ডক্টরেট কেলেঙ্কারি: পদত্যাগ করলেন জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুটেনব্যার্গ
১ মার্চ ২০১১বেশ কয়েকদিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল সু গুটেনব্যার্গের পদত্যাগের সম্ভাবনার কথা৷ আজ তা সত্যিতে পরিণত হলো৷ বার্লিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন৷ তিনি সেখানে বলেন,‘আমি সব সময় লড়াই করতে প্রস্তুত থেকেছি৷ কিন্তু এবার আমি আমার সব শক্তির সীমায় পৌঁছে গেছি৷’৩৯ বছর বয়স্ক এই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ জানালেন,‘আমি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে আন্তরিক আলাপকালেই জানিয়েছি আমার পদত্যাগের কথা৷ এটা আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক পদক্ষেপ৷’তিনি বলেন,‘আমাকে সব ধরণের সমর্থন এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও আমাকে বুঝতে পারার জন্য আমি চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকে ধন্যবাদ জানাই৷’
জার্মান চ্যান্সেলর আজ দুপুরের পর এই পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি এই সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করছি৷ কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি তাঁর ব্যক্তিগত৷ কে হবেন গুটেনব্যার্গের উত্তরসূরি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, এখন এ কথা বলার সঠিক সময় নয়৷ অবশ্য নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই অন্তর্বতী সময়ে গুটেনব্যার্গই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ দেখবেন৷
জার্মান মন্ত্রী পরিষদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব গুটেনব্যার্গ৷ ‘পিএইচডি সন্দর্ভের বিভিন্ন অংশ অন্যের লেখা থেকে নিয়ে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন'-গুটেনব্যার্গের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসে দিন দশেক আগে৷ তিনি তখন আফগানিস্তান সফরে ছিলেন৷ একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে সবিস্তারে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়৷ বলা হয়, ৪৭৫ পাতার এই গবেষণাপত্রের মধ্যে অন্তত ১০০ পাতাই তিনি অন্যের কাছ থেকে নকল করেছেন৷ তিনি তাদের নামও দেননি৷ পুরোটাই নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে ডক্টরেট লাভ করেছেন৷
প্রথমে এ বিষয়টি চেপে যেতে চাইলেও পরে সংসদে দেয়া বিবৃতিতে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন গুটেনব্যার্গ৷ তবে তিনি একে ‘চুরি' হিসাবে মনে করেননি৷ বলেছেন, তিনি যা করেছেন তা অজ্ঞতাবশত৷ অবশ্য বিরোধীরা অন্যের বিষয় নিজের বলে চালিয়ে দেবার এই কাহিনীকে একটি ইস্যু হিসাবেই দেখছে৷ আর এ জন্য তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিও করেন৷ গত সপ্তাহে এ বিষয়টি ছিল সংবাদ মাধ্যম আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে আলোচনার সর্বাগ্রে৷ পদত্যাগের জন্য দলের মধ্য থেকেও প্রচণ্ড রকমের চাপ আসতে থাকে গুটেনব্যার্গের উপর৷
প্রায় ছয় বছর আগে পিএইচডি লাভ করেন গুটেনব্যার্গ৷ ইউনিভার্সিট অফ বায়রয়েথ থেকে তিনি এই ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন৷ সে সময় প্রফেসর পেটার হেবারলে গুটেনব্যার্গের পিএইচডি সন্দর্ভ অনুমোদন করেন৷ ছিয়াত্তর বছর বয়স্ক এই প্রফেসর গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গুটেনব্যার্গের এই ‘কর্ম' বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে৷ তিনি বলেন,‘গবেষণা পত্রে নকলের ঘটনা আমার কাছে অবিশ্বাস্য, খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা কোন ভাবেই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷' তিনি বলেন, প্রথমে তিনি এই অভিযোগকে তেমন আমলে নেননি৷ কারণ, গুটেনব্যার্গ ছিলেন তার সবচেয়ে ভালো ছাত্রদের একজন৷ পরে তিনি দেখতে পেয়েছেন কাট-পেস্টের এই ঘটনা সত্য৷
সু গুটেনব্যার্গ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের বাভারীয় সহযোগী খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন সিএসইউ'র রাজনীতিক৷ পিএইচডি গবেষণাপত্র জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুটেনব্যার্গের পদত্যাগের পর নিজ দলের ভালো অবস্থান তৈরি এবং নিজের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখাটা এখন চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সামনে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ গুটেনব্যার্গের পদত্যাগের পর খানিক সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে চ্যান্সেলরের জন্য৷ কারণ, তিনটি রাজ্য সরকারের আসন্ন নির্বাচন এবং ইউরো জোন ক্রাইসিস সম্মেলনের আগে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রয়োজন রক্ষণশীলদের সমর্থন৷ মনে করা হয়, সদ্য পদত্যাগকারী এই মন্ত্রীর প্রতি সমর্থন রয়েছে দলের এই অংশের৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গিরো নয়গেবাওয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, গুটেনব্যার্গের পদত্যাগ ম্যার্কেলের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক