ট্রাসের নীতিতে যুক্তরাজ্যে আর্থিক বিশৃঙ্খলা
৬ অক্টোবর ২০২২রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে চলমান বিশৃঙ্খল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন৷ তবে নতুন করে সৃষ্ট সংকট হয়ত সব কিছুকে ছাড়িয়ে যাবে৷
লিজ ট্রাসের নতুন সরকার গত মাসের ২৩ তারিখে সংক্ষিপ্ত বাজেট ঘোষণা করে৷ দেশকে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে টেনে তোলার জন্য এটা ছিল তার সরকারের অন্যতম পদক্ষেপ, যেখানে নতুন অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কোয়ারতেং ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কর ছাড়ের ঘোষণা দেন৷ কাওয়াসি মোট ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ড কর ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেন৷
এই কর ছাড় ধনীদের বিভিন্নভাবে উপকৃত করবে বলে অভিযোগ ওঠে৷
সংক্ষিপ্ত এই বাজেটের অন্যতম বিতর্কিত দিক হল যুক্তরাজ্যের যেসব মানুষের বার্ষিক আয় এক লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের ওপরে তাদের আয়কর হ্রাস করা এবং ব্যাংকারদের বোনাসের উপর থেকে ক্যাপ তুলে নেয়া৷
তবে যে বিষয়টি বেশি বিতর্কিত মনে করা হচ্ছে তা হলো এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারকে নতুন করে ঋণ নিতে হবে৷ ফলে সরকারের ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা আর্থিক খাতের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে৷
এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য রেকর্ড হারে হ্রাস পায়৷
ট্রাসের সরকারের এসব নীতি যুক্তরাজ্যেকে বড় কোন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য ফেলে দিতে পারে এমন শংকায় এরইমধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছে৷ ঘোষণা দিয়েছে ৬৫ বিলিয়ন বন্ড কেনার কর্মসূচি৷
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নতুন সরকারের এই নীতির সমালোচনা করে৷ তাদের মতে, বড় একটি অর্থনীতির জন্যে পদক্ষেপগুলো অস্বাভাবিক৷ এসব নীতির ফলে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বৈষম্যও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশংকা সংস্থাটির৷
নতুন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করতে দেরি করেনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা৷ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷
এমন পরিস্থিতিতে লিজ ট্রাস ও কাওয়াসি কোয়ারতেং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ধনীদের করহার ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে তারা আর নাও আগাতে পারেন৷
অক্সফোর্ডের অর্থনীতিবিদ আন্দ্রে গুডউনের মতে, এমন সময়ে ধনীদের জন্য কর কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে যখন গরীবরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে লড়াই করছে৷ সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন করলেও আর্থিক খাতের কোন পরিবর্তন ঘটবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না৷ নিছক রাজনৈতিক সমস্যার প্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
কর ছাড় নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিতের পর ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ অন্যদিকে জাতীয় বীমার বাজারও অনেকটা পুনরুদ্ধার হয়েছে৷
তবে আর্থিক পদক্ষেপগুলোর প্রেক্ষিতে ট্রাস সরকারের উপর মানুষের আস্থা এরইমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
আর্থার সুলিভান/একেএ