ট্রাম্প-বাইডেনের উত্তপ্ত বিতর্কসভা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০নির্বাচনের বাকি আর এক মাস। তার আগে মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন। বিতর্কে উত্তাপ এতটাই ছড়ালো যে, তা প্রশমন করতে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হলো অ্যাঙ্করকে।
মঙ্গলবার প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। দেশের অর্থনীতি থেকে ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স, করোনা পরিস্থিতি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার আগুন-- সব বিষয়েই কথা বলেছেন তাঁরা। তবে বিতর্ক হয়েছে উত্তপ্ত। এতটাই যে এক সময় ট্রাম্পকে থামানোর জন্য 'শাট আপ' বলেছেন বাইডেন। আবার বাইডেনের মাস্ক পরা নিয়ে নির্লজ্জ রসিকতা করেছেন ট্রাম্প।
বিতর্কে বার বারই ঘুরে ফিরে এসেছে করোনা পরিস্থিতি এবং হেলথ কেয়ার সিস্টেমের প্রসঙ্গ। বাইডেন একাধিকবার দর্শকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে কড়া হাতে করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করবেন। এক সময় বাইডেন বলেছেন, আগামী চার বছরে কেমন অ্যামেরিকা তৈরি হবে তা স্থির করবেন সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে ট্রাম্পও করোনার ভ্যাকসিনের কথা ফের বলেছেন। অতি দ্রুত দেশের মানুষের হাতে ভ্যাকসিন পৌঁছে যাবে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। যদিও আগামী বছরের আগে ভ্যাকসিন মিলবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফলের আলোচনায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন দুই প্রার্থী। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়ছিল, তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন কি না। সরাসরি উত্তর না দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ হতে বহু দিন সময় লেগে যাবে। পোস্টাল ব্যালট নিয়ে ফের এ দিন সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিরোধীরা কারচুপি করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। বাইডেন অবশ্য জানিয়েছেন, ফলাফল যাই হোক না কেন, তিনি তা মেনে নেবেন। মানুষের রায়কে কোনো ভাবেই তিনি অগ্রাহ্য করবেন না।
ডেমোক্র্যাট ক্যালিফোর্নিয়া নিয়েও বিতর্কে সুর চড়িয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, প্রতি বছরই সেখানে দাবানল হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, সেখানকার প্রশাসন দাবানল ঠেকাতে ব্যর্থ। ডেমোক্র্যাটরা সফল ভাবে প্রশাসন চালাতে কতটা ব্যর্থ, তা বোঝাতে গিয়েই এ কথা বলেন ট্রাম্প। যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল ছড়িয়েছে। প্রশাসন তা রোধ করতে পারে, কিন্তু বন্ধ করা অসম্ভব। এর আগেও এ বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন ট্রাম্প। উষ্ণায়নের তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
তবে এ দিনের বিতর্ক সব চেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়ায় বর্ণবাদ প্রসঙ্গে। সাম্প্রতিক কালে অ্যামেরিকায় একের পর এক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ কাজ তিনি সমর্থন করেন না। এই একটি বাক্য বলেই পুরো বিষয়টিকে বামপন্থী এবং লিবারালদের দিকে ঠেকে দেন তিনি। বলেন, তাঁদের উস্কানিতেই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন নিয়েও কোনও মন্তব্য করেননি ট্রাম্প।
বাইডেনঅবশ্য ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, নতুন করে অ্যামেরিকায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দ্রুত তা শেষ করা দরকার। পুলিশ প্রশাসনের বাজেট কমানোর পক্ষে তিনি নন বলে জানিয়েছেন বাইডেন। তবে পুলিশ বিভাগের সংস্কার যে প্রয়োজন তা মেনে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কমিউনিটি পুলিশ তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন কমিউনিটির সমস্যার কথা যাঁরা বুঝতে পারবেন।
এ দিনের বিতর্কে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের প্রশ্নটিও। ট্রাম্প তাঁর পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলেছেন। বাইডেন এই সময়ে বিচারপতি নিয়োগের বিরুদ্ধে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন।
এর পর আবার বিতর্কে যোগ দেবেন ট্রাম্প এবং বাইডেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই বিতর্কে সুর আরও চড়বে। বস্তুত, প্রথম দিনের বিতর্কই অ্যামেরিকার এ বারের নির্বাচনের সুর বেঁধে দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)