দুর্নীতি ও রানা প্লাজা
১৮ মার্চ ২০১৪সামহয়্যারইন ব্লগে মো. তুহিন পারভেজ এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন৷ তাঁর পোস্টের শিরোনাম, ‘‘আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই৷ আমরা চাই সৎ বাঙালি৷'' নিজের পরিচয় জানাতে গিয়ে তুহিন পারভেজ লিখেছেন, ‘‘আমি ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সপ্তম পর্বের একজন ছাত্র৷'' তাঁর মতে, ‘‘কোনো দেশের মোটামুটি বড় বাজেটের কাজগুলো সম্পন্ন হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাধ্যমে৷ আর তাই এই সেক্টরে দুর্নীতির সম্ভবনাও অন্য সেক্টরের তুলনায় বেশি৷''
সম্প্রতি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি ক্লাসে ভবন নির্মাণে প্রকৌশলীদের দুর্নীতির একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে সামহয়্যারইন ব্লগের এই ব্লগারের কাছে৷ ‘ডিজাইন অফ স্ট্রাকচার' ক্লাসে তিনি জেনেছেন, ‘‘স্টিল/রডের সর্বোচ্চ টান শক্তি ৪২০০ কেজি/বর্গ সেমি৷ কিন্তু এসিআই বা ‘অ্যামেরিকান কংক্রিট ইন্সটিটিউট'-এর আনুমোদনে ৪০ শতাংশ শক্তি কাজে লাগিয়ে কাঠামো ডিজাইন করতে হয়৷ যার অর্থ বাকি ৬০ শতাংশ শক্তি ‘সেফটি ফ্যাক্টর'৷''
এ তথ্য জেনেই তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ৬০ শতাংশ ‘সেফটি ফ্যাক্টর'-কে কাজে লাগিয়েই ইঞ্জিনিয়ারগণ চারটির জায়গায় দুটি রড ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের সালামি গ্রহণ করেন৷ একইভাবে কংক্রিটের সর্বোচ্চ চাপ শক্তি ২১০ কেজি/বর্গ সেমি৷ এছাড়া এসিআই আনুমোদনে ৪৫ শতাংশ শক্তি কাজে লাগিয়ে কাঠামো ডিজাইন করতে হয়৷ এক্ষেত্রেও ৫৫ শতাংশ শক্তি ‘সেফটি ফ্যাক্টর'৷ ইঞ্জিনিয়াররা এই ৫৫ শতাংশ ‘সেফটি ফ্যাক্টর' কাজে লাগিয়েও মোটা অঙ্কের আয় করে থাকেন৷''
মো. তুহিন পারভেজ সামহয়্যারইন ব্লগে ছোট্ট এই পোস্টটি দিয়েছেন রানা প্লাজা ধসের প্রথম বছর পূর্তির মাস খানেক আগে৷ ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ধসে পড়েছিল সাভারের রানা প্লাজা৷ ভবনটি ধসে পড়ায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়, পঙ্গু হয় কয়েকশ মানুষ৷ তুহিন পারভেজ মনে করেন, ভবন ধসে পড়ার মূল কারণ দুর্নীতি৷ প্রকৌশলীদের দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তাহলে কেন রানা প্লাজা ধসে পড়বে না? কেন বাংলাদেশের (ভবনগুলোর) কাঠামো দুর্বল হবে না?''
ব্লগার তুহিন প্রকৌশলীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, প্রকারান্তরে এটাও স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে৷ রানা প্লাজা ধসের ঘটনা তারই প্রমাণ৷ ভবন মালিক ছিলেন সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা, তাঁর বাবা বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে৷ দুর্নীতির বেলায় সরকারি-বিরোধী দল, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী, এমনকি ধনী-গরিবেরও যে ঐক্য রয়েছে তা ক'জন অস্বীকার করতে পারবেন?
এই পরিস্থিতিতে মো. তুহিন পারভেজ হতাশ৷ এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকুক তা তিনি চান না৷ কী চান সেটা জানিয়েই সামহয়্যারইন ব্লগের এ লেখা শেষ করেছেন তুহিন৷ লিখেছেন, ‘‘আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই৷ আমরা চাই সৎ বাঙালি৷ আপনার, আমার এবং আমাদের সবার সততাই একদিন আমাদের দেশকে সোনার দেশে পরিণত করবে৷ আবার আমাদের দেশ হবে সোনার বাংলাদেশ৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