1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তারুণ্যের সাহিত্য, তারুণ্যের প্রকাশনা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশে সারাবছর যেসব বই প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগই তরুণ এবং নবীন লেখকদের৷ বিশেষ করে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তরুণ লেখকদের বই প্রকাশের আগ্রহই বেশি৷

https://p.dw.com/p/3Cbwx
Bangladesch The Ekushey Book Fair
ছবি: DW/M. Mamun

শুধু লেখালেখিতে নয়, তরুণরা প্রকাশনা শিল্পেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন৷ আর তাঁরা এটাকে দেখছেন একটি সৃষ্টিশীল ব্যবসা হিসেবে৷ তাঁদের ভাবনা, তাঁরা যদি নতুন লেখক, তরুণ লেখক বের করে আনতে না পারেন, তাহলে এই ব্যবসায় কেন? শুধু প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখা ছাপলে তো তা বিক্রি এমনিতেই হবে৷ তাহলে প্রকাশকের কৃতিত্ব কোথায়? একজন ভালো প্রকাশক নতুন লেখক-প্রতিভা খুঁজে বের করবেন৷ তাঁদের লেখা প্রকাশ করে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবেন৷ নতুন পাঠক শ্রেণি গড়ে তুলবেন৷ এটাই প্রকাশকের কাজ৷

ব্যবসা অবশ্যই প্রকাশক করবেন৷ কারণ, তিনি তো অর্থ লগ্নি করে লোকসান দেবেন না৷ কিন্তু খ্যাতিমানদের বই প্রকাশ করে ব্যবসা করা সহজ কাজ৷ এটা যে কেউ করতে পারেন৷ কিন্তু প্রতিভা খূঁজে বের করে তার সাহিত্যকর্ম পাঠকের হাতে তুলে দিয়ে ব্যবসা করা একজন মেধাবী প্রকাশকের কাজ৷ আসলে একজন দায়িত্বশীল প্রকাশককে সেটাই করতে হয়৷ আর এটা না করলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসাটাও আর থাকে না৷ বৃত্ত ভাঙা যায় না৷ জিম্মি হয়ে থাকতে হয়৷ নতুনদের জন্য পথ তৈরি হয় না৷

‘গণিতের বইয়েরও পাঠক আছে’

তরুণ লেখক আর প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের এই নতুন ভাবনার সঙ্গে পরিচয় হয়৷ শুধু তাই নয়, প্রচলিত গল্প, উপন্যাস আর কবিতার যে ঐতিহ্যগত ধারা, তা থেকেও বেরিয়ে আসার প্রবণতা স্পষ্ট৷ ফিকশন থেকে নন-ফিকশন ধারার দিকে ঝোঁক বাড়ছে৷

তরুণ লেখক চমক হাসানের কথাই বলা যাক৷ তাঁকে কিন্তু খুঁজে বের করেছেন আরেকজন তরুণ প্রকাশক মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর প্রকাশনা সংস্থার নাম ‘আদর্শ'৷ চমক হাসান পড়াশুনা করেছেন বুয়েটে৷ তিনি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার৷ বুয়েটে পড়াশুনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি করেন৷ গণিতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রচণ্ড৷ জড়িত ছিলেন গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে৷তিনি গণিত পড়াতেও পছন্দ করতেন৷ দেশে থাকতে পড়াতেনও৷ কিন্তু বিদেশে গিয়ে সে সুযোগ হাতছাড়া হয়৷ কিন্তু তিনি ছাড়বার পাত্র নন৷ কাজটি শুরু করেন ইউটিউবে৷ বিভিন্ন ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গণিতের মজার বিষয়গুলো তুলে ধরেন৷ সাবসক্রাইবার বাড়ে৷ ফেসবুকে ফলোয়ার হয় ৫ লাখেরও বেশি৷

