিং মারমা টেলিফোনে তাই ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতিকে এখনো দুর্ভিক্ষ বলতে চাইনা, তবে পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে৷''
থানচি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে৷ওই জনপদের অধিবাসীরা পাহাড়ে জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল৷ খারাপ আবহাওয়া এবং অতিবর্ষণের কারণে এবার জুমচাষীরা মার খোয়েছেন৷ তাই ঘরে ফসল ওঠেনি৷ আগের বছরের জমানো খাবারও শেষ৷ আর এ কারণেই থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মোদক, বড় মোদক ও সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আড়াই হাজার পরিবার এখন চরম খাদ্যসংকটে৷ এ সব এলাকায় ত্রিপুরা, ম্রো ও মারমা সমপ্রদায়ের বাস৷
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক অবশ্য জানিয়েছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগে ওইসব এলাকায় ১৬ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য পাঠিয়েছি৷ বৃহস্পতিবার আরো ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে খাদ্য পৌঁছাতে সময় লাগে৷'' তিনি দাবি করেন, ‘‘খাদ্য মজুদ আছে৷ আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না৷''
তবে থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান কেওভাচিং মারমা মনে করেন উদ্যোগটা অনেক আগেই নেয়া যেত৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি আগে থেকেই প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি৷ বারবার আগাম ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি৷ কিন্তু তা নেয়া হয়নি৷ এখন কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়৷ কারো ঘরেই খাবার নেই৷ বুনো লতাপাতা আর বুনো আলু খেয়ে তারা বেঁচে আছেন৷ সবচেয়ে কষ্টে আছে শিশুরা৷''
জেলা প্রশাসকের মতো উপজেলা চেয়ারম্যানও মনে করেন থানচিতে এখনো ঠিক দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এমনটি বলা যাবে না, তিনি জানান, ‘‘এখনো দুর্ভিক্ষ বলা যাবে না, তবে পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে৷ দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তাদের কাছে ঠিক সময়ে খবারও পৌঁছানো যাচ্ছে না৷ এ পর্যন্ত ১৬ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে, যা একদিনের অভাবই পুরণ করে না৷''
রম্নইমন ম্রো নামে একজন স্থানীয় অধিবাসী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা খাবার না পেলে আর বাঁচতে পারবোনা, মরে যাবো৷ বনের আলু আর লতাপাতাও শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ আর এসব খেয়ে অনেকেই পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন৷ দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে অনেক নারী পুরুষ এবং শিশু এখন কঙ্কালসার৷''
আদুউ ম্রো নামে আরেকজন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘প্রায় দু'সপ্তাহ ধরে এই খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে৷ আমরা বারবার আবেদন জানিয়েও কোনো ফল পাইনি৷ অনেক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে৷'
উপজেলা চেয়ারম্যান কেওভাচিং মারমা বলেছেন, ‘‘আগামী জুম ফসল ঘরে ওঠার আগ পর্যন্ত ৭-৮ মাস এই পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দিতে হবে, কারণ, জুম ছাড়া তাদের খাবার সংগ্রহের আর কোনো উপায় নেই৷ তাই তাদের জন্য প্যাকেজের আওতায় সরকারের পক্ষ থেকে এই সময়ে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরি৷''
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে বান্দরবানের থানচি, রুমা, রাঙামাটির সাজেক, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলায় একই কারণে খাদ্য সংকট দেখা দেয়৷ তখন মে থেকে অক্টোবর – এই ছয় মাসের জন্য সাড়ে ছয় হাজার পরিবারকে একটি প্যাকেজের আওতায় খাদ্য সাহায্য দেয়া হয়৷ প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৫০ কেজি চাল, নগদ ১২শ' টাকা, ৩ লিটার ভোজ্য তেল, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৬ কেজি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য এবং জুমের বীজ কেনার জন্য পরিবার প্রতি এককালীন দুই হাজার টাকা করে দেয়া হয়৷
তখন সরকারের পাশাপশি বিভিন্ন এনজিও এগিয়ে এলেও এবার এনজিওদের কোনো সাড়া নেই বলে দুর্গতরা জানান৷ আর দুর্গম এলকায় ত্রাণ তত্পরতায় গতি আনতে হেলিকপ্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও তা এখনো শুরু হয়নি৷
সরকারের পক্ষ থেকে আরো আগে খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিলে কি এই সংকট থেকে থানচির মানুষদের বাঁচানো যেত? লিখুন নীচের ঘরে৷