তফসিল ঘোষণার আগেই ফয়সালা চায় দুই দল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩বিএনপি মনে করছে, এই সময়ের মধ্যে সরকারকে ফেলে দিতে হবে ৷ আর আওয়ামী লীগ বলছে এই সময়ে বিএনপিকে তারা মঠেই দাঁড়াতে দেবে না৷
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে৷ আর এই কাউন্ট ডাউন চলবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত৷ সামনের এক মাসকে চলমান রাজনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর সময় বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা মনে করছে, এই এক মাসের মধ্যেই সরকারকে ফেলে দিতে না পারলে সরকার তার পথেই এগিয়ে যাবে৷ তাদের অধীনে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না৷
আর সরকারও মনে করছে এই এক মাস বিএনপিকেমোকাবেলা করা গেলে তফসিল ঘোষণার পর আর আন্দোলন থাকবে না৷ তাই যেকোনো উপায়ে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে হবে৷ তবে এখানে মার্কিন ভিসানীতির একটি বড় ভূমিকা আছে৷ সরকারের পক্ষে বিরোধীদের ঠেকাতে পুলিশ কী ভূমিকা নেবে তা নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে৷ তাই তারা নিজেদের পুরো সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকতে চায়৷ শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে আওয়ামী লীগের কৌশল চূড়ান্ত হবে৷
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, "এই ৩৬ দিন বিএনপিকে দাঁড়াতে দেব না৷ সব জায়গা বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের দখলে থাকবে৷ শেখ হাসিনার কর্মীদের দখলে থাকবে৷”
আর বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে৷ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি না, গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে কিনা, জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে কি না- সবকিছু নির্ভর করছে আগামী কয়েকটা দিনের ওপর৷” দুই দিন আগে তিনি বলেছেন, "সরকার কথা না শুনলে ফয়সালা রাজপথেই হবে৷”
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টার যে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন তাও শেষ হয়ে গেছে৷ সরকার কোনো সাড়া দেয়নি৷ বিএনপি নেতারা বলছেন, এখন এসপার-ওসপার আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই৷
৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি আছে৷ তবে নতুন কর্মসূচি এর আগেই দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স৷ তিনি বলেন,"সরকারের পুতুল নির্বাচন কমিশন যেহেতু একটি পাতানো নির্বাচন করার জন্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে৷ তাই তার আগেই আমরা আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবো৷ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না৷”
বিএনপি তার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আগামী দুই দিন বৈঠক করবে৷ বৈঠকে যেসব কর্মসূচির প্রস্তাব আসছে সেগুলো নিয়ে সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠক করবে৷ সেই বৈঠকেই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল৷ তিনি বলেন,"আমরা সরকারের পাওয়ার লাইনে অচলাবস্থা সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দেব৷ সরকারের ক্ষমতার উৎস জনগণের যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দলীয় প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ করছে সেগুলোর কাজে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে চাই৷ এজন্য অবরোধ, ঘেরাও এবং হরতালের মতো কর্মসূচি আমাদের বিবেচনায় আছে৷”
তার কথা,"আমরা যদি রাজপথে চাপ বাড়াই তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে৷ কারণ তারাও সুষ্ঠু নির্বাচন চান৷ আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি৷”
বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াত ছাড়াও আরো অনেক ইসলামি দলের সঙ্গে তারা কথা বলছেন৷ যারা যুগপৎ দলের মধ্যে নেই তারাও মাঠে নামবে৷ তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন অন্যতম৷ আর হেফাজতে ইসলামের নেতাদের আলাদা আলাদা দল আছে ৷ তারা ওই দলীয় ব্যানারে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামবেন৷
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ঢাকা অবরোধের মতো একটি কর্মসূচি থাকতে পারে৷ ওই কর্মসূচির টার্গেট হবে সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় এনে ঢাকা অচল করে দেয়া৷ তবে এই কর্মসূচি আগে প্রকাশ না করে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় এনে ঘোষণা করা হতে পারে৷
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, "এবারের আন্দোলনে এসপার ওসপার কিছু একটা হবে৷ আর সেজন্য বিএনপির সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক আলোচনা চলছে৷ হরতাল , অবরোধ, ঘেরাও সবই বিবেচনায় আছে৷ ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিও আসতে পারে৷”
তার কথা,"অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়ছে৷ সরকার দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ আর আমরা কঠিন কর্মসূচি দেব যাতে সরকারের পতন হয়৷ এবার আর আমাদের গ্রেপ্তারের সময় পাবে না৷ তারা কীভাবে পালাবে সেই চিন্তা করতে হবে৷ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই৷ কিন্তু আমাদের ওপর আঘাত এলে এবার প্রতিরোধ করব৷”
এদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পর্যন্ত তাদের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার জন্য বলেছে৷ সহযোগী সংঠনগুলোকেও আলাদা আলাদা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপির সামনে মাঠে শক্তি প্রদর্শন করলে বিএনপি খুব বেশি এগোতে পারবে না৷ তারা এরইমধ্যে এমপি এবং আরো যারা প্রার্থী হতে চান তাদের যার যারা এলাকায় যেতে বলেছেন৷ আওয়ামী লীগ তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই সারাদেশে শাান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে৷ আর বিএনপি কী কর্মসূচি দেয় তা দেখে পাল্টা কর্মসূচি দেবে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর দেশে ফিরে এলে আরো বিস্তারিত পরিকল্পনা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন৷ তিনি বলেন,"বিএনপি কোনো ধরনের সংঘাত করলে মাঠে দাঁড়াতে দেয়া হবে না৷ অবরোধ, ঘেরাওয়ের নামে স্বাভাবিক জনজীবন বিঘ্নিত করলে জনগণ তাদের মাঠে দাঁড়াতে দেবে না৷ নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আওয়ামী লীগ রাস্তায় থাকবে৷ আমরা সামনের নির্বাচন বিঘ্নকারী কোনো কিছু হতে দেব না৷ মানুষ নির্বাচন চায়৷”
তার কথা,"মার্কিন ভিসা নীতি তো নির্বাচন বন্ধ করার জন্য নয়৷ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য৷ আমরা তো তার জন্যই কাজ করছি৷ তবে তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলে দেশের মানুষ তা মানবে না৷ অতীতেও মানে নাই৷”