আদর্শ প্রকাশনীর মাহবুবুর রহমানের নজরে আসে বিষয়টি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার কাছে মনে হলো, তিনি সেলিব্রেটি কোনো অভিনেতা, লেখক বা খেলোয়াড় নন, তারপরও তাঁর কেন ফেসবুকে ৫ লাখের বেশি ফলোয়ার? আমি ফেসবুকে এবং তাঁর ইউটিউবের পোস্ট দেখতে শুরু করি৷ আমার কাছে মনে হলো তিনি যে পোস্ট দেন, তা মানুষকে, বিশেষ করে তরুণদের আকর্ষণ করে৷ গণিতের মতো বিষয়কে তিনি মানুষের কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করেন, যা মানুষকে আনন্দ দেয়৷ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ বই আকারে লিখতে বলি৷ কিছু পরামর্শও দেই৷ তিনি লিখলেন, তার প্রথম বই ‘গণিতের অঙ্গে: হাশি খুশি গণিত'৷ ভালো বিক্রি হলো৷ মানুষ পড়ল৷ তাঁর বইয়ের পাঠক গড়ে উঠছে৷ পাঠক তাঁর বই চাচ্ছেন৷''

‘প্রকাশক বলেন, ইউটিউব কনটেন্ট দিয়েই বই করা সম্ভব’

চমক হাসান বইমেলার জন্য ঢাকায় এসেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার প্রকাশক আমাকে বলেন, আমার ইউটিউব ভিডিও'র কনটেন্ট দিয়েই একটা বই করা সম্ভব৷ ২০১৫ সালে ‘গণিতের অঙ্গে: হাশি খুশি গণিত' বইটি প্রকাশ হওয়ার পর অনলাইন বুক শপ রকমারিডটকমে  এটা বেস্ট সেলার হয়৷ আমার এই বইয়ে গণিত শেখানোর কোনো ব্যাপার নেই৷ গণিতের আনন্দকে ছড়িয়ে দেয়ার বিষয় আছে৷ গণিতের মজাগুলো আছে৷ এরপর আমার দ্বিতীয় বই ‘অঙ্ক ভাইয়া' প্রকাশ হয় ২০১৮ সালে৷ এটা গণিত প্রশ্নোত্তরের বই৷ আর এবার বই মেলায় আসছে ‘নিমিখ পানে: ক্যালকুলাসের পথ পরিভ্রমণ'৷ এখানেও ক্যালকুলাস শেখানোর কোনো বিষয় নেই৷ আছে ক্যালকুলাসের মজা-আনন্দ৷''

চমক হাসানের সৌভাগ্য যে, প্রকাশক তাঁকে খুঁজে নিয়েছেন৷ কিন্তু এমন সৌভাগ্য সব তরুণ লেখকের হয় না৷ তাঁদের প্রকাশক পেতে অনেক বেগ পেতে হয়৷ কেউ কেউ প্রতারিতও হন৷

চমক হাসানই বললেন, ‘‘আমাকে হয়তো প্রকাশক খুঁজে নিয়েছেন৷ কিন্তু আমি আমার অনেক বন্ধুকে জানি, যাঁরা ভালো লেখেন৷ কিন্তু তাঁদের বই প্রকাশের জন্য প্রকাশক পাওয় যায় না৷ কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত বই ছাপেন না৷ পান্ডুলিপি পড়ে থাকে৷ হতাশা বাড়ে৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের মতো করে লেখার প্রয়োজন নেই৷ প্রয়োজন নেই জীবনানন্দ দাসের মতো করে লেখার৷ তাঁদের লেখা তাঁরা লিখে গেছেন৷ আমাকে নতুন একটি জায়গা করে নিতে হবে৷ আমার নিজস্বতা থাকতে হবে৷ ভিন্ন স্বাদ দিতে হবে পাঠকদের৷ আর প্রকাশকদেরও দায়িত্ব হলো তরুণদের ভালো লেখা খুঁজে নেয়া৷ সেটা তাঁরা পাণ্ডুলিপি আহ্বান করে করতে পারেন অথবা অন্য কোনোভাবে৷''

