পরিবেশ
১৬ জুন ২০১২উচ্চ বেকারত্ব দূরীকরণ এবং বাণিজ্য ভারসাম্য কমানো হবে বলে অ্যামেরিকানদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বারাক ওবামা৷ সে স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি লড়াইও করছেন বটে৷ কিন্তু এ লড়াইয়ের ফলাফল খুব একটা সুখকর নয় বলেই তথ্য দিচ্ছে পরিসংখ্যানগুলো৷ অ্যামেরিকার মতোই, ইউরোপের অর্থনীতিও আজ টলটলায়মান অবস্থায় আছে বলে বার বার সতর্ক বাণী দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা৷
ইউরোপের অর্থনীতিকে বিরাট এক ক্ষতের মতো আঁকড়ে ধরেছে গ্রিসের অর্থনৈতিক অস্থিরতা৷ এর সাথে আবার আছে স্পেন, ইটালি আর পর্তুগালের অর্থ-সংকট৷ সব মিলিয়ে সারা ইউরোপই আজ শঙ্কিত৷ এমনকি ‘ইউরো' ব্যাবস্থা থাকবে কী-না সন্দেহ তৈরি হয়েছে তা নিয়েও৷ আর যদি এ সন্দেহ সত্যি হয়, তাহলে ইউরোপকে সমন্বিত করার যে আকাঙ্ক্ষায় তৈরি হয়েছিলে ‘ইউরো' ব্যাবস্থা, সেই স্বপ্নও ব্যার্থ হয়ে যাবে৷
দুনিয়ার এই অর্থনৈতিক সংকটকালে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ‘জার্মান এডভাইসরি কাউন্সিল অন গ্লোবাল চেঞ্জ' বলছে, অর্থনীতি হতে হবে ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি'৷ অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব৷ নইলে উন্নয়ন হবে না৷
একই কথা বলেছেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ লর্ড স্টের্ন৷ তাঁর মতে, ‘‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে হবে পরিবেশ বান্ধব৷'' অর্থাৎ ‘ইকো-সিস্টেম'-এর ক্ষতি করে যে ‘প্রবৃদ্ধি' আসে তা আসলে ‘টেকসই উন্নয়ন' নয়৷
টেকসই উন্নয়ন কীভাবে হতে পারে, ধরিত্রীর পরিবেশকে কেমন করে সুরক্ষিত করা যেতে পারে এবং ইকো-সিস্টেম'এর ক্ষতি না করে কীভাবে অর্থনৈতিক মুক্তি আনা সম্ভব - এই বিষয়গুলোকেই মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে নিয়েছে এবারের রিও+২০ সম্মেলন৷
প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমাগত উত্তোলন, ক্রমবর্ধমান হারে মানুষের ভোগের পরিমাণ বাড়ানো এবং প্রকৃতির ভারসাম্য ও ইকো-সিস্টেম'কে বিনষ্ট করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর প্রক্রিয়াটিকে আজ প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুনিয়া এখন এক ‘দ্বিমুখী সংকট'-এর মুখোমুখি৷ কারণ একদিকে অর্থনৈতিক অস্থিরতা৷ অন্যদিকে, এই অস্থির অবস্থাকে সামাল দিতে প্রতিটি দেশই আরো বেশি করে জোর দিচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে৷ আর প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশায় প্রকৃতিকে বিনষ্ট করা হচ্ছে যারপরনাই ভাবে৷ ফলে, অর্থনীতি আপাতভাবে একটু ভালো হলেও অনেক বেশি পরিমাণে নষ্ট হচ্ছে ইকো-সিস্টেম৷ তাই একদিকের উন্নয়ন অন্যদিকে কার্যকারিতা হারাচ্ছে৷
এই অবস্থায়, টেকসই উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক স্থিতি অর্জনের জন্য একমাত্র পরিবেশ-বান্ধব নীতি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের মতে, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে ও ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে৷ নবায়নযোগ্য শক্তির উপর জোর দিতে হবে৷ আর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে নিজেদের অশেষ ভোগের বাসনা৷ যদি তা না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে আসবে আরো কঠিন দিন৷
প্রতিবেদন: ডির্ক মেসনার / মিরজাম গেরকে / আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