জার্মানির ‘পুনর্মিলনের চ্যান্সেলর’ হেলমুট কোল (১৯৩০-২০১৭)
‘বিংশ শতাব্দীর বিসমার্ক’ হিসেবে গণ্য হতেন যুদ্ধোত্তর জার্মানির প্রবাদপ্রতিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হেলমুট কোল৷প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল পরলোক ৮৭ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন৷
আর কেউ এতদিন চ্যান্সেলর থাকেননি
১৯৮২ সালের ১লা অক্টোবর হেলমুট কোল প্রথমবার চ্যান্সেলর হন৷ ১৬ বছর ধরে এই পদে অধিষ্টিত ছিলেন, অন্য যে কোনো চ্যান্সেলরের চেয়ে বেশি৷ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরম মুহূর্ত ছিল বার্লিন প্রাকারের পতন এবং জার্মানির পুনর্মিলনে৷ ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে তাঁর দল ব্যাপকভাবে হারার পর কোল সিডিইউ সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেন - যে পদ তিনি ২৫ বছর ধরে অলঙ্কৃত করেছেন৷
আডেনাউয়ার-এর আমলে রাজনৈতিক উত্থান
১৯৪৭ সালে হেলমুট কোল সিডিইউ-তে যোগদান করেন৷ তিনি তাঁর জন্মের শহর লুডভিগসহাফেনে ‘যুব ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন৷ ১৯৫০ সালে আইন পড়তে শুরু করেন, পরে তার সঙ্গে যোগ হয় ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান৷ দলে খুব তাড়াতাড়ি পদোন্নতি ঘটে কোল-এর৷ ১৯৬৬ সাল থেকেই তিনি সিডিইউ দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য৷
তরুণ মুখ্যমন্ত্রী
১৯৬৬ সালে হেলমুট কোল রাইনল্যান্ড-প্যালেটিনেট রাজ্যে সিডিইউ দলের সভাপতি হন, এবং তার তিন বছর পরে, ১৯৬৯ সালের মে মাসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার-এর স্থলাভিষিক্ত হন৷ দু’বছর পরে আরেক সাফল্য: হেলমুট কোল-এর নেতৃত্বে সিডিইউ দল ১৯৭১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷
সুখি পরিবার
বিশেষ করে ছুটি কাটানোর ফটোগুলিতে হেলমুট কোল একটি সুখি পরিবারের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বাস্তবে তাঁর স্ত্রী হানেলোরে এবং দুই পুত্র ভাল্টার ও পেটার বাবা বাড়িতে না থেকে কাজে থাকায় কষ্ট পেয়েছেন৷ ভাল্টার কোল পরে সেই স্মৃতিচারণ করেন৷
পঁচিশ বছর ধরে সিডিইউ প্রধান
১৯৭৩ সালের জুন মাসে হেলমুট কোল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের সভাপতি নির্বাচিত হন৷ ২৫ বছর ধরে তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ প্রথমবারের সেই নির্বাচন ছিল বন শহরে, একটি বিশেষ দলীয় সম্মেলনে৷ কোল-এর অভিব্যক্তিতে বিজয়োল্লাস৷
জীবন যেরকম
১৯৮২ সালে এসপিডি-এফডিপি সরকারি জোটে ভাঙণ ধরার পর মুক্ত গণতন্ত্রীরা ঝোঁকেন খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের দিকে৷ তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিট-কে আস্থাভোটে পরাজিত করে উভয় দল হেলমুট কোল-কে নতুন সরকারপ্রধান নির্বাচিত করে৷ স্মিট স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কোল-কে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন৷
অন্য এক পুনর্মিলন
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল পরমসখার মতো হাতে হাত ধরে? ছবিটি বিশ্বের সর্বত্র ছাপা হয়েছিল৷ সময়: ১৯৮৪ সাল৷ স্থান: ভ্যার্দঁ-তে জার্মান-ফরাসি মৈত্রী অনুষ্ঠান, যে অনুষ্ঠানে দুই নেতা পরস্পরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন৷
জার্মান পুনর্মিলন
১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর কোল বিভক্ত জার্মানির পুনর্মিলনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যান৷ ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর সাবেক পূর্ব জার্মানি ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রে যোগদান করে – কোল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের তুঙ্গে পৌঁছন৷ বার্লিনে রাইশটাগ-এর সোপান থেকে হাত নাড়ছেন কোল ও তাঁর তৎকালীন স্ত্রী হানেলোরে৷
ম্যার্কেলের গুরুপ্রতিম
হেলমুট কোল ছাড়া বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মান রাজনীতিতে এতোবড় ভূমিকা নিতে পারতেন কিনা, বলা শক্ত৷ নব্বইয়ের দশকে কোল সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজনীতিকটিকে প্রথমে ফেডারাল পরিবার মন্ত্রক, পরে পরিবেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেন