তৈরি পোশাক নিয়ে সরাসরি জাহাজ যাচ্ছে ইউরোপে
৩০ জানুয়ারি ২০২২বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ৷ মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশই যায় সেখানকার দেশগুলো৷ এতদিন চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে এসব দেশে সরাসরি পণ্য পাঠানোর সুযোগ ছিল না৷ এবারই প্রথমবারের মতো সেই দুয়ার খুলেছে৷
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডিমরাল এম শাহজাহান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম জাহাজটি যাওয়ার সম্ভবনা আছে৷ এরইমধ্যে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক যাত্রাও সম্পন্ন হয়েছে৷
মাসে দুইবার জাহাজ যাবে
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশে প্রথম সরাসরি জাহাজটি যাবে ইটালির রাভেনা বন্দরে৷ সেখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের ক্রেতারা যার যার দেশে পণ্য নিয়ে যাবেন৷
ইটালিয়ান শিপিং কোম্পানি ‘কালিপসো কোম্পানিয়া দে নাভিগাৎসিওনে এসপিএ’-এর দুইটি কন্টেইনার জাহাজ, সোঙ্গা চিতা ও কেপ ফ্লোরেস বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক পরিবহণ করবে৷ সোঙ্গা চিতা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী আর কেপ ফ্লোরেস মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী৷ বাংলাদেশে ইটালিয়ান শিপিং কোম্পানিটির এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ জানান, ‘‘করোনার সময় শিপিং-এর ভাড়া (ফ্রেইট) ১০ গুণেরও বেশি বেড়ে যায়৷ তখন ইউরোপের তৈরি পোশাক ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তাদের পাঠানো জাহাজে করে পণ্য নেয়ার পরিকল্পনা করে৷ সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সরাসরি এখন পণ্য যাওয়া শুরু হচ্ছে৷’’
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে এখন ট্রান্সশিপমেনেন্টের মাধ্যমে ইউরোপে পণ্য যায়৷ প্রথমে ফিডার জাহাজে করে শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বা সিংগাপুরে যায়৷ সেখান থেকে মূল জাহাজে করে পণ্য পাঠানো হয় ইউরোপে৷ তার বদলে এখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করবে৷ খালি কন্টেইনার নিয়ে জাহাজও আসবে চট্টগ্রামে৷ ফলে আগের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় লাগবে৷ খরচও অনেক কমে যাবে৷
রাশেদ জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে কেপ ফ্লোরেস জাহাজটি এক হাজার ৫০টি খালি কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে৷ কন্টেইনারগুলো রেখে জাহাজটি চলে যায়৷ কন্টেইনারগুলো এরইমধ্যে তৈরি পোশাক বোঝাই করা হয়েছে৷ এই কন্টেইনার নিতে সোঙ্গা চিতা জাহাজ চট্টগ্রামের পথে রয়েছে৷ জাহাজটি ৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে এক হাজার খালি কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা আছে৷ খালি কন্টেইনারগুলো রেখে গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই কন্টেইনারগুলো নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ইটালির উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে সোঙ্গা চিতার৷ এরপর আবার আসবে কেপ ফ্লোরেস৷ এভাবেই মাসে দুইবার চট্টগ্রাম থেকে পণ্য যাবে ইউরোপে৷
তৈরি পোশাকের জন্য নতুন সম্ভাবনা
এর ফলে আগে যেখানে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে কমপক্ষে ৪০ দিন লাগত তা কমে ১৬ দিনে নেমে আসবে৷ আর খরচ কমবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ৷ রিয়াল অ্যাডিমরাল এম শাহজাহান মনে করেন, প্রকৃত খরচ আসলে এর চেয়েও কমে আসবে৷
তিন বলেন , ‘‘যত বেশি জাহাজ সরাসরি চালু করা যাবে তত খরচ কমবে৷ আর একটি জাহাজ কতটি কন্টেইনার পরিবহণ করতে পারে, মানে জাহাজের আকারের উপরও নির্ভর করে৷ জাহাজের আকার বড় হলে খরচ কমে৷ এখন যে দুইটি জাহাজ দিয়ে শুরু হচ্ছে তাতে এক হাজারের মতো কন্টেইনার থাকে৷ কিন্তু তিন-চার হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজও আছে৷ সেটা হলে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে৷ আর সময় তো বাঁচবেই৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এটা শুরু হলে ধীরে ধীরে সরাসরি ইউরোপে পণ্য নিয়ে জাহাজ যাওয়ার সংখ্যা বাড়বে৷ এটা তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷’’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি (চট্টগ্রাম) রাকিবুল ইসলাম জানান, ইটালির তিনটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিলে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি জাহাজে করে তৈরি পোশাক নেয়ার এই ব্যবস্থা করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে কলম্বো ও সিংগাপুরে পাঠাতেই লাগত পাঁচ থেকে সাতদিন৷ আমাদের এখন ইউরোপে যে কার্গোগুলো পৌঁছে তাতে ৬০ থেকে ৭০ দিন সময় লাগে৷ সেই জায়গায় আমরা ১৬ দিনে কার্গোগুলো পৌঁছাতে পারছি৷ এতে আমাদের লিড টাইমটা অনেক অনেক কমে আসবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘জাহাজ জটের কারণে ইটালির ক্রেতারা সরাসরি পণ্য নিতে চেয়েছিলো এবং তারা সফল হয়েছে৷ এখন ইউরোপের অন্যান্য দেশও আগ্রহী হবে৷ এটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ৷ আমরাও চাচ্ছিলাম মাদার ভ্যাসেলে করে পোশাক পাঠাতে৷ আগে আমরা ফিডার ভাসেলে করে কলম্বো, সিংগাপুরে পাঠাতাম৷ সেখান থেকে মাদার ভ্যাসেলে পণ্য যেত৷ আমাদের জন্য অনেক বড় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল৷’’
তার মতে, এরপর যুক্তরাষ্ট্রেও একইভাবে পোশাক পাঠানোর চেষ্টা করা যাবে৷