তরুণ প্রকাশক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘এখন সারা বছর যে বই প্রকাশ হয় তার মধ্যে আমার বিবেচনায় ৬০ ভাগই তরুণ লেখকের বই৷ তরুণরা লেখক হিসেবে এগিয়ে আসছেন৷ আমরা বিবেচনা করি তরুণের কোনো লেখা সাহিত্যে নতুন কী মাত্রা যোগ করবে৷ নতুন কী ভ্যালু অ্যাড করবে৷ সাহিত্যে কতটা অবদান রাখবে৷ আমি মনে করি, সেই বিবেচনা থেকে তরুণদের লেখা ছাপলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা নেই৷ পুঁজি উঠে আসবে৷ আমরা ঝুঁকি নেবো৷''

‘ভালো লেখাই যথেষ্ট নয়, বিপণনকৌশলও গুরুত্বপূর্ণ’

বাংলাদেশে এখনো গল্প, উপন্যাস ও কবিতারই প্রাধান্য৷ কিন্তু মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ‘‘বিশ্ব ব্যবস্থা পাল্টে যাচ্ছে৷ মানুষের রুচি বদলাচ্ছে৷ এটা প্রবীণদের চেয়ে তরুণ লেখকরাই ধরতে পারেন ভালো৷ উন্নত বিশ্বে কিন্তু এখন নন-ফিকশন লেখার প্রাধান্য৷ আমাদের দেশেও সেটা শুরু হয়েছে৷ তরুণরা সেটা করছেন৷ এখন প্রকাশককে সেটা বুঝতে হবে৷ তিনি যদি সেটা না বোঝেন, তাহলে নতুন লেখক কীভাবে সৃষ্টি হবে৷ পাঠক কীভাবে সৃষ্টি হবে৷ এটাই তো প্রকাশকের কাজ৷''

এখন তরুণদের লেখা প্রকাশকের কাছে যাওয়ার আগেই পাঠকপ্রিয় হওয়ার সুযোগ আছে৷ পত্রিকার সাহিত্যপাতার মতো নয় যে অনেক দিন ঘুরে একটা লেখা ছাপাতে হবে৷ কোনো লেখক চাইলে অনলাইনে নিজের ব্লগে লিখতে পারেন৷ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজের লেখা প্রকাশ করতে পারেন৷ আর পাঠক যদি তাঁর লেখা পছন্দ করেন, তাহলে এখান থেকেও তাঁর লেখার বাজার গড়ে উঠতে পারে৷ প্রকাশকের দৃষ্টি পড়তে পারে৷ কিন্তু এমনটি তো সবার ক্ষেত্রে হয় না৷

তরুণ লেখক শেরিফ আল সায়ার বললেন, ‘‘তরুণ বা নবীন লেখকদের প্রতি প্রকাশকদের এক ধরনের অবহেলা বরাবরের মতোই আছে৷'' তাঁর এ পর্যন্ত দু'টি গল্পের বই এবং একটি গবেষণাগ্রন্থ বের হয়েছে৷ আর এবারের বইমেলায় আসছে তাঁর তৃতীয় গল্পের বই ‘খাঁচাবন্দি মানুষেরা'৷ এই বইয়ের গল্পগুলোতে তিনি এই সময়ের রাষ্ট্র, রাজনীতি, সম্পর্কের নানা দিক তুলে এনেছেন৷ সায়ার মনে করেন, ‘‘ভালো লেখাই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে বিপণনকৌশলও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷'' তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘একজন তরুণ লেখকের বইয়ের ওপর বুক রিভিউয়ের আয়োজন করা হয়েছিল৷ পুরস্কার রাখা হয়েছিল ল্যাপটপ৷ তাতে তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন৷ অনেকে তাঁর বই পড়েছেন৷ পড়ে রিভিউ লিখেছেন৷ তিনি লেখেনও ভালো৷ সব মিলিয়ে তিনি ভালোই সাড়া পেয়েছেন৷ আবার  কেউ বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অনেক ক্রিয়েটিভ৷ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে তরুণেরা আলোচিত, তাঁদের বইও ভালো বিক্রি হয়৷ তবে ভালো লেখাটা হলো আসল কথা৷''

