জিপলাইনে চড়ে পাহাড় থেকে হ্রদে
৩ মার্চ ২০১৭স্নায়ু শক্ত না হলে বস্তুটিতে না চড়াই ভালো! ওয়েলস-এর লিন ডিনাস হ্রদের ওপর দিয়ে ১,৭৫০ মিটার লম্বা ইস্পাতের তার ধরে বিনা ব্রেকে জিপলাইনিং৷ এটি হলো ইউরোপের দীর্ঘতম জিপলাইনগুলির মধ্যে একটি৷ প্রায় ভারশূন্য অবস্থায় ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে উড়ে যাওয়া৷
প্রথমে একটি ছোট, মোট ৫০০ মিটার লম্বা জিপলাইনে জিপলাইনিং-এর কায়দাটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়৷ শুধুমাত্র দু'পাশে বাতাসে হাত বাড়িয়ে গতিবেগ কিছুটা কমানো সম্ভব৷ যার ওজন বেশি, সে স্বভাবতই আরো তাড়াতাড়ি নীচে পৌঁছে যাবে৷
জিপলাইন শুরু হচ্ছে একটি পাহাড়ের মাথায়৷ জিপলাইনের উদ্যোক্তা শন টেইলর অংশগ্রহণকারীদের সেখান অবধি নিয়ে যান৷ জিপলাইনটা একটি সাবেক স্লেট পাথরের খনির একাংশে বসানো হয়েছে, যেটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে চালু৷ স্টার্টিং পয়েন্টে পৌঁছানোর আগে ডিলান হিউজ ওয়েলস-এর লোকগীতি গেয়ে সকলকে সাহস দেন৷
বিশেষজ্ঞরা মাসের পর মাস ধরে নানা ধরনের টেস্ট আর কম্পিউটার অ্যানালিসিস করে দেখেছেন বটে যে, জিপলাইনটি নিরাপদ – কিন্তু আবহাওয়া সবসময়েই অনিশ্চিত থাকে৷ সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, জোর বাতাস থাকলে জিপলাইনে যিনি স্লাইড করছেন, তিনি ফিনিশিং পয়েন্টে পৌঁছাবেন এমন গতিবেগ নিয়ে যে, ব্রেক করতে গিয়ে তিনি চোট পেতে পারেন৷
স্টার্ট টু ফিনিশ
জিপ ওয়ার্ল্ড স্নোডনিয়া-র সিইও শন টেইলর স্টার্টের আগে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেন: ‘‘নিঃশ্বাস নেওয়া চাই৷ এমন লোক আছেন, যারা জিপলাইনে চড়ে নীচে নামেন কোনো দম না নিয়ে৷ কিন্তু জিপলাইনে স্পিড উঠবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ মাইল৷ আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে, যিনি চড়ছেন, তিনি কোনো অস্বস্তি বোধ করবেন না – কেননা তিনি যেটা করতে চলেছেন, সেটা খুবই নাটকীয়৷''
হঠাৎ বাতাস আরো জোরালো হল৷ হিউজ-কে এবার অপেক্ষা করতে হবে৷ বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটারের বেশি হলে স্টার্ট করা সম্ভব নয়৷
দুর্ধর্ষ গতির উড়াল৷ খাড়া স্টার্টের পরে স্লেট পাথরের চুড়োগুলোর উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে নেমে যাওয়া৷ কোনো কোনো সময় চুড়োগুলো থেকে কেবল-এর দূরত্ব মাত্র কয়েক মিটার৷ হ্রদের জলের ওপর উড়াল কিছুটা সু্স্থির ও শান্ত৷ ৫৫ সেকেন্ডের মধ্যেই উড়াল শেষ৷ উচ্চতার হিসেবে এই ৫৫ সেকেন্ডে ডিলান হিউজ নেমেছেন মোট ৪০০ মিটার৷
ডিলান হিউজ বললেন, ‘‘অসাধারণ!....উপর থেকে নামছি স্লেট পাথরগুলোর ওপর দিয়ে৷ তারপর খাড়াইটা পার হলেই সামনে এক বিস্তার, ফ্যান্টাস্টিক, দৃশ্যটা খুলে যায়, মনে হয় যেন উড়ছি....দুনিয়াটা হাতের মুঠোয়!''
ইউরোপের দীর্ঘতম জিপলাইনে চড়তে প্রতিবার লাগে ৫০ ইউরোর বেশি৷ তা সত্ত্বেও জিপলাইন অপারেটররা জানেন, যে একবার জিপলাইনে চড়েছে, সে চিরকাল জিপলাইনিং করতে চাইবে৷