ডিএনএ কাটার কাঁচি
৭ নভেম্বর ২০১৬কয়েক বছর আগে এমানুয়েল শার্পঁতিয়ের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন৷ এক মার্কিন সতীর্থের সঙ্গে একত্রে কাজ করে শার্পঁতিয়ের আবিষ্কার করেন, ব্যাকটেরিয়া কীভাবে অনুপ্রবেশকারী ভাইরাসগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে৷ জিন নিয়ে কাজ করতে হলে যে এই স্বাভাবিক, প্রকৃতিদত্ত পদ্ধতি কাজে দিতে পারে, সেটাও তারা সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি করেন৷ ক্রিসপ্রার-কাস-নাইন হল সেই বস্তু, যা ডিএনএ-র উপাদানগুলোকে অতি সহজে, দ্রুত ও নিখুঁতভাবে বদলে দিতে পারে৷
মলিকিউলার বায়োলজিস্ট শার্পঁতিয়ের বলেন, ‘‘আমার মতে এই আবিষ্কারের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং দিকটা হলো এই যে, আমরা প্রকৃতিতে খোঁজাখুঁজি করছি, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো বোঝার চেষ্টা করছি৷ শেষমেষ এমন সব পদ্ধতির খোঁজ পাওয়া যাবে, যেগুলো বায়োলজি, বায়োটেকনোলজি আর বায়োমেডিসিনে কাজে লাগানো যায়৷''
এই গবেষণার ফলে ক্যানসার বা বংশানুক্রমিক অসুখবিসুখ সারানো যেতে পারবে৷ কিন্তু মানুষের জিন পুলে হস্তক্ষেপ করা নৈতিক বিচারে কতদূর সম্ভব বা গ্রহণযোগ্য? উদ্ভিদ সংক্রান্ত গবেষণায় কিন্তু ক্রিসপ্রার-কাস-নাইন ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে, যেমন ভুট্টার ফলন বাড়ানোর জন্য৷ এছাড়া সাদা মাশরুম নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, যাতে তা ধীরে ধীরে বাদামি হয়৷ হয়ত এমন চীনাবাদাম, যাতে অ্যালার্জি উৎপাদনকারক কিছু থাকবে না৷ অর্থাৎ প্রকৃতিকে নিয়ে খেলা করা৷
এমানুয়েল শার্পঁতিয়ের নতুন কর্মস্থান কিন্তু বার্লিনে৷ তিনি এখন মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন বায়োলজির অধ্যক্ষা৷ তাঁর গবেষণা জীবনের আরো একটি ধাপ৷ পরিবর্তনই তাঁকে তরুণ রাখে৷
তাঁর সঙ্গে পেটেন্ট সংক্রান্ত একটি বিবাদও এসেছে বার্লিনে, গবেষণার জগতে যা খুব বিরল নয়৷ এক্ষেত্রে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে, তাঁরাই প্রথম মানবকোষের উপর ক্রিসপ্রা-কাস-নাইন পরীক্ষা করে দেখেছেন৷ শার্পঁতিয়ের তাতে বিচলিত নন৷ তাঁর মত হল, ‘‘কোনো ভালো আবিষ্কারের ধরনই হলো যে, পেটেন্টটা একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে৷ ক্রিসপ্রার-কাস-নাইন-এর ক্ষেত্রেও তাই৷ তবে আমি জিতব বলে আমার আস্থা আছে৷''
কালে দেখা যাবে, কে জেতে আর কে হারে৷ আপাতত ল্যাবোরেটরিটা গুছিয়ে ফেলতে হবে ও গবেষক নিয়োগ করতে হবে৷ সেজন্য অর্থ থাকলেও, সময় কম৷
ফ্রান্সের নাগরিক এমানুয়েল শার্পঁতিয়ের এখন বিজ্ঞানের জগতের এক তারকা৷ নানা নামি-দামি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন৷ মিডিয়াও সর্বদা তাঁর খোঁজে৷ মানুষজন তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে চায়৷ তা ভালো লাগলেও, বড় সময় খরচ হয় – এমানুয়েল সময়টা গবেষণাতেই ব্যয় করতে চান৷ কেননা তাঁর এখনও অনেক পরিকল্পনা আছে৷ শার্পঁতিয়ের বলেন, ‘‘ক্রিসপ্রার-কাস-নাইন যেরকম ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, সে ধরনের আরেকটি আবিষ্কার করা সহজ হবে না, বলে আমার ধারণা৷ তবে আমাদের বেশ কিছু ভালো প্রকল্প আছে, ল্যাবেও নানা ভালো কাজ চলেছে৷ আমার লক্ষ্য হলো, গবেষণা চালিয়ে যাওয়া, তা থেকে ভবিষ্যতে আবার কোনো ব্রেকথ্রু হলেও হতে পারে৷ একজন বিজ্ঞানীর কাছে সেটাই তো বড় কথা৷''
ক্রিসপ্রার-কাস-নাইন-এর জন্য এমানুয়েল শার্পঁতিয়ের-এর নোবেল পুরস্কার পাওয়াও অসম্ভব নয়৷ তবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আমাদের ব্যাপার, তাঁর নিজের নয়৷