তরুণদের লেখা শেষ পর্যন্ত প্রকাশকরা নিলেও রয়্যালটি কী তারা পান? বই বিক্রির লাভের অংশ লেখকের ঘরে কি যায়? সায়ার বলেন, ‘‘রয়্যালটির সাথে বই বিক্রির বিষয়টি জড়িত৷ একটা স্মার্ট অ্যামাউন্টের বই বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশকরা রয়্যালটি দিতে চান না৷ তবে অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, কোনো কোনো প্রকাশক দিচ্ছেন৷ আমার ক্ষেত্রে আমি স্পষ্ট৷ আমি প্রকাশককে বলি, আমার দুটি বই বিক্রি হলেও রয়্যালটি দিতে হবে৷''

‘তরুণ লেখকদের অবহেলা দেখেই একটি প্ল্যাটফর্ম গড়তে চেয়েছি’

তবে নিজের টাকায় বই ছাপানোর প্রবণতার কথাও জানালেন তরুণ লেখক শেরিফ আল সায়ার৷ তিনি বলেন, ‘‘এরকম অনেক লেখক আছেন, তাঁরা হয়তো জানেন না যে, প্রকাশক তাঁকে টাকা দেবেন৷ উল্টো বই ছাপার জন্য প্রকাশকই লেখকের কাছ থেকে টাকা নেন৷ এটা কোন বিবেচনায় হয়, আমি জানি না৷ তবে এই বিষয়টি লেখক, প্রকাশক উভয়ই গোপন রাখেন৷''

সায়ার বলেন, ‘‘তবে এখন অনেক প্রকাশকই তরুণদের বই ছাপতে আগ্রহী হচ্ছেন৷ আমার ধারণা, প্রকাশিত বইয়ের ৫০ ভাগই এখন তরুণ লেখকদের৷''

তরুণ লেখকদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি তরুণ প্রকাশকও বাড়ছে৷ কেউ কেউ আছেন সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে চাকরি না করে প্রকাশনা শিল্পকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিচ্ছেন৷ সেরকমই একজন দেশ পাবলিকেশন্স-এর অচিন্ত্য চয়ন৷ তিনি বগুড়া থেকে ২০০৮ সালে ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ঢাকায় আসেন প্রকাশক হতে৷ তিনি তখন লেখালেখিও করতেন৷ ২০১২ সালে তাঁর প্রকাশনা সংস্থা দাঁড়িয়ে যায়৷  এবার বই মেলার হিসাব ধরলে এ পর্যন্ত দেশ পাবলিকেশন্স থেকে ৫০০ বই বের হয়েছে, যার মধ্যে ৮০ ভাগই তরুণদের লেখা বই বলে জানান অচিন্ত্য চয়ন৷ কেন প্রকাশক হলেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তরুণ লেখকদের প্রতি প্রকাশকদের অবহেলা, অপমান এবং প্রতারণা দেখেই আমি তাঁদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়তে চেয়েছি৷ আর সেখান থেকেই আমি প্রকাশক হই৷ একটা আশ্রয় গড়ে তুলতে চাই৷ আমরা একটা স্লোগান নিয়ে কাজ করি দেশের গর্ব– তারুণ্য৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রকাশনা থেকে অনেক তরুণের লেখা জনপ্রিয় হয়েছে৷ অনেক লেখক তৈরি হচ্ছে৷ আমরা মানকে অবশ্যই গুরুত্ব দেই৷ আর  মেধাবী তরুণ লেখকদের খুঁজে বের করি৷ আমরা লেখকদের নিয়ম মেনে শতকরা ১৫ ভাগ রয়্যালটি দেই৷''

এই তরুণ লেখক জানান, ‘‘গত ৩-৪ বছরে পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ তরুণ প্রকাশকের সংখ্যা এখন প্রায় ২০ ভাগ৷'' তিনি বলেন, ‘‘তরুণ প্রকাশক বাড়ছে৷ তরুণ লেখক বাড়ছে৷ বাড়ছে তরুণ পাঠক, যাঁরা নতুন ধরনের  সাহিত্য পড়তে চান৷ ভিন্ন স্বাদের লেখা পছন্দ করেন৷'' তরুণ এই প্রকাশক আরো বলেন, ‘‘আমরা ব্যাংক লোন চাই৷ কিন্তু আমাদের নানা বাহানায় তা দেয়া হয় না৷ আমরা যদি আরো একটু বেশি পুঁজি পাই, তাহলে প্রকাশনা শিল্পকে সত্যিকারের শিল্পে রূপান্তরিত করতে পারব৷''

