তাবলিগ প্রধানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
১৭ এপ্রিল ২০২০তাবলিগ প্রধান মোহম্মদ সাদ কান্ধলবির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করলো কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। দিল্লি পুলিশ মৌলানার বিরুদ্ধে আগেই এই অভিযোগ এনেছিল। তার ভিত্তিতেই এই নতুন মামলাটি দায়ের করেছে ইডি। মৌলানা সাদ সহ জামাতের আরও বেশ কয়েকজন কর্তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ এর আগে তাবলিগ প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধ না মেনে জমায়েত এবং তার জেরে বহু মানুষকে মৃত্যুর মুখে ছেলে দেওয়ার মামলা দায়ের করেছিল। পুলিশের দাবি, গত কয়েকদিন ধরে তাবলিগের সদর দফতরে গিয়ে তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে।
ইডি-র আধিকারিকরা ব্যাঙ্ক ও অনান্য আর্থিক সংস্থার সঙ্গে তাবলিগের লেনদেনের সব নথি খতিয়ে দেখছেন। তাবলিগ ও তার সঙ্গে জড়িত লোকেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাঁরা যে সব ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত, সেই সমস্তাত ট্রাস্টের অর্থ কোথা থেকে আসছে, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এর পরেই অর্থপাচারের অভিযোগে এই মামলা রুজু হয়েছে।
ইডি-র অভিযোগের জবাবে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি মৌলানা। সূত্র জানিয়েছে, মৌলানাকে জেরার করার কথা ভাবছেন ইডির আধিকারিকরা। তবে তার আগে তাবলিগ প্রধানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে বলে ইডি সূত্রের খবর। কারণ, মৌলানা নিজেকে স্বেচ্ছায় কোয়ারান্টিন করে রেখেছেন। মৌলানার আইনজীবী তৌসিফ খান জানিয়েছেন, ''আমার কাছে এখনও কোনও তথ্য নেই। তাই আমি ইডি-র মামলা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে মৌলানার পরিবার পুলিশি তদন্তের কাজে সবরকম সহায়তা করেছে। তিনি বা তাঁর পরিবার পালিয়ে গিয়েছেন এবং তদন্তের কাজে অসহযোগিতা করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠছে, তা ভিত্তিহীন।''
মার্চের শেষ থেকে খবরের শিরোনামে তাবলিগ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিল্লির নিজামুদ্দিনে বিশাল জমায়েত করেছিল তারা। সেখানে বিদেশ থেকে প্রচুর লোক যোগ দিয়েছিলেন। পুলিশি নির্দেশ অমান্য করে দুই হাজারেরও বেশি লোককে এক জায়গায় রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, সেখান থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। নিজামুদ্দিন থেকে অনেকে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের থেকেও করোনা ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। তারপর দেশজুড়ে ২৫ হাজার লোককে খুঁজে বের করে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। তাবলিগ অবশ্য জানিয়েছে, লকডাউন ঘোষণার আগেই তাদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় তাদের প্রতিনিধিরা আটকে পড়েছিলেন। তবে এর পরেও তাবলিগের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট কালে এত বড় জমায়েত কেন করা হলো? প্রশ্ন উঠছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেও। সব জেনে এত বড় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কেন? কেনই বা বিমানবন্দরে বিদেশিদের স্ক্রিনিং করে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়নি? এখন সেই ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ ও ইডি যে তথ্য পাচ্ছে, তার ভিত্তিতে এই মামলা করা হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।
ডয়চে ভেলের উর্দু বিভাগের সাংবাদিক জাভেদ আখতার জানিয়েছেন, ''বছর দু'য়েক আগে তাবলিগ দুই গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যায়। অভিযোগ, টাকা পয়সা সংক্রান্ত ঝামেলা তার একটা বড় কারণ। অন্য ভাগটি রামলীলা ময়দানের কাছে একটি মসজিদ থেকে কাজকর্ম চালায়। তবে মার্চে করোনার প্রকোপ বাড়ার পরেই তারা অফিস বন্ধ করে দেয় এবং ওখানে জমায়েতও বন্ধ করে দেওয়া হয়।'' সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, তাবলিগে বিদেশ থেকে যাঁরা আসতেন, তাঁদের অনেকেই ডোনেশন বা অর্থ সাহায্য করতেন। সেই অর্থের পরিমাণও কম নয়।
ভারতে করোনা পরিস্থিতি এখনও আয়ত্তে আসেনি। সরকারি সমীক্ষা বলছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তা সব চেয়ে বাড়বে। তবে রাজস্থান, পাঞ্জাব, বিহারের মতো রাজ্য মনে করছে, লকডাউনের ফলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। না হলে, করোনার প্রকোপ অনেকটাই বেড়ে যেত। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, আগামী এক সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ, আগামী সপ্তাহে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হবে। যাঁদেরই শ্বাসকষ্ট বা জ্বর হচ্ছে, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করে দেখা হবে। তাই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কিছুটা বাড়তেই পারে। এর মধ্যে দিল্লিতে একটি হাসপাতালে একজন গর্ভবতী ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি যে আগে বিদেশ গিয়েছিলেন বা তাঁর করোনার লক্ষণ আছে, সে সব তিনি গোপন করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তারপরই হাসপাতালের ২৯ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে। তবে এর মধ্যে আশার কথা একটাই, গত চার দিনে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ জন সুস্থ হয়েছেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)