ঝুলছে কাদের মোল্লার ফাঁসি
১১ ডিসেম্বর ২০১৩মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মঙ্গলবার মধ্যরাতে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার কয়েক ঘণ্টা আগে তা স্থগিত করে দেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ৷ কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনে তিনি এই স্থগিতাদেশ দেন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত৷ তবে তার আগেই বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়৷ কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রিভিউ আবেদন করার কথা বলে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিতের আবেদন জানান৷ আর বলেন, শুনানির প্রস্তুতির জন্য তার দুই দিন সময় লাগবে৷
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘এই মামলায় রিভিউ আবেদনের কোন সুযোগ নেই৷'' তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে না জানিয়েই একতরফাভাবে মঙ্গলবার রাতে আসামি পক্ষ চেম্বার জজের কাছে গিয়ে স্থগিতাদেশ আনেন৷'' আদালত এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দুপুর পর্যন্ত শুনানি অব্যাহত রাখেন৷ আসামি পক্ষের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে দুপরে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রিভিউয়ের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি মুলতুবি করেন৷ আশা করা যায় বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হবে৷
শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷ প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি এস কে সিনহা, আবদুল ওয়াহাব মিয়া, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং এই এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই শুনানি করছে৷
এদিকে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুধবার চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বিচারের মানদণ্ড অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া যায় না৷'' ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যও কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে৷ তারা অবশ্য দণ্ড হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে৷
অন্যদিকে কাদের মোল্লার ফাঁসি বাতিলের দাবিতে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় মঙ্গলবার রাত থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে পাঁচ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ আগুন দেয়া হয়েছে আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার মামলার পাঁচ বিচারপতির একজন এস কে সিনহার মৌলভীবাজারের গ্রামের বাড়িতে৷ তবে ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না৷
রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া, চট্টগ্রাম, নাটোর, গাইবন্ধা, কুষ্টিয়া ও খুলনায় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ এসব এলাকায় পুলিশ ও পুলিশের গাড়ির ওপরে হামলা, সড়ক অবরোধ, যানবাহনে আগুন এবং ককটেল ফাটানো হয়েছে৷ ঢাকায়ও পুলিশের গাড়িতে হামলা হয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর৷'' এর ফলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হবে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে৷
অন্যদিকে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা আবারও অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন৷ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘‘রাতের আধারে ফাঁসির দণ্ড কার্যকারিতা স্থগিতের ঘটনা তারা স্বাভাবিক মনে করছেন না৷ তাই দণ্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না৷''
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কাদের মোল্লাকে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর ফাঁসির দণ্ড দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ৷ গত ৫ই ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়৷ ৭ই ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে৷