জেলে অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী-প্রশাসকরা কী করছেন?
২৬ অক্টোবর ২০২২কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে এখন নক্ষত্র সমাবেশ। একের পর এক হাই প্রোফাইল বন্দির ঠিকানা এখন প্রেসিডেন্সি জেলের পহেলা বাইশ ওয়ার্ড। কারণ এখানেই আছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আছেন সাবেক প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী মানিক ভট্টাচার্য। টিভি৯ জানাচ্ছে, এছাড়া বিভিন্ন সেলে আছেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক সাহারা। সকলেই শিক্ষা-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সাবেক প্রশাসক।
এই সাবেক মন্ত্রী ও প্রশাসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষকের চাকরি দিয়েছেন। এখন সিবিআই ও ইডি-র তদন্তে তাদের নাম উঠে এসেছে। আদালতের রায়ে তারা জেলবন্দি। ফলে পহেলা বাইশ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এখন আলোচনার শেষ নেই।
মানিককে আমল নয় পার্থের
এই অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে শেষে এসেছেন মানিক ভট্টাচার্য। তিনি যখন জেলের অফিসে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেলের পাশ দিয়ে যেতে হচ্ছিল। সূত্র জানাচ্ছে, যাওয়ার পথে তিনি বলেন, পার্থদা, কেমন আছেন? পার্থ কোনো জবাব দেননি। বরং মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চলে যান। মানিককে নিয়ে এগিয়ে যান জেলকর্মীরা।
চুপচাপ পার্থ
পার্থ জেলে একাই থাকতে পছন্দ করছেন। ১৫ অগাস্ট পতাকা উত্তোলনের সময়ও তিনি যাননি। জেলে ঋষি অরবিন্দকে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেই সেল দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। সেটাও হয়নি। একসময় যাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত কথা বলতেন, তাদের সঙ্গেও কোনো কথা বলছেন না।
মানিকের কাহিনি
মানিককে মঙ্গলবার জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে তিনি ছিলেন সিবিআই হেফাজতে। মঙ্গলবার মানিক জেলের মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে তাতে শোন। খেয়েছেন রুটি, ডাল ও তরকারি।
এই মানিকের সঙ্গে পার্থের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ বিনিময় হতো বলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলির দাবি। মানিক কাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, সেরকম মেসেজও পার্থ পেয়েছিলেন এবং তিনি তা মানিককেই ফরোয়ার্ড করতেন। এছাড়াও দুই জনের মধ্যে মেসেজ বিনিময় হয়েছিল।
বিধানসভায় পার্থ ও মানিক মাঝেমধ্যে দরজা বন্ধ করে বৈঠক করতেন বলেও অভিযোগ। কিন্তু তার সঙ্গেও কথা বললেন না পার্থ।
মানিকের বিরুদ্ধে ইডির অভিযোগ
মঙ্গলবার ইডির আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন, মানিকের পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গেছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থায় ওই টাকা রাখা ছিল। মানিকের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন কোটি টাকা রাখা ছিল।
মানিকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অন্য কারোর যৌথ অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। সেই সব অ্যাকাউন্টের অন্য সদস্য এক বছর বা তার পরে মারা যান। কিন্তু অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়।
আদালতে এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রীর সঙ্গে জনৈত মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্ট ছিল। তারপর মাস কয়েক পরেই মৃত্যুঞ্জয় মারা যান। অথচ অ্যাকাউন্ট সচল ছিল এবং কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। মানিকের ছেলের একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে আড়াই কোটির বেশি টাকা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ। সেখানে রাজ্যের বেসরকারি বিএড কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে বলে তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের দাবি।
জিএইচ/এসজি (টিভি৯, আনন্দবাজার, উত্তরবঙ্গ সংবাদ)