সংকটে অর্থনীতি
১১ মার্চ ২০১৩বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক৷ বাংলাদেশের মোট রপ্তানির আয়ের ৮০ ভাগ আসে এই খাত থেকে৷ যার পরিমাণ এখন গড়ে বছরে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ কিন্তু এই খাতে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মুখেও রয়েছে৷ বিশেষ করে ভারত এবং চীন বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী৷ গত ডিসেম্বর থেকে যে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে, তা আরো তীব্র হয়েছে ফেব্রুয়ারি-মার্চে৷ হরতাল, অবরোধ এবং রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে৷ ফলে ক্রেতাদের সময়মতো পোশাক সরবরাহ করা যাচ্ছেনা৷ বেড়ে যাচ্ছে পরিবহণ খরচ৷
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্রেতা পূর্ব নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছেন৷ তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র প্রথম সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ঠিক সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় বেশ কিছু ক্রেতা তাদের অর্ডার বাতিল করেছে৷ এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন পোশাক শিল্প মালিকরা৷ তিনি বলেন, পরিস্থিতি সুবিধাজনক না হলে এ সব ক্রেতা অন্য দেশে চলে যাবেন৷ শুধু রপ্তানি বাণিজ্য নয়, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বড় একটি খাত হল এই পোশাক শিল্প৷ এই খাতে কম-বেশি ৩০ লাখ কর্মী কাজ করেন৷ যার মধ্যে ৯০ ভাগ মহিলা৷
বাংলাদেশের শিল্প মালিক এবং বণিকদের সংগঠন এফবিসিসিআই'র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ জানান, সরকারি এবং বেসরকারি খাত মিলে দেশে বছরে এখন প্রায় ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়৷ বেসরকারি খাত মুখ থুবড়ে পড়লে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে, বেকারত্ব বাড়বে৷ তিনি বলেন, শুধু রপ্তানি নয় আমদানি বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের হিসেবে আমদানি কমেছে শতকরা ১০ ভাগ৷ এর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি অন্যতম৷ যা প্রমাণ করে শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে৷
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সঙ্কট শুরু হয়েছে৷ মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে আর আমদানিও কমছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. হোলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে জানান, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ৭.২ ভাগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবেনা৷ বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে৷ আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত৷ তিনি বলেন, এরই মধ্যে স্বল্পমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে৷ আর আয় কমতে শুরু করেছে৷ যা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত৷
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থায়ও রেমেটেন্স প্রবাহ ভাল আছে৷ এর কারণ রেমিটেন্স অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেনা৷ আর এই রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করেই শক্তিশালী আছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ৷ কিন্তু শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে অর্থনীতির শক্তি আঁচ করা যায়না৷ আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও এখনো প্রবৃদ্ধি ভাল আছে মানুষের শ্রমে৷
তাই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিবিদরা হরতাল, অবরোধ এবং সহিংসতা বাদ দিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন৷