তিন ব্যাংকে সন্দেহজনক ৯,৫০০ কোটি টাকা ঋণ
২৪ নভেম্বর ২০২২সন্দেহ করা হচ্ছে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এই ঋণ নেয়া হয়েছে অন্যকোনো পক্ষকে সুবিধা দেয়ার জন্য। কেননা, যেসব ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেসব ঠিকানায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কোন খোঁজ মেলেনি।
বিপুল অঙ্কের ঋণ প্রদানে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ার পর তা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন চলছে।
এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত ভোগ্যপণ্য আমদানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ঋণ নেওয়া এসব কোম্পানি। ফলে দ্রুত সময়ে এসব অর্থায়নের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে।
সমকালের এক প্রতিবেদন বলছে, নাবিল গ্রুপের নামে ইসলামী ব্যাংকে ঋণ ছিল দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। হঠাৎ করে গ্রুপটির নামে আরও প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ওই গ্রুপের একেবারে নতুন দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে আইবিবিএলসহ তিনটি ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে তিন হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে ছয় হাজার ৩৭০ কোটি টাকার ঋণ সৃষ্টি হলেও এর মধ্যে নতুন গ্রাহকের নামে নেওয়া অন্তত তিন হাজার ২৭০ কোটি টাকা বেনামে অন্য কোনো পক্ষ নিয়েছে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, পরিচালনা পর্ষদ বা মালিকানার সঙ্গে যুক্ত কারও সম্পৃক্ততা ছাড়া বিপুল অঙ্কের এ ঋণ সৃষ্টি সম্ভব নয়। সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা নাবিল গ্রুপের ঋণ তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার ২৭০ কোটি টাকার সুবিধাভোগী অন্য কোনো পক্ষ।
তবে প্রথম আলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেওয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর।
একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও দুই হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে এ কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা।
এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়। ব্যাংক তিনটির নথিপত্র পর্যালোচনা করে এ সব তথ্য মিলেছে।
কোম্পানিগুলোর সবই নাবিল গ্রুপের কি না, তা জানতে চাইলে গ্রুপটির এমডি মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, "আমি ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করি, এখানে লুকানোর কিছু নেই। যা আছে তার সবটাই ব্যাংক জানে। আমার ঋণের বিষয়ে ব্যাংক বক্তব্য দেবে।"
এ রকম গ্রাহকের অনুকূলে ট্রেডিংয়ের জন্য বিনিয়োগ সঠিক খাতে ব্যবহার হয়েছে কিনা এবং এত বড় ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনীয় দক্ষতা তাদের রয়েছে কিনা যাচাই করা আবশ্যক বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে নাবিল নব ফুডের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানের নামে সৃষ্ট ঋণ বেনামি বা ফার্স্ট সিকিউরিটি এবং এসআইবিএলের বা অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালকদের স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট কিনা যাচাই করা আবশ্যক।
নতুন একজন গ্রাহকের অনুকূলে এত বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগ অনুমোদনের যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে ব্যাংক দুটির কাছে। এ ছাড়া নাবিল নব ফুডের পরিচালকদের ব্যবসায়িক ইতিহাস জানাতে বলা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এ নিয়ে জানতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, "সব বিষয় পর্ষদের সভায় আসে না। নিচ থেকেই অনুমোদন হয়ে যায়। পর্ষদে আসলে চেয়ারম্যান সাহেব মতামত দেন। তবে সবকিছু নিয়ম মেনে চলছে।"
ঋণ প্রদানের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, "নাবিল গ্রুপের ঋণ তিন চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে। তারা আমাদের বেশ পুরোনো গ্রাহক। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সবই ট্রেডিংনির্ভর। এসব অফিস সাজানো–গোছানো হয় না। এ জন্য হয়তো ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। ইসলামী ব্যাংকে কোনো উল্টাপাল্টা কাজ হয় না। যা হচ্ছে, সবই নিয়ম মেনে
হচ্ছে।"
একেএ/কেএম (সমকাল/প্রথম আলো)