ডাস্টবিনে নবজাতক, দায় কার?
ডাস্টবিন থেকে একটি নবজাতক উদ্ধারের ঘটনায় সিঙ্গাপুরে হইচই পড়ে গেছে৷ বাংলাদেশেও মাঝেমধ্যে ডাস্টবিনে, হাসপাতালে বা পথের পাশে পরিত্যক্ত নবজাতক পাওয়া যায়৷ ছবিতে এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
কেন ডাস্টবিনে শিশু
উন্নত বিশ্বের কিছু দেশে যেখানে সন্তান জন্মদানে উৎসাহ দিতে সরকার নানা ধরনের সুবিধা দেয়, সেখানে বাংলাদেশে কেন নবজাতকদের ডাস্টবিনে পাওয়া যাচ্ছে ভেবে দেখেছেন কি? একুশ নামের এই শিশুটিকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে আবর্জনার স্তূপের মধ্যে পাওয়া যায়৷
এ দায় কার
নবজাতককে ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়ার দায় অবশ্যই তার স্বজনদের৷ কিন্তু শিশুটি শুধুই কি তার পরিবারের , নাকি রাষ্ট্রেরও দায় আছে? সরকার থেকে যদি ‘অনাকাঙ্খিত’ শিশুদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া হতো তবে তাদের ঠিকানা ডাস্টবিন হতো না৷ দুইদিনের এই শিশুটিকে ২০১৭ সালে মৌলভীবাজারে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়৷
ছোটমণি নিবাস
অসহায় এসব শিশুর জন্য বাংলাদেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছয় বিভাগে ছয়টি ‘ছোটমণি নিবাস’ রয়েছে৷ প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল৷ এক দিন বয়সের এই নবজাতককে ২০১৮ সালের মার্চে নেত্রকোণায় রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়৷
সব নবজাতক ভাগ্যবান হয় না
রাস্তার পাশে বা ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়া অনেক নবজাতক সেখানেই মারা যায়৷ ময়লার স্তূপে নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাও নেহাত কম নয়৷ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নড়াইলে মেহগনি বাগানে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা এই শিশুটি হাসপাতালে মারা যায়৷
কুকুর-বিড়ালে কাড়াকাড়ি
গাজীপুরের পোশাক শ্রমিক রেখা আক্তার ২০১৭ সালে একটি নবজাতককে বিড়ালের মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন৷ না হলে তার কী পরিণতি হতো কল্পনা করতে পারেন?
উদ্ধারের পরও চলে কাড়াকাড়ি
একটি নবজাতক উদ্ধারের পরও তাকে নিয়ে শুরু হয় কাড়াকাড়ি৷ অনেকেই শিশুটিকে নিতে চান৷ কিন্তু সবার উদ্দেশ্য ভালো থাকে না৷ সেক্ষেত্রে সরকার থেকে যথাযথ নজরদারির ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে গাজীপুর থেকে উদ্ধার এই শিশুটিকে দত্তক নেন এক নিঃসন্তান দম্পতি৷
দত্তকের যথাযথ ব্যবস্থা
বাংলাদেশে শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়ে কোনো আইনি কাঠামো নেই৷ ফলে শিশু দত্তক নিতে হলে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়৷ এসব জটিলতার কারনে শিশু চুরির ঘটনাও ঘটে৷ সঠিক আইনি প্রক্রিয়া থাকলে হয়ত অনেক সমস্যার সমাধান হতো৷
চাই সচেতনতা
এ বিষয়ে সমাজকেও দায়িত্ব নিতে হবে৷ যারা শিশুদের এভাবে ফেলে যায় তারা সমাজের বাইরের কেউ নন৷ এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমেও এ সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব৷ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জামালপুরে রাস্তায় ফেলে যাওয়া এই শিশুর দায়িত্ব উদ্ধারকারী পরিবারই নিয়েছে৷