‘জুয়াড়ির' সঙ্গে সাকিবের ‘গোপন' যোগাযোগ
২৯ অক্টোবর ২০১৯মঙ্গলবার তিনটি অভিযোগে সাকিবকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি৷ এর মধ্যে অভিযোগ স্বীকার করায় শাস্তি এক বছর স্থগিত করা হয়েছে৷ ফলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের আগে কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তিনি৷
সাকিব ও আগরওয়াল
দীপক আগরওয়াল নামে আইসিসির সন্দেহভাজন জুয়াড়ি তালিকায় থাকা একজনের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান৷ ২০১৭ এর নভেম্বর থেকে প্রায় এক বছর ধরে আগরওয়াল যোগাযোগ করেছেন তার সঙ্গে, জানতে চেয়েছেন বিভিন্ন তথ্য৷ আইসিসির তদন্তে এর সবই স্বীকার করে নিয়েছেন সাকিব৷ তবে আগরওয়ালকে কোনো তথ্য দেয়া বা তার কাছ থেকে কোনো অর্থ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি৷
এই দীপক আগরওয়াল ক্রিকেটে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে আইসিসির সন্দেহভাজন তালিকায় রয়েছেন৷ আইসিসির বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে সংস্থার ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য না জানালে যে শাস্তি হতে পারে, এটা সাকিব জানতেন৷
অবশ্য প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করার পরও সাকিব কেনো পুরো বিষয়টি গোপন করেছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আইসিসি জানায়নি৷
যা যা স্বীকার করেছেন সাকিব
১) ২০১৭ সালের নভেম্বরে সাকিব বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ডায়নামাইটসে ছিলেন৷ ৪ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়৷ এসময় সাকিবের পরিচিত এক ব্যক্তি যে আগরওয়ালকে তার নম্বর দেন, সেটা সাকিব জানতেন৷ সেই ব্যক্তির কাছে আগরওয়াল বিপিএল এর আরো কিছু খেলোয়াড়ের নম্বরও চেয়েছিলেন৷
- তবে সাকিবের সেই ‘পরিচিত' ব্যক্তির কোনো পরিচয় দেয়নি আইসিসি৷
২) ২০১৭ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি আগরওয়াল হোয়াটস অ্যাপে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ সাকিব এসময় আগরওয়ালের সঙ্গে বেশ কিছু ম্যাসেজ চালাচালি করেন৷ আগরওয়াল এক পর্যায়ে সাকিবের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন৷
তবে শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে দেখা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি আইসিসি৷
৩) ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ দলে ছিলেন সাকিব৷ এই সিরিজ চলাকালীন হোয়াটস অ্যাপে আরো বেশ কিছু কথাবার্তা হয় সাকিব ও আগরওয়ালের মধ্যে৷ ১৯ জানুয়ারির ম্যান অব দ্য ম্যাচ সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়ে ম্যাসেজ পাঠান আগরওয়াল৷ এরপরই ম্যাসেজ পাঠান আগরওয়াল, ‘‘আমরা কী এবারই কাজ করবো, নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো?''
এখানে ‘কাজ' বলতে আগরওয়ালকে ভেতরের তথ্য জানানোর কথাই বলা হয়েছে৷ তবে সাকিব এসব কথোপকথন বিষয়ে আকসু বা অন্য কোনো দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে কিছুই জানাননি৷
আগরওয়ালের এমন ‘প্রস্তাবের' পরিপ্রেক্ষিতে সাকিবের উত্তর কী ছিল, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি আইসিসি৷
৪) ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি আগরওয়াল আবার সাকিবকে হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ পাঠান৷ এবার ম্যাসেজে লেখা ছিল, ‘‘ব্রো, এই সিরিজে কিছু মিলবে?'' সাকিব আইসিসিকে নিশ্চিত করেছেন, ত্রিদেশীয় সিরিজের তথ্য়ই জানতে চেয়েছিলেন আগরওয়াল৷ এটিও আইসিসিকে জানাননি সাকিব৷
এক্ষেত্রেও সাকিব আগরওয়ালকে কোনো জবাব দিয়েছিলেন কিনা, তা জানায়নি আইসিসি৷
৫) ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল আইপিএলে সানরাইজারস হায়দারাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেন সাকিব৷ সেই ম্যাচ শুরুর আগে সাকিবকে আবার হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ পাঠান আগরওয়াল৷ এবার সেদিনের ম্যাচে একজন খেলোয়াড় খেলবেন কিনা, সে তথ্য জানতে চান আগরওয়াল৷
আগরওয়াল সে সময় ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট বিষয়ে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং এক পর্যায়ে সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত জানতে চান৷ এই কথোপকথনের এক পর্যায়ে সাকিব জানান, তিনি আগে আগরওয়ালের সঙ্গে ‘দেখা করতে' চান৷
২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল হওয়া এসব কথোপকথনের মধ্যে বেশ কিছু ম্যাসেজ ডিলিট করে দেন সাকিব৷ আইসিসির জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানিয়েছেন, এসব ম্যাসেজে ‘ভেতরের তথ্য' চেয়েছিলেন আগরওয়াল৷
কথোপকথনে সাকিবের দিক থেকে কেমন জবাব দেয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি আইসিসি৷
সাকিব আইসিসিকে জানিয়েছেন, এসব কথোপকথন থেকে আগরওয়ালকে তার কাছে ‘ডজি‘ বলে মনে হয়েছে এবং এক পর্যায়ে তার কাছে মনে হয়েছে আগরওয়াল ‘জুয়াড়ি' হতে পারেন৷ আইসিসির কাছে সাকিব দাবি করেছেন, তিনি কখনই আগরওয়ালের দেয়া কোনো ‘প্রস্তাবে' সাড়া দেননি৷ যেসব তথ্য আগরওয়াল চেয়েছিলেন সেগুলো কোনোটিই তিনি সরবরাহ করেননি এবং অর্থ বা অন্য কোনো উপহারও নেননি৷
আইসিসি তদন্ত শুরুর করার আগে এই সমস্ত আলোচনার কিছুই তিনি কখনও নিজে থেকে আকসু বা অন্য কোনো দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে জানাননি৷
এডিকে/কেএম