অবসরে বেকহ্যাম
১৮ মে ২০১৩সংবাদ সংস্থাগুলি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বিশেষ্য-বিশেষণ হাতড়াচ্ছে: ‘‘ঝলমলে বিশ বছরের ক্যারিয়ার'', ‘‘খেলাধুলায় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে পরিচিত একটি চরিত্র'', ‘‘গ্লোবাল সেলিব্রিটি'', ‘‘আইকনিক ফিগার'', কত কিছুই তো চোখে পড়ল৷
বেকহ্যামের ফুটবল জীবনে বড় বড় নাম কিংবা পদের অভাব নেই৷ খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রেয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলানের হয়ে৷ লস এঞ্জেলেসে গিয়ে মার্কিনিদের ফুটবলের গ্ল্যামার শেখানোর পর হঠাৎই প্যারি সাঁ-জার্মা'র জার্সি গায়ে চড়িয়ে ফরাসি লিগে খেলছিলেন৷ একটা শেষ চমক দিলেন তিনি অবসর নেবেন ঘোষণা করে৷ শেষ চমক লিখলাম নাকি? বেকহ্যামের বয়স এখন ৩৮, এবং তাঁর কাছ থেকে, মাঠে না হলেও, মাঠের বাইরে ও মাঠের আশেপাশে নিঃসন্দেহে আরো অনেক চমক আশা করা যেতে পারে৷
এমন একটি ক্যারিয়ার যেখানে গ্লামার, ড্রেস সেন্স, ইংল্যান্ডের ক্যাপটেন্সি থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন আর স্পনসরিং-এর জগৎ, অলিম্পিকের জন্য ইংল্যান্ডের হয়ে দৌত্য – কিছুই বাদ পড়েনি৷ ছ'বার প্রিমিয়ার লিগ জেতায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন; দু'বার এফএ কাপ; একবার, ১৯৯৯ সালে, ইউনাইটেডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ৷
অ্যাডভারটাইজিং আর স্পনসরিং-এর কথা উঠলে মনে পড়ে, রেয়াল শুধু বেকহ্যামের জার্সি বেচেই তাঁকে গ্যালাকটিকো হিসেবে আনার খরচ তুলে নিয়েছিল৷ বেকহ্যামের যাদের সঙ্গে স্পনসরিং-এর চুক্তি আছে, সে সব সংস্থার মধ্যে পাওয়া যাবে আডিদাস, আর্মানি, স্যামসাংকে – অর্থাৎ স্পোর্টস, ফ্যাশন এবং ইলেকট্রনিক্স৷ ভিক্টোরিয়া আর ডেভিড বেকহ্যাম মিলিয়ে দু'জনের যৌথ সম্পত্তির মূল্য নাকি ২৩৭ মিলিয়ন ইউরো৷
এবার আসা যাক ফুটবলার বেকহ্যামের কথায়৷ সংবাদ সংস্থারা এবারও হাতড়াচ্ছে, কি লেখা যায়, তার খোঁজে৷ একবার পড়া গেল তাঁর ‘‘অসাধারণ সঠিক'' ডান পায়ের শটের কথা – অবশ্যই ফ্রি কিক কিংবা কর্নারের ক্ষেত্রে৷ তার পরেই এসে পড়ল তাঁর ‘‘স্ট্যামিনার'' কথা৷ অনুচ্ছেদের ওখানেই ইতি৷
আসলে বেকহ্যাম নিজেই স্কাই স্পোর্টস নিউজ-কে বলেছেন: ‘‘আমি শুধু চাই, লোকে আমাকে দেখুক একজন পরিশ্রমী ফুটবলার হিসেবে, এমন একজন যে খেলাটাকে ভালোবাসে৷'' বলেছেন, তাঁর ফুটবল জীবন কেটেছে, শৈশবের কল্পনা যদি ভাগ্যের বশে সত্যি হয়ে ওঠে, ঠিক সেইভাবে৷ বেকহ্যামের সঙ্গে যারা খেলেছেন, যেমন গ্যারি নেভিল, তারাও স্মরণ করেছেন বেকহ্যামের ‘‘স্ট্যামিনা'' আর ‘‘এনার্জির'' কথা৷
আসলে মনে রাখা দরকার, ডেভিড বেকহ্যাম ছিলেন একজন আউটফিল্ড প্লেয়ার৷ একজন আউটফিল্ড প্লেয়ারের পক্ষে যে বেকহ্যামের মতো ক্যারিয়ার কিংবা খ্যাতি অর্জন করা সম্ভব, সেটাই দুনিয়া তাঁর আগে কিংবা পরে দেখেনি৷ বেকহ্যামের বৈশিষ্ট্যই ওখানে৷ ওনার নরম গলায়, প্রায় লাজুক ভঙ্গিতে কথা বলা কিংবা হাসা দেখলেই বোঝা যেত: উনি নিজেকে বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে ভাবেন না কিংবা ফেলেন না৷ বেকহ্যামের নিজের সম্পর্কে তাঁর নিজের মূল্যায়নে কোনোকালে কোনোরকম অতিরঞ্জন ছিল না, আজও নেই৷
অথচ একজন লড়াকু, মোটামুটি দক্ষতাসম্পন্ন দলগত খেলোয়াড়, যার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, যিনি দলের অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারতেন৷ ম্যাজিক দেখানোর জন্য কেউ ফুটবলার বেকহ্যামকে মনে রাখবে না৷ লোকে তাঁকে মনে রাখবে বিংশ থেকে একবিংশ শতাব্দীতে উত্তরণের মুখে খেলাধুলা, মনোরঞ্জন, বাণিজ্য, বিজ্ঞাপন, মিডিয়া আর সেলিব্রিটি পাগল পাবলিকের এক আজব সৃষ্টি হিসেবে৷
বেকহ্যামের বিশেষত্ব হলো: তিনি এই দুনিয়াটাকে খেলিয়েছেন, না দুনিয়া তাঁকে খেলিয়েছে – বেক-এর স্মিত হাসি দেখে সেটা বোঝা আগেও সম্ভব ছিল না এবং সম্ভবত ভবিষ্যতেও থাকবে না৷