থাইল্যান্ডে নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর দল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে
১২ এপ্রিল ২০১০ব্যাংককের পথে পথে এখন কেবল মিছিলের মুখ৷ বজ্রমুষ্টি তাদের, মুখে শ্লোগান৷ অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মত পরিস্থিতি হয়েছে এখন৷ থাইল্যান্ডের খোদ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রধামন্ত্রী অভিজিৎ ভেজ্জাজিভার সরকারি দল ২০০৫ সালের নির্বাচনের সময়ে একটি বিশেষ গ্রুপের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছিল৷ আর এই অপরাধে কমিশন দলটিকে বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে৷
আন্দোলনকারীরা যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন এতে৷ অবশ্য অভিজিতের ডেমোক্র্যাট পার্টির মুখপাত্র বুরানাজ সুমুথারাকস বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বললেই তো আর হবে না৷ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে হবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে দিয়ে৷ তাছাড়া দেশে সাংবিধানিক আদালতও রয়েছে৷ তদন্তের পর যেতে হবে ঐ আদালতের কাছেও৷ তারপরেই সিদ্ধান্ত৷
অভিজিতের দল যাই বলুক না কেন তারা আক্ষরিক অর্থেই যে প্রচন্ড চাপের মধ্যে রয়েছে, তা স্পষ্ট৷ বিশেষ করে সপ্তাহান্তে লাল শার্ট বিক্ষোভকারী ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ২১ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হবার পর সোমবার সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য নতুন করে ভাবাচ্ছে সরকারি দলকে৷ দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে দিচ্ছে এই বক্তব্য৷ কারণ তিনি কথা বলছেন আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে অনেকটাই সুর মিলিয়ে৷
সেনাপ্রধান জেনারেল অনুপং পাওচিন্দা বলেছেন, সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে হবে৷ তিনি সংসদ ভেঙ্গে দেবার কথা বেশ জোর দিয়েই বললেন৷ তাঁর কথায়, ‘আমি মনে করি সঙ্কট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মধ্য দিয়েই শেষ হবে৷ যদিও কেউ কেউ জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে৷ সবচেয়ে ভাল পথ হচ্ছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তির স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছানো৷'
প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ ভেজ্জাজিভা অবশ্য পরে বলেছেন, থাই সরকার ও সেনাবাহিনী দুইই এক অবস্থানে অনড় রয়েছে৷
তবে সেনাপ্রধান আলোচনার কথা বললেও বিক্ষোভকারীরা কিন্তু সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন৷ তারা কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন৷ গত দুই দিনে নিহত লাল জামাধারীদের মধ্যে চার জনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে সোমবার৷ আন্দোলনকারীরা কফিন নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন৷ অবশ্য চার নিহত ব্যক্তির শবদেহের কফিনের সঙ্গে ছিল আরও বেশ কয়েকটি খালি কফিন৷ এই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন এক নিহত ব্যক্তির মা৷ তিনি বললেন, ‘আমি খুবই দু:খিত৷ একই সঙ্গে আমি গর্বিত কারণ আমার ছেলে একজন হিরো৷'
এদিকে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে থাইল্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মান সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে৷ আমরা সকল পক্ষকে এই রাজনৈতিক সংঘাত শান্তির পথে এবং সংলাপের মধ্য দিয়ে নিরসন করার আবেদন জানাচ্ছি৷''
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভেস্টারভেলে জার্মান ট্যুরিস্টদের সমাবেশ ও বিক্ষোভস্থল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন৷
প্রতিবেদন : সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক