‘তারা মনে করে, আমার ক্ষমতা আছে, আমাকে কে কী করবে?’
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০এর মধ্যে আছে বিচারহীনতা, অভিভাবকদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, কাউন্সেলিংয়ের অভাব ইত্যাদি৷ এছাড়া পুলিশের যে ধরনের তৎপরতা দরকার, সেটাও নেই বলে জানান তিনি৷
ডয়চে ভেলে : করোনাকালে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার ঘটনা কি বেড়েছে?
অ্যাডভোকেট সালমা আলী : এই সমস্যাগুলো তো আগেও ছিল৷ করোনার কারণে এখন যেহেতু পুলিশের উপস্থিতি কম, মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সেভাবে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে সেভাবে সহযোগিতা করতে পারছে না, ফলে এটা কমেনি, বরং বেড়েছে৷
প্রেমিক প্রেমিকাকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে, কোথাও বন্ধুরা মিলেও গণধর্ষণ করেছে- এমন বর্বরতার কারণ কী?
এখন কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষমতাশালী ধর্ষক অনেক আছে৷ এর সঙ্গে মাদক আছে৷ পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট তারা দেখছে৷ গণধর্ষণের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, যারা এটা করছে, তারা কিন্তু মনে করে আমার ক্ষমতা আছে, আমি এটা করবো৷ কে কী করবে? এই বিষয়গুলোর জন্য যে ধরনের কাউন্সেলিং বা যে ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা দরকার, সেটা কিন্তু আমাদের দেশে নেই৷ দেখেন, আমাদের এখানে নয়ন বন্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কিশোর অপরাধীরা কী বেপরোয়া! এই অপরাধীরাও ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে উত্যক্ত করা- সব কাজই তারা করছে৷ গণধর্ষণের মূল কারণ বিচারহীনতা এবং এদের কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা না থাকা৷ অথচ কিশোরদের জন্য এটা খুব দরকার৷
তাহলে কি বিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে?
যৌনতা কিন্তু স্বাভাবিক বিষয়৷ কিন্তু এটার বিকৃত বিষয়টা এখন বেশি দেখা যাচ্ছে৷ প্রথম দায়িত্ব পরিবারের৷ অভিভাবকদের যে দায়িত্ব, সেটা তারা ঠিকমতো পালন করছে বলে মনে হচ্ছে না৷ যারা বিত্তশালী, তারা বাচ্চাদের বিষয়গুলোতে সেভাবে মনোযোগ দেন না৷ আর মধ্যবিত্তরা বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত৷ তারা অন্যদিকে কোনো মনোযোগই দেন না৷ নিম্নবিত্তরা তো ছেলে একটু বড় হলেই মনে করে, ছেলে লায়েক হয়ে গেছে৷ সে উপার্জন করবে৷ সে যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারে৷ এক্ষেত্রে উচ্চবিত্তরা এই ছেলেগুলোকে ব্যবহার করছে৷ পারিবারিক বন্ধন, স্কুল-কলেজে যে ডিসিপ্লিন শেখানো হতো এখন সেটা নেই৷ স্কুলগুলোতে যৌনতার পজেটিভ বিষয় নিয়েও কিছু শেখানো হয় না৷ এটাকে একটা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে৷ এই লুকোচুরির মধ্যেই অপরাধগুলো ঘটে যাচ্ছে৷
ধর্ষণ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে, তা ঠিক৷ কিন্তু এখন তো যুগোপোযোগী আইন আছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও আছে৷ মানুষ সচেতন হচ্ছে৷ তারপরও কেন কমছে না ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের ঘটনা?
ধর্ষণের অনেকগুলো কারণ আছে৷ পরিবার থেকে, সমাজ থেকে এবং সর্বোপরি সরকারের যে দায়িত্বগুলো আছে সেগুলো পালন করা দরকার৷ কিছু জিনিস আছে অপরাধ বাড়িয়ে দেয়৷ এই বিষয়গুলোতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার৷ আমাদের যে আইন, সেটার জন্য কিন্তু আমরা অনেক কাজ করেছি৷ কিছু আইন আছে প্রতিরোধমূলক আইন৷ এই আইনগুলোর ঠিকমতো ব্যবহারও আমরা করছি না৷ আমরা বলি, পুলিশ তৎপর৷ কিন্তু পুলিশের যে ধরনের তৎপরতা দরকার, সেটা কিন্তু নেই৷ পুলিশ শুধু শক্তিশালী গ্রুপের জন্য আছে৷ নারীবান্ধব, শিশুবান্ধব বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা কিন্তু নেই৷ আপনারা জানেন, অনেক মামলাই হয়তো কোর্টে যায়৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপোষ হয়ে যায়৷ ভিকটিমের প্রোটেকশন বলতে যে জিনিসটা, সেটা কিন্তু আমাদের দেশে নেই৷ নারী ও শিশু বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য যে লিগ্যাল সাপোর্ট দরকার, সেটা কিন্তু আমরা দিতে পারছি না৷
ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের সাজার হার কেমন?
৭ থেকে ৯ শতাংশ৷ আসেই না মামলাগুলো৷ তারপরও যেগুলো আসে, সেগুলো বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তারা তুলে ফেলে বা অনেক মামলা নষ্ট হয়ে যায়৷