ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার সহজ প্রক্রিয়া
২৮ জুন ২০১৪যে সব মানুষের ক্ষত বহু বছর ধরে সারে না, তাঁদের চিকিৎসা করেন মিউনিখ শহরের ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. গেয়র্গ ইসবারি৷ যেমন ক্রিম ও অ্যান্টিবায়োটিক সত্ত্বেও ব্যাকটেরিয়ার কারণে এক রোগীর ক্ষত সারছে না৷ ড. ইসবারি তাই এমন এক বিশেষ যন্ত্র কাজে লাগান, যা গোটা বিশ্বে অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না৷
ছ'টি ইলেকট্রোড ছোট ছোট তড়িৎ কম্পন দিয়ে প্লাসমা তৈরি করে৷ তার উপকরণ ইলেকট্রিক চার্জড পার্টিকেল৷ গরম বাতাস দিয়ে তা ক্ষতের উপর ফেলা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘প্লাসমা হলো এক বায়বীয় অবস্থা৷ এই অবস্থায় আরও ছোট জায়গায় প্রবেশ করা যায়, তরল বা ক্রিম যার নাগাল পায় না৷ অর্থাৎ যেখানে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, সেই ক্ষুদ্র জায়গায়ও পৌঁছানো সম্ভব৷ প্লাসমা থেরাপির সুবিধা হলো, চারিদিক থেকে ব্যাকটেরিয়ার উপর হামলা চালানো যায়৷''
মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট এই প্লাসমা প্রযুক্তি তৈরি করেছে৷ বহু বছর ধরেই এখানকার গবেষকরা কৃত্রিম প্লাসমা তৈরি করছেন, যা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গবেষণার কাজে লাগানো হয়৷
মহাকাশে এই পরীক্ষার আসল উদ্দেশ্য ক্ষত নিরাময় নয়৷ পদার্থবিদরা মৌলিক গবেষণা নিয়ে বেশি আগ্রহী৷ অতি ক্ষুদ্র পার্টিকেলে ইলেকট্রিক চার্জ করে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেন, তারা কী ভাবে নিজেদের সাজিয়ে নিচ্ছে৷ এর মাধ্যমে তাঁরা প্লাসমার একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন৷ সংক্রমণ রুখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর৷
প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এক গবেষকদল তারপর থেকে নতুন প্লাসমা মেশিন পরীক্ষা করে চলেছেন৷ ব্যাকটেরিয়ার উপর ৩০ সেকেন্ড ধরে রশ্মি চার্জ করা হয়েছে৷ রাতারাতি তাদের বংশবৃদ্ধি হওয়ার কথা৷ পরের দিন স্পষ্ট ফল দেখা গেল৷ প্লাসমা ব্যাকটেরিয়ার কোষের দেওয়াল ধ্বংস করে দিয়েছে৷ প্রান্তিক কিছু ব্যাকটেরিয়া কলোনি বেঁচে গেছে৷
মাত্র একশো ইউরো মূল্যে এই যন্ত্র বাজারে আনা সম্ভব৷ মাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউটের ড. ইয়ুলিয়া সিমারমান বলেন, ‘‘এই যন্ত্র নানা ধরনের ত্বক ও ফাংগাল বা ছত্রাকজনিত রোগের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ বাস্তবে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ৷ ত্বকের উপর যন্ত্র বসিয়ে প্লাসমা চার্জ করতে হবে, কিছুক্ষণ পর ত্বক বা ক্ষতের মধ্যে সব ব্যাকটেরিয়া মরে যাবে৷''
গবেষকরা আরও এক ধাপ এগিয়েছেন৷ ইলেকট্রোড দিয়ে তৈরি এক জাল কাজে লাগিয়ে তাঁরা এমন যন্ত্র তৈরি করেছেন, যার সামনে কিছু ধরলেই তা ডিসইনফেক্ট হয়ে যায়৷ খালি হাত, খাবার অথবা অপারেশনের ছুরি-কাঁচি৷
এই প্লাসমা একমাত্র অন্ধকারেই দেখা যায়৷ বাতাসের অক্সিজেন চার্জ করলে তা অতি বেগুনি রশ্মি সৃষ্টি করে৷ এই চার্জও ডিসইনফেক্ট করে৷ ড. সিমারমান বলেন, ‘‘এই যন্ত্র শীতল প্লাসমা তৈরি করে৷ এটা একটা আংশিক আয়োনাইজড গ্যাস৷ অর্থাৎ এতে হাত ঢুকিয়ে ধরে রাখতে হবে৷ চারিদিক থেকে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়৷ নখ বা ক্ষুদ্র অংশেও তা প্রবেশ করে ত্বকের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস মেরে ফেলে৷''
মিউনিখের এই হাসপাতালে এমন যন্ত্র বেশ সাড়া ফেলেছে৷ বিশ্বের যে কোনো হাসপাতালের মতো এখানেও ডাক্তারদের কঠিন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়৷
দরজার হাতলে হাত দিলে বা করমর্দন করলেই এমন জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে৷ প্রতি বছর ‘রেজিস্টেন্ট' জীবাণুর সংক্রমণের কারণে জার্মানিতে হাজার-হাজার রোগীর মৃত্যু ঘটে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