ঢাকায় সমাবেশ : প্রস্তুত বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশ
১ ডিসেম্বর ২০২২তবে ওইদিনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দল। আর এর বাইরে পুলিশেরও ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপি নেতারা এরইমধ্যে সভা-সমাবেশে বলছেন ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনের চূড়ান্ত ডাক দেয়া হবে। আর তারা সরকারের পতনের পর নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী " রাষ্ট্র মেরামতের” রূপরেখা প্রকাশ করবে ওই সভায়। তারা এই রূপরেখার মাধ্যমে একটি "রেইনবো নেশন” প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
এজন্য তারা ঢাকায় দলীয় এবং দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমাবেশ ঘটাতে চায়। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের যেকোনো উপায়ে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। কমপক্ষে ২৫-৩০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটানোর কথাই তৃণমূলে বলা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি বুঝে সমাবেশ দেখে নতুন কোনো ঘোষণাও আসতে পারে। তার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনাও আছে।
তৃণমূলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশে পরিবহন ধর্মঘটের কথা মাথায় রেখে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এরইমধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। তাদের হোটেলে না থেকে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের বাসায় থাকতে বলা হয়েছে। যাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না তাদের ঢাকার উপকন্ঠের জেলা ও উপজেলায় অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। যাতে তারা সমাবেশের আগের দিনই ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেন। বিএনপির টার্গেট হচ্ছে সমাবেশের আগের দিনই যাতে নেতা-কর্মীরা সবাবেশ স্থলে অবস্থান নেন। নির্দেশনাও সেভাবেই দেয়া হয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল এমরান জানান,"আমাদের অনেকেই ঢাকার পথে এরই মধ্যে রওয়ানা হয়েছেন। একদম উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সবাইকে ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আমরা দল বেধে যাবো না। পরিবহন ধর্মঘটকে মাথায় রেখে আমাদের অনেকে এরইমধ্যে ঢাকায় রওয়ানা হয়েছেন। আমরা সমাবেশের দুই-তিন দিন আগেই ঢাকায় চলে যাব।”
তিনি বলেন,"নেতাদের নির্দেশনা হলো ২৫-৩০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে হবে ঢাকায়। আমরা তৃনমূলে সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সংগঠনের কেউ সমাবেশের আগে এলাকায় থাকবেন বলে মনে হয় না।”
এদিকে তাদের পুলিশের তৎপরতার দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে। পুলিশ তৎপর হওয়ার আগেই তাদের ঢাকায় রওয়ানা হতে বলা হয়েছে। আল ইমরান বলেন, "আমাদের এলাকায় এখনো পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়নি। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। আমরা যোকোনো উপায়ে ঢাকার সমাবেশে যাবোই।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, "আমরা বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে দেখেছি পরিবহন ধর্মঘটসহ সরকারের নানা বাধার মুখেও লাখ লাখ মানুষ হাজির হয়েছেন। ঢাকার সমাবেশেও তাই হবে। যতই বাধা দিক সরকার যেকোনো উপায়ে মানুষ আসবেই। আমাদের সমাবেশের প্রস্তুতির কাজ চলছে।”
তার কথা,"আমরা তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চাইনি। সরকার সেখানে করতে বললেই আমরা করব কেন? আমরা নয়া পল্টনে দলীয় অফিসের সামনেই সমাবেশ করব। পুলিশ নিরাপত্তার কথা বলছে। কিন্তু আমরা তো মনে করি পার্টি অফিসের সামনেই আমরা নিরাপদ থাকব।”
তিনি বলেন," ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ছাড়া আমাদের আর কোনো পরিকল্পনা নাই। সমাবেশে দলের মহাসচিব পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আর সমাবেশ ঢাকা বিভাগের। সারাদেশের নয়।”
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বৃহস্পতিবার পুলিশের আইজির সঙ্গে দেখা করে, গায়েবি মামলা বন্ধ ও নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে, বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে ১০ তারিখের আগেই তারা ঢাকা অবরুদ্ধ করে ফেলবে। ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতো তারা অবস্থান নেবে আর ঢাকার আশপাশের জেলা ও উপজেলায় তারা সমাবেশ মিছিলের মাধ্যমে সক্রিয় থাকবে। ঢাকার ওয়ার্ডে দলীয় নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেবে। সড়কগুলোতেও তারা সক্রিয় থাকবে। আর সেজন্য এখন ঢাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তারা নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করছেন। কলাবাগানের বসিরউদ্দিন রোড ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন,"এখন আমরা প্রতিদিনই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা করছি। ১০ তারিখে আমাদের কী করতে হবে সে সম্পর্কে নেতারা আমাদের জানাচ্ছেন।”
তিনি জানান, "এখন পর্যন্ত আমরা যে নির্দেশ পেয়েছি তাতে আমরা ঢাকার সব ওয়ার্ডে ওইদিন অবস্থান নেব। ছোট ছোট মিছিল সমাবেশ করব। আর ঢাকায় প্রবেশের সবগুলো পথে ওইদিন আমাদের অবস্থান থাকরবে। সেখানেও সমাবেশ ও মিছিল হবে।”
তার কথা,"নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা সেইভাবে প্রস্তুত হচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীনে ২৬টি থানা ইউনিট, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ৮০২টি ইউনিট এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা ইউনিট, ৭৫টি ওয়ার্ড ও ৬০৫টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা পাহারা বসাবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ৯ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণে স্টেডিয়ামের ২নং গেইটের সামনে সমাবেশ করবে। একই ধরনের সমাবশ করবে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
১০ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সাভারের মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ মাঠে জনসভা করবে। রাজধানীর প্রবেশমুখ সাভার, উত্তরা, ধোলাইপাড়, শনির আখড়া, গাবতলী, আমিনবাজার, গাজীপুরের টঙ্গী, মুন্সীগঞ্জ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক শোডাউন করবে ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরা। সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে সমাবেশ করবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। যাতে করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটকে দেওয়া যায়। এইসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে।
এদিকে পুলিশ বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। ঢাকার প্রবেশপথ ও চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ছে। জানা গেছে, ঢাকার হোটেলগুলোতে তারা ব্যাপক তল্লাশি চালাবে। বস্তি এবং ঢাকার প্রান্তীয় অঞ্চলেও অভিযান হবে। যানবাহনেও তল্লাশি শুরু হবে। ১০ তারিখের আগে থেকেই ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। আর ঢাকার আশপাশের জেলা ও উপজেলায়ও পুলিশকে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ১০ ডিসেম্বর কোনো পরিবহন ধর্মঘট না ডাকার জন্য বলেছেন। তবে কয়েকজন পরিবহন নেতা জানান এখনো চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আমেদ মান্নাফি বলেন," বিএনপি সেহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় না কেন? নিশ্চয়ই তাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে। তাই সাধারণ মানুষের জানামাল রক্ষায় তাদের সঙ্গে আমরা থাকব। আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মী সভা শুরু করে দিয়েছি। ১০ ডিসেম্বর যাতে কোনো অঘটন বিএনপি ঘটাতে না পারে সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর পুলিশ-প্রশাসন তো থাকবেই।”
তিনি জানান,"৯ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররম এলাকায় আমাদের সমাবেশ আছে। ১০ তারিখে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা থাকব।”
তার কথা, ''আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখানো কোনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে কোনো নাশকতা করতে আমরা দেবনা। তারা চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিরোধ করব।”