টিকা নিয়ে রাজনীতি, কার লাভ?
২৮ জানুয়ারি ২০২১আর এর সাথে এই টিকা নিয়ে রাজনীতিও তীব্র হচ্ছে৷ এই রাজনীতিতে কার লাভ, কার ক্ষতি?
সর্বশেষ বিতর্কের জন্ম দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ তিনি দাবি করেন প্রথম করোনার টিকা নিতে হবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর৷ এর আগে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা টিকা কারা আগে পাবেন তা নিয়ে ভুয়া একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়ে৷ তাতে মন্ত্রী-এমপিদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে সেটা ভাইরাল করা হয়৷ তখনও ওই ভুয়া তালিকা ধরে রাজনীতির মাঠ বেশ গরম হয়েছে৷ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনা টিকা কেন নেয়া হলো সেটা নিয়েও রাজনীতি আছে৷ এই টিকা অক্সফোর্ডেরহলেও এটাকে ভারতীয় ভ্যাকসিন বলেও চলছে নানা কথা৷
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেই দিয়েছেন যে ভারতের ভ্যাকসিনে তাদের আস্থা নাই৷ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে আগে ভ্যাকসিন দেয়ার নেয়ার আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ তার ওই আহ্বানের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বিএনপিকে আগে টিকা দেয়ার প্রস্তাব করেন৷
আর ডা, জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেসরকারি পর্যায়ে টিকা দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘‘বুড়িগঙ্গার পানি বা মুরগির টিকা দিয়ে দেবে কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নাই৷''
বৃহস্পতিবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতে নরেন্দ্র মোদী এখনও ভ্যাকসিন নেননি৷ তবে আমি বলেছি আমাদের এখানে প্রধানন্ত্রীরই আগে ভ্যাকসিন নেয়া উচিত৷ তাহলে লোকের আস্থা বাড়ত৷ আর আমার নাম যখন আসবে তখনই আমি ভ্যাকসিন নেব৷ তবে আমার দাবি হলো যাদের ভ্যাকসিন আগে প্রয়োজন তাদেরই আগে দেওয়া উচিত৷''
আপনি সবার আগে ভ্যাকসিন নিলেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ডাকতে হবে তো৷ আমি তো চাইলেই আগে নিতে পারব না৷''
ডা.জাফরুল্লাহর দাবি, এই সরকার ব্যবসায়ীদের সরকার তাই সেরামের টিকা বেক্সিমকোর মাধ্যমে এনেছে৷ তারা কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই ফাও কত টাকা নিয়ে গেল৷ দামও বেশি নিচ্ছে৷ বেক্সিমকো সেরামের এখানকার প্রতিনিধি হলেও সরকার চাইলে এসেনসিয়াল ড্রাগস-এর মাধ্যমে আনতে পারত বলে তিনি মনে করেন৷
অবশ্য যারা ভারতের টিকা বলে কথা ছড়াচ্ছে তাদের সাথে নাই তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফের্ডের টিকা উৎপাদন করছে৷ আমার ওষুধও তো অনেক দেশ ব্যবহার করছে৷''
বিএমএর মহাসচিব এবং সরকার সমর্থক চিকিৎসক নেতা অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী মনে করেন ভ্যাকসিন নিয়ে এই ‘রাজনীতিতে' সাধারণ মানুষের ক্ষতি৷ তিনি মহামারি নিয়ে রাজনীতি করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন৷ তার মতে, ‘‘সাধারণ মানুষের উচিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কথায় আস্থা রাখা৷ এর বাইরে এই টিকা নিয়ে যারা রাজনৈতিক কথা বলছেন তাদের কথায় গুরুত্ব দেয়ার দরকার নাই৷''
তিনি বলেন, ‘‘সারা পৃথিবীর মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছে৷ বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রকম ভ্যাকসিন তৈরি করছে৷ তবে পরীক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত ডাব্লিউএইচও কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেবে না৷ এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে, মানুষ ভ্যাকসিন নেবেনা, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গেলে সেতু ভেঙে পড়বে, এইসব কথাবার্তা রাজনৈতিক৷ এতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভালো হবে না৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা না নেয়ার কোনো বিকল্প আমাদের ছিল না৷ এটা তো ভারতের টিকা না৷ অক্সফোর্ডের টিকা তাদের দেওয়া ফর্মূলায় সেরাম তৈরি করছে৷''
বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব-এর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, ‘‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা নিয়ে কোনো বিতর্ক নাই৷ তারা তো অক্সফোর্ডের টিকা উৎপাদন করছে৷ কিন্তু মাঝখানে ভারতের টিকা কোভেক্স-এর ট্রায়ালের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের ওপর৷ এটা মানুষকে কনফিউজড করেছে৷ তারা মনে করেছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আসছে না ভারতের কোভেক্স আসছে৷ পরে অবশ্য পরিস্কার হয়েছে৷ ক্লারিফিকেশন দেয়া তো সরকারের দায়িত্ব৷''
তিনি মনে করেন মানুষের মধ্যে সন্দেহ দূর করে আস্থা তৈরির জন্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যদের আগে টিকা নেওয়া উচিত৷ প্রধানমন্ত্রী কোলে নিয়ে একটি শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়াচ্ছেন, টিকা খাওয়াতে তাকে দরকার নাই৷ দরকার আস্থা সৃষ্টির জন্য৷