‘ব্লগ আমাকে সহায়তা করেছে’

 ‘সোনাইলের বনে' ছোট গল্পের বইয়ের জন্য জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৮ পেয়েছেন তরুণ লেখক হামিম কামাল৷ তিনি মনে করেন, ‘‘লেখক হিসেবে জায়গা করে নেয়ার কোনো শর্টকাট পথ নেই৷ এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং এর শেষ নেই৷ তবে অগ্রজদের সহযোগিতা, প্রকাশকদের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ যেমন, ২০০৬ সাল থেকে লেখালেখি করলেও আমার কাছে পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকরা লেখা চেয়েছেন ২০১১-১২ সালে৷ তবে এই সময়ে অগ্রজদের সান্নিধ্যে, চর্চার মাধ্যমে আমার  নিজের চিন্তা এবং ধারণা পরিশীলিত হয়েছে, আমার নিজস্ব একটা শৈলী তৈরি হয়েছে৷ এটা অব্যাহত থাকতে হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘ব্লগ আমাকে সহায়তা করেছে৷ ব্লগে লেখালেখি আমাকে একটা পরিচিতি এনে দেয়৷২০০৬ থেকে ২০১৩-র আগ পর্যন্ত ব্লগের একটা হাই টাইম গেছে৷ আমি একটি সাহিত্য পত্রিকায় কাজ করেছি৷ পরে তারাই প্রকাশনা সংস্থা দেয়৷ তখন আমার প্রকাশক পেয়ে যাই সহজেই৷ তবে লেখককে এক দীর্ঘ পথতো পাড়ি দিতেই হবে৷''

হামিম কামালের এর আগে দু'টি উপন্যাসও বের হয়েছে৷ তাঁর মতে, ‘‘প্রত্যেক লেখককে যেন ভিন্নভাবে চেনা যায়৷ প্রত্যেক মানুষের জীবন-দর্শন আলাদা৷ দেখার চোখ আলাদা৷ তাই লেখকেরও একটি আলাদা শৈলী তৈরি হয়ে যায়৷ পৃথিবীতে এত মানুষ, তার মধ্যে আমরা দশ জনকে তুলে আনছি কেন? ওই আলাদা শৈলীর কারণেই৷''

তাই তরুণ লেখক প্রকল্প যতটা না প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন তরুণ লেখকদের চিন্তার স্বাধীনতা, প্রকাশের স্বাধীনতা, ভাববার স্বাধীনতা৷ তাঁদের অবহেলা না করে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দিতে হবে৷ শেরিফ আল সায়ার বলেন, ‘‘তরুণদের সাহিত্যচর্চার সেই লিটল ম্যাগ আর আগের মতো নেই৷ সেটাকে যদি আরো একটু জায়গা দেয়া যায়, তাহলে ভালো হয়৷'' তরুণরাই চিন্তায় নতুনত্ব আনছে বলে মনে করেন প্রকাশক মাহবুবুর রহমান৷ তাঁরাই নতুন পাঠক তৈরি করছেন৷ নতুন পাঠকের মনের খোরাক দিচ্ছেন৷ ভাঙছেন সাহিত্যের প্রচলিত ধারা৷ আর তরুণ প্রকাশকরাই প্রধানত এগিয়ে আসছেন তরুণ লেখকদের জন্য৷ তবে এটা যেন কোনো শ্লোগান না হয়৷ এটা যেন কোনো ব্যবসা না হয়৷ প্রতিভা আর মেধাকেই শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে৷ তরুণদের দাবি সেটাই৷

পাঠক বইমেলায় তরুণদের লেখা নিয়ে আপনার ভাবনা কী? লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য