ট্রাম্পের হঠকারিতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে
৭ ডিসেম্বর ২০১৭প্রায় পুরো বিশ্ব এই সিদ্ধান্ত না নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে দিয়েছিল৷ শুধু ফিলিস্তিন, আরব ও ইসলামি বিশ্ব নয়, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও পোপ ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছিল৷ ইসরায়েলি ও ইহুদিদের কয়েকটি সংগঠন, যেমন ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র হারেৎস ও জার্মানিতে ইহুদিদের কেন্দ্রীয় পরিষদও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে৷ কিন্তু কোনোকিছুতেই কাজ হয়নি৷ এত অনুরোধ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে থামাতে পারেনি৷
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার এসব সতর্কতা ও উদ্বেগকে পাশ কাটিয়ে ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি অঙ্গীকার পূরণ করতে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন৷ এমনকি তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমান সবার জন্য জেরুসালেম পবিত্র এক স্থান৷
ফিলিস্তিনিদের জন্য অপমান
এটি শুধু প্রতীকীভাবে গুরুতর একটি সিদ্ধান্ত নয়, কারণ, ফিলিস্তিনের বাইরে থাকা অনেক আরব ও মুসলিমরা এতে রাজনৈতিক পরাজয় ও অবমাননা হিসেবে দেখতে পারে৷ জেরুসালেমের কথা আসলে সবসময় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আবেগ তুঙ্গে উঠে যায়৷ এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে বহুবছর ধরে চলে আসা ঐকমত্য থেকে সরে এলো৷ ঐ ঐকমত্য অনুযায়ী, শান্তি প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে জেরুসালেমের অবস্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল৷ কারণ, ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুসালেমকে তাঁদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে৷ কিন্তু ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে পূর্ব জেরুসালেমকে জুড়ে নেয়ার বিষয়টি বৈধ বলে রায় দিল৷
ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ও আরব-ইসলামি বিশ্বকে তাঁদের দুর্বলতা ও ক্ষমতাহীনতার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলেন৷ এখন বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ, সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নসহ আরও অনেক হুমকির বিষয় ঘটবে৷ অযৌক্তিক ও খবুই বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্টই এর জন্য দায়ী থাকবেন৷ রাজনৈতিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্তের কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ খেয়ালিপনা দিয়ে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে খুবই বিপজ্জনকভাবে উসকে দিচ্ছেন৷
বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সত্ত্বেও ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন বলে মনে হয় না৷ যদি কখনও ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন রাষ্ট্র পায়, তাহলে তাদের নতুন করে একটি রাজধানী খুঁজতে হবে৷ শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে হয়ত আরও ছাড় দিতে হতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক এখন এতই ঘনিষ্ঠ যে, ফিলিস্তিনি ও আরবরা তার সামনে ক্ষমতাহীন৷ বিশেষ করে বর্তমানে আরব নেতারা প্রকাশ্যে তাঁদের ‘ফিলিস্তিনি ভাই'দের প্রতি সংহতি দেখালেও তাঁদের অগ্রাধিকার দেয়ার মতো আলাদা বিষয় রয়েছে৷ যেমন সৌদি আরব জেরুসালেমকে স্বীকৃতি না দিতে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছিল৷ কিন্তু সৌদি আরব নিজেই আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে ইরানকে পেছনে ফেলতে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নির্ভর করছে৷ এছাড়া কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সহযোগিতার সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে৷ কারণ, ইসরায়েলও ইরানকে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখে থাকে৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...