টিকা পরিকল্পনায় ঘাটতি কোথায়?
১০ আগস্ট ২০২১গণটিকা শুরুর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন,৭ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট দেশের এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে। তার সেই পরিকল্পনা সফল করতে প্রতিদিন প্রায় ১৩ লাখ ডোজ টিকা দিতে হতো। শেষ পর্যন্ত ৭ আগস্ট থেকে গণটিকা দেয়া শুরু হয়েছে। চলবে ৬ দিন, ১২ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ে দেয়া হবে মোট ৩২ লাখ ডোজ। প্রতি কেন্দ্রে প্রতিদিনের জন্য বরাদ্দ ৩০০ ডোজ। গণটিকা শুরুর প্রথম দিন থেকেই কেন্দ্রে অনেক মানুষ টিকার জন্য ভিড় করছেন। কিন্তু অনেকেই টিকা পাচ্ছেন না টিকা স্বল্পতার কারণে। এ নিয়ে বিক্ষোভ ও মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে।
১৮ বছরের বেশি বয়স এমন ১৩ কোটি মানুষকে সরকার টিকা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই টিকা কত দিনে দেয়া হবে তার কোনো রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এই ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দিতে মোট ২৬ কোটি ডোজ টিকা লাগবে।
বাংলাদশে প্রথম ভারত থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আসে ২১ জানুয়ারি আর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাপক ভিত্তিতে টিকা দেয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে মোট দুই কোটি ৭৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯২০ ডোজ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিকা এসেছে। তার মধ্যে সর্বশেষ মঙ্গলবার চীন থেকে এসেছে ১৭ লাখ ডোজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন এক কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৩০ জন আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৩২ জন। সব মিলিয়ে মোট এক কোটি ৯১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। সেই হিসাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারের হাতে আছে ৮১ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৮ ডোজ। প্রতিজনকে দুই ডোজ দেয়া হলে ৪০ লাখের মতো মানুষকে দেয়ার মতো টিকা আছে।
তবে টিকা শুধু নতুনদের দিলেই হবেনা। অনেক মানুষ এখন দ্বিতীয় ডোজের টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রথম ডোজ পেলেও দ্বিতীয় ডোজ পাননি এরকম মানুষের সংখ্যা ৯৭ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৮ জন।
গণটিকার বাইরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকার নিবন্ধন করেছেন দুই কোটি ৬৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৬ জন।
স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত ২৪ ঘন্টায় সব মিলিয়ে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে চার লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ জনকে। এই গতিতে টিকা দেয়া হলে যাদের দেয়া হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে সাড়ে ১১ কোটি মানুষকে টিকা দিতে ৫৭৫ দিন বা ১৯ মাস সময় লাগবে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাইপলাইনে অনেক টিকা আছে।
তিনি শনিবার বলেছেন, এই আগস্টে ৫৪ লাখ টিকা আসবে। তারমধ্যে কোভ্যাক্স দেবে ৩৪ লাখ এবং চীন থেকে ২০ লাখ টিকা আসবে। তিনি আরো জানান, চীন থেকে মোট সাড়ে সাত কোটি ডোজ টিকা আসবে। চীনের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকার চুক্তি হয়েছে, যা আসতে শুরু করেছে । আরো ছয় কোটি ডোজের চুক্তি করা হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, "আমাদের এক দিনে ৩০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার সক্ষমতা আছে। এটা প্রমাণিত। টিকা নিতেও মানুষ আগ্রহী । কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত টিকা নেই। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে ২১ কোটি ডোজ টিকা আসবে। তার রোডম্যাপ কিন্তু স্পষ্ট নয়। আর ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে সবাইকে টিকা দেয়া দরকার। ১৩ কোটি মানুষকে কতদিনের মধ্যে টিকা দেয়া হবে তা-ও বলা হচ্ছে না। যদি মার্চের মধ্যে সবাইকে টিকা দিতে হয়, তাহলে প্রতিমাসে দুই কোটি ডোজের বেশি টিকা দেয়া প্রয়োজন। সেই কূটনৈতিক তৎপরতা আমাদের কছে যথার্থ মনে হচ্ছে না।”
তিনি আরো বলেন ,"এর আগে জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকা আনার কথা বলা হয়েছিল। এই সিঙ্গেল ডোজের টিকা সাত কোটি মানুষকে দেয় যাবে। কিন্তু তার কোনো খবর আমরা জানি না। স্পুটনিক টিকারও কোনো খোঁজ নেই।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(এমআইএস) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, "আমরা তো চাই দেশের সব মানুষকে টিকা দিতে । সেই চেষ্টায় আমাদের ঘাটতি নেই। আমরা আশা করছি, প্রয়োজনীয় টিকা পেয়ে যাবো। তবে টিকা কত পাইপ লাইনে আছে তার সঠিক তথ্য আছে ইপিআই-এর কাছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমরা গণটিকা প্রতি কেন্দ্রে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করি। কিন্তু মানুষ আসছে হাজার হাজার। আমরা কী করবো? তাই এখন যারা এসে পাচ্ছেন না, তাদের তালিকাভূক্ত করে রাখতে বলেছি। পরে টিকা এলে তারাও পাবেন।”
১৩ কোটি মানুষকে কতদিনের মধ্যে টিকা দেয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন," আমরা যেভাবে টিকা পাই, সেভাবে পরিকল্পনা করি। দিতে থাকি। বাকি বিষয়গুলো জানা নেই।”