যুদ্ধাপরাধ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়৷ স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি থাকেননি, চলে যান পাকিস্তানে৷ পাকিস্তান সরকার তাকে সম্মানের সঙ্গে সেদেশে আশ্রয় দেয়৷ সে দেশের পত্রিকা ‘পাকিস্তান ট্রিবিউন'-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাজা ত্রিদিব রায়কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো৷ সেই প্রস্তাব অবশ্য ফিরিয়ে দেন ত্রিদিব রায়৷ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত অথবা হাই কমিশনার হিসেবে একাধিক দেশে কাজ করেছেন এই সাবেক চাকমা রাজা৷
ত্রিদিব রায়ের মরদেহে বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে তার পরিবার -- এরকম খবর প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের একাধিক পত্রিকা৷ আর এর প্রতিবাদ হচ্ছে, তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বাংলা ব্লগাররাও৷ আমারব্লগ ডটকমে ব্লগার অমি রহমান পিয়াল এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার পুরস্কার ভোগ করা এবং আজীবন পাকিস্তানি থেকে মৃত্যুবরণ করা একজনকে এই বাংলার মাটিতে সমাহিত করতে দেওয়াটা হয়তো চাকমাদের সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে মানবিক, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পাশবিক৷'' অমি রহমান পিয়াল তাঁর নিবন্ধে একাত্তর এবং একাত্তর পরবর্তী সময়ে রাজা ত্রিদিব রায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন৷ নিবন্ধের সমর্থনে অনেক তথ্য-উপাত্তও পরিবেশন করেছেন তিনি৷
নাগরিক ব্লগে সুমিত চৌধুরী এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন একটি বাংলাদেশ পেয়েছি, সুতরাং এই স্বাধীন দেশের এক বিন্দু মাটি যেন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের জন্য না হয়, কেননা তারাতো এই স্বাধীনতা ও স্বাধীন বাংলাদেশ মানে না৷''
বাংলা ব্লগার আবু সুফিয়ান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ত্রিদিব রায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন৷ আদিবাসীদের মধ্যে গারো, সাঁওতালরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিলেন এবং তারা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন৷ কিন্তু ত্রিদিব রায়, যিনি সেসময় চাকমাদের রাজা ছিলেন, তিনি শুধু স্বাধীনতার বিরোধিতাই করেননি, বাংলাদেশে পাকিস্তানিদেরকে ক্যাম্প করার জন্য জায়গা দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন৷''
আবু সুফিয়ান বলেন, একাত্তর পরিবর্তী সময়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা অব্যাহত রেখেছিলেন ত্রিদিব রায়৷ বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি৷ সুফিয়ান বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর উনি যখন পাকিস্তানে চলে যান, তখনও কিন্তু তার এই তৎপরতা থেমে থাকেনি৷ বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য যখন আবেদন করে, তখনও কিন্তু পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে এই রাজা ত্রিদিব রায় দূতিয়ালী করেছিলেন, যাতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ না পায়৷''
প্রসঙ্গত, ফেসবুকেও এই বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে৷ সাইটটিতে ঘোষিত একটি ইভেন্টের মাধ্যমে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন ব্লগাররা৷ ইভেন্টটিতে কাজি নজরুল লিখেছেন, ‘‘আমি লাশ নয়, রাজাকার নিয়ে কথা বলছি৷ আমি উপজাতি নয়, একজন স্বাধীনতা বিরোধীর কথা বলছি৷ তাই কোনো স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের লাশ আমদানি করতে আমি দেবোনা৷''
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি পোস্ট দিয়েছেন৷ তিনি তাঁর স্ট্যাটাসের এক অংশে লিখেছেন, ‘‘ত্রিবিদ রায়ের লাশ এই দেশে সমাহিত করার কোনো অর্থ আমি দেখি না, এই দেশে এত বাড়তি জমি নেই যে একজন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর লাশ এখানে সমাহিত করতে হবে৷''
উল্লেখ্য, ত্রিদিব রায়ের মৃত্যু পাকিস্তানের গণমাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ সে দেশের প্রভাবশালী দৈনিকগুলোতে এ বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷ তবে বাংলাদেশে তার সম্পর্কে আলোচনায় যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ একাত্তরের প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় বাংলাদেশে তার শেষকৃত্যের তীব্র বিরোধিতা করছেন ব্লগাররা৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী