রাজনৈতিক সমঝোতা হবে কি?
৭ ডিসেম্বর ২০১৩শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে তারানকোর এই সফর নিয়ে আছে ব্যাপক আগ্রহ৷ তারা এটাকে দেখছেন রাজনৈতিক সমঝোতার শেষ উদ্যোগ হিসেবে৷
এই নিয়ে তৃতীয় দফায় ঢাকা এলেন অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো৷ এর আগে গত মে মাসে এবং সর্বপ্রথম গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন তিনি৷ প্রতিবারই তাঁর লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন৷
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন, চিঠিও দিয়েছেন একাধিকবার৷ আর তারানকোর তৃতীয় দফা ঢাকা সফরের আগেও গত সপ্তাহে দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মহাসচিব৷ প্রতিবারই চিঠি বা টেলিফোনে তিনি আলাপ, আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের কথা বলেছেন, বলেছেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা৷
এবার তারানকো এমন এক সময় ঢাকায় এলেন যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম সংঘাতময় এবং সহিংস হয়ে উঠেছে৷ বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলীয় জোট টানা অবরোধ-হরতাল দিয়ে যাচ্ছে৷ তারানকোর সফরের সময়ও অবরোধে বিরতি নেই৷ সরকারও একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ দেশ স্থবির হয়ে পড়ছে৷ সহিংসতায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷
এসব কারণে তারানকোর এবারের বাংলাদেশ সফরের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, বলে মনে করেন রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷ তিনি বলেন, তারানকোর উদ্যোগ সফল না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে৷
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকো শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ এছাড়া আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে৷ জানা গেছে, তিনি রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করতে চাইছেন৷ তবে সেই সুযোগ তিনি পাবেন না বলেই মনে হচ্ছে৷
অধ্যাপক ইমতিয়াজ মনে করেন তারানকো এবার সমঝোতার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন৷ এই চেষ্টায় তিনি সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক৷ তাঁর মতে, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বিষয়টি এবারকার আলোচনায় প্রাধ্যান্য পেতে পারে৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, যারা নিজেদের দেশেই শান্তি রক্ষা করতে পারে না তারা কিভাবে অন্যদেশের শান্তি রক্ষায় কাজ করবে? তবে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূতের বৈঠকের পরই বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে৷
তারানকোর ঢাকা সফর শেষ হবে মঙ্গলবার৷ এর মধ্যে শনি থেকে সোম, তিনদিনই বিরোধী দলের অবরোধ৷ একই সঙ্গে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রবিবার ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়েছে৷
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, তারানকো নিজের চোখে যেমন রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে পারবেন, তেমনি বুঝতে পারবেন প্রকৃত অবস্থা৷ আর গত ছয় দিনের টানা অবরোধে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬০ জনের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য যথেষ্ট৷ তাই তারানকোর এই সফরেই যেন রাজনৈতিক সমঝোতা হয়, বন্ধ হয় হানাহানি – এই আশা অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের৷