পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু
২১ নভেম্বর ২০১৯মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে৷ কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে মৃত্যুর খবর আসছে৷ বারবারই প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, তাঁদের তরফে সতর্কতায় কোনো ত্রুটি থাকছে না৷ তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত সর্তকতা নেওয়া হচ্ছে না৷ এ নিয়ে পুরসভা ও পুরবাসীর মধ্যে চাপানউতোরও চলেছে৷ এর মীমাংসা করে দিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি মালদহের বৈঠকে কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, ডেঙ্গুর মোকাবিলায় প্রশাসনিক গাফিলতি রয়েছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘রাজ্যে এ বছর ডেঙ্গুতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ পুজোর সময় আরো সতর্ক থাকলে ডেঙ্গু অনেকটাই ঠেকানো যেতো৷ একজনেরও মৃত্যু হওয়া উচিত নয়৷’’ জনপ্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব কতটা পালন করছেন তা মুখ্যমন্ত্রীর এই সমালোচনা থেকেই স্পষ্ট৷ এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে৷ তিনি কলকাতা পুরসভার ১৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর৷ রাজনৈতিক কেরিয়ারে দোলাচলের মধ্যে রয়েছেন তিনি৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কিছুদিন না যেতেই তিনি আবার পুরনো দলে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর একসময়ের প্রিয়পাত্র শোভন তাঁর বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে গিয়েছিলেন৷ আবার চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রাক্তন মেয়রকে দেখা গিয়েছে৷ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১৩১ নং ওয়ার্ড ডেঙ্গু উপদ্রুত বলে ঘোষিত হলেও কাউন্সিলরকে দেখা যাচ্ছে না৷ এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা জমছে, যা ডেঙ্গুবাহী মশার আঁতুড়ঘর৷ কাউন্সিলর হিসেবে পুর পরিষেবার কোনো দায়িত্ব পালন করছেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ তাইপদ ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন- এই প্রশ্নও উঠেছে৷
এমনকি ডেঙ্গুর আশঙ্কা বাড়ার পরও উনি এলাকা পরিদর্শনে আসেননি৷ একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ক্ষেত্রেও৷ সেখানেও পুরপরিষেবার ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে৷ তবে সেখানকার পুরপ্রধান পাচু রায় অভি্যোগ অস্বীকার করেছেন৷ এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, জনতার ভোটে, জনকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কেন নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না? কর্তব্যে গাফিলতি করলে অন্য পেশায় যুক্ত মানুষদের যদি শাস্তি হয়, তাহলে নির্বাচিত কাউন্সিলর বিধায়ক সাংসদের ক্ষেত্রেও তা হবে না কেন? বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরো (তৃণমূল) দলটাই এভাবে চলছে৷ কে কাকে শাস্তি দেবে? যিনি শাস্তি দিতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধেই প্রশ্ন উঠবে৷ বিধানসভায় শোভন চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে জবাব দিয়েছেন৷ বলেছেন, শোভন ভুল বলেছে৷ তখন মুখ্যমন্ত্রী শাস্তি দেননি কেন?’’ বাম নেতার অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো নেতা, কোনো স্তরেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন না৷ তাই ডেঙ্গু নিয়ে তথ্য গোপন করতে হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী ডেঙ্গুর মশা আমদানি করেননি, কিন্তু গাফিলতি স্বীকার করেও তিনি সত্যিটা বলেননি৷ ২৫০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তিনি বলেছেন ২৩ জন মারা গিয়েছেন৷ চিকিৎসকদের দিয়ে তথ্য গোপন করানো হচ্ছে৷’’
ডেঙ্গু নিয়ে তথ্য গোপন করা চিকিৎসকদের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, অথচ বলা হচ্ছে অজানা জ্বরের কথা৷ সেটাই লিখতে হচ্ছে চিকিৎসকদের৷ বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত চৌধুরী এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করায় তাঁকে সাসপেন্ড হতে হয়েছিল৷ চিকিৎসকরা তার বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন, আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি৷’’
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পর অবশ্য কলকাতা পুরসভার কর্তাদের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে৷ তাঁদের অভিনব ভাবনা, ডেঙ্গু মোকাবিলায় ড্রোন থেকে মশার লার্ভানাশক রাসায়নিক ছড়ানো হবে৷ এর আগে ড্রোনের মাধ্যমে জমা জল চিহ্নিত করা হয়েছিল৷
এদিকে রাসায়নিক ছড়ানোর সিদ্ধান্তে চিন্তিত পরিবেশকর্মীরা৷ তাঁরা মনে করেন, জল চিহ্নিত করলেই যদি ড্রোন রাসায়নিক স্প্রে করে, তাতে ক্ষতি হবে পরিবেশের৷