‘তখনো কেউ কেউ ভিডিও করছিল’
১০ অক্টোবর ২০১৬ঘটনার দিন অনেক মানুষ সেখানে থাকলেও তারা নিরপদ দূরত্বে দাড়িয়ে হায় হায় বলে চিত্কার করেছেন৷ কেউ কেউ ব্যস্ত ছিলেন ছবি তোলায় অথবা ভিডিও করায়৷ কিন্তু এইচএসসি পাশ করা ইমরান ছিল তার ব্যতিক্রম৷ সে দূর খেকে মানুষের জটলা এবং চিত্কার শুনে দৌড়ে যায়৷ ততক্ষণে অবশ্য বদরুল পালিয়েছে আর রক্তাক্ত পড়ে ছিলেন নার্গিস৷ কাত্রাচ্ছিলেন বাঁচার জন্য৷ তখন এগিয়ে আসেন ইমরান, আরো দুই তরুণের সহায়তায় ইমরান তাঁকে নিয়ে যান হাসপাতালে৷
এই সাহসী এবং মানবিক তরুণ টেলিফোনে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন আসি তার অল্প আগেই বদরুল পালিয়েছে৷ পড়ে আছে আপুর রক্তাক্ত দেহ৷ কিন্তু তারপরও কেউ উদ্ধার করছিলনা৷ তারা হয়তো ভাবছিল বদরুল আবার তার লোকজন নিয়ে আসবে৷''
ইমরানের বাড়ি সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে৷ থাকেন সিলেট শহরের টিলাগড় এলাকার একটি মেসে৷ সেখান থেকে কাছেই সিলেট এমসি কলেজ৷ ওই কলেজেরই মসজিদের কাছের রাস্তায় নার্গিসের ওপর বদরুল চাপাতি নিয়ে হামলা করে সোমবার বিকেলে৷
ইমরান বলেন, ‘‘আমি হামলার সময় ছিলাম না৷ প্রতিদিনের মতে বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে ওইদিকে আসছিলাম৷ দূর থেকে শুনি চিত্কার চেঁচামেচি৷ আর অনেক লোকের ভিড়৷
‘‘দ্রুত কাছে গিয়ে দেখি অনেক লোক নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে আছেন আর এক আপুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে রাস্তার উপর৷ আমি দৌড়ে তাঁর কাছে গেলাম৷ সবাইকে চিত্কার করে বললাম আসুন৷ হাসপাতালে নিতে হবে৷ কিন্তু দুই তরুণ ছাড়া আর কেউ এলো না৷''
ইমরান বলেন, ‘‘আমরা তাকে একটি অটোরিকশায় করে দ্রুত ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই৷ সেখানে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা জানান দ্রুত রক্তের প্রয়োজন৷ আমার গ্রুপের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় প্রথম রক্ত আমিই দিই৷ ওষুধ কিনে আনি৷ এরপর আরো অনেকে রক্ত দেন৷ তাঁর আত্মীয়স্বজন চলে আসেন৷ আমি আপুকে নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলাম৷ পরে তাঁকে ঢাকায় পঠানো হয়৷''
ডয়চে ভেলের সঙ্গে ইমরান কবিরের আলোপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এখানে:
ডয়চে ভেলে: আপনি যখন গেলেন তখন সেখানে কত লোক ছিল, আনুমানিক?
চার/পাঁচশোতো হবেই৷ তবে তারা কেউ কাছে ছিলেন না দূরে দাড়িয়ে ছিলেন৷
তারা কী করছিলেন?
তারা কেউ চিত্কার করছিলেন৷ কেউ ভিডিও করছিলেন, ছবি তুলছিলেন৷ তারা হয়তো ভয়ে ছিলেন যদি বদরুল এসে আবার হামলা করে!
আপনি তো উদ্ধারে এগিয়ে গেলেন, সবার সহায়তা চাইলেন...
হ্যাঁ, আমি চিত্কার করে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বললাম৷ কিন্তু দুই তরুণ ছাড়া কেউ আসেননি৷ আমরা যখন আপুকে উদ্ধার করে সিএনজিতে তুলছিলাম তখনো কেউ কেউ ভিডিও করা এবং ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন৷ এটা আমাকে আহত করেছে৷ আমার কাছে মনে হয়েছে, একটা মানুষের এইরকম বিপদে আমরা যদি এগিয়ে না যাই তাহলেতো আর হলো না৷ মানুষ হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব৷ যারা আগে থেকেই ছিলেন তারা যদি একটু এগিয়ে যেতেন তাহলে হয়তো বদরুল বেশি আগাতে পারতো না৷ আপু হয়তো রক্ষা পেতো৷
আপনি কি ছাত্রলীগ করেন? কেউ কেউ বলছেন ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবেই আপনি নার্গিসকে উদ্ধার করেছেন?
না আমি ছাত্রলীগ কেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই জড়িত না৷ রাজনীতির প্রতি আমার কোনো আগ্রহও নেই৷
বদরুলকে কখন আটক করা হয়?
বদরুলকে ঘটনাস্থলে আটক করা হয়নি৷ সে পালিয়ে যাওয়ার সেময় অন্য কোথাও সাধারণ মানুষের হাতে আটক হয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছে৷
২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করলেও পছন্দের সাবজেক্ট না পাওয়ায় কোথাও ভর্তি হননি ইমরান কবির৷ এবার আবার ভালো সাবজেক্টে অনার্সে ভর্তির চেষ্টা করছেন৷ স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম এবং তাসলিমা আক্তারের ছোট ছেলে তিনি৷