শুধু বিস্ময়কর নয়, যুগান্তকারী জয়
১০ নভেম্বর ২০১৬ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত ব্যাপক জয় জার্মানি তথা ইউরোপে বিমূঢ়তার সৃষ্টি করেছে৷ আন্তঃ-অতলান্তিক সম্পর্কের তাৎপর্য নিয়ে যতই বিবৃতি দেওয়া হোক না কেন, ইউরোপের আসল প্রতিক্রিয়া হল অবিশ্বাস, বিহ্বলতা আর শঙ্কা৷ তা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে বাস্তব সত্য হলো এই যে, ট্রাম্পকে কেউ চেনে না৷ স্বভাবতই নির্বাচনি প্রচার অভিযানে তাঁর বিভিন্ন লক্ষ্য, পরিকল্পনা বা ধারণা প্রকাশ পেয়েছে – সেই সঙ্গে তাঁর মোটা দাগের অভিব্যক্তি, তাঁর মর্দ্দানা ভাব, তাঁর নারীবিদ্বেষ৷ তবে ভোটের পর দেখা গেছে, তিনি স্বদেশের মানুষ ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্প্রীতি স্থাপনে আগ্রহী ও সচেষ্ট৷ এক কথায় বলতে গেলে: একটু অপেক্ষা করে দেখতে ক্ষতি কি?
ট্রাম্পের জয়ের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না
বার্লিন সহ পশ্চিমা বিশ্বের রাজধানীগুলোতে ট্রাম্পের জয় ছিল ‘‘ওয়ার্স্ট কেস সিনারিও''৷ এবং তিনি যে কাকে পররাষ্ট্র, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা বা পরিবেশনীতির ভার দেবেন, তাও অজ্ঞাত৷ কেননা রিপাবলিকান দলেও ট্রাম্প যাকে বলে কিনা ‘‘আউটসাইডার''৷ দলের পরিচিত চাঁইদের উপর তিনি নির্ভর করেন না৷ কাজেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বা বিশ্বস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ বা আলাপ-পরিচয় করার কোনো পথ বা পন্থা আপাতত খোলা নেই৷
এর ফলশ্রুতি ঘটবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী মুক্তবাণিজ্যের প্রশ্নে৷ পররাষ্ট্রনীতি আর নিরাপত্তানীতির ক্ষেত্রে রয়েছে ইরান বা ইসরায়েলের মতো সমস্যা; ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান; রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভঙ্গুর সম্পর্ক৷ বিশেষ করে প্রশ্ন উঠবে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ন্যাটো কি পূর্বাপর পশ্চিমের যৌথ প্রতিরক্ষা প্রণালী? নাকি ইউরোপীয়দের তাদের নিরাপত্তার জন্য আরো বেশি ব্যয় বহন করতে হবে, বলে ট্রাম্প মনে করেন?
সাবেক ওপরমহলের ভাগীদার নন
ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন একটি অজ্ঞাত উপাদান৷ নিউ ইয়র্কের কোটিপতি হওয়া সত্ত্বেও তিনি শহরের বিরুদ্ধে মফস্বলের জয়ের প্রতীক৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তিনি এযাবৎ প্রভাবশীল ও সুবিধাভোগী মহলের সদস্য নন৷ কাজেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সহজ হবে না৷
কিন্তু ট্রাম্পের জয়ে পশ্চিমের বিমূঢ়তার একটা ভালো দিকও আছে৷ এর ফলে মাথা পরিষ্কার করার সময় পাওয়া যাবে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে আসন নেওয়ার আগে প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে৷ ট্রাম্পের জয় একটা যুগান্তর সূচিত করতে পারে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, পশ্চিমের সঙ্গে অ্যামেরিকার চিরাচরিত সহযোগিতার এখানেই অন্ত ঘটবে৷ তবে ট্রাম্প বাঁধা পথে চলেন না বলে সেটা খুব আরামদায়ক নাও হতে পারে৷
আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷
আলেক্সান্ডার কুডাশেফ/এসি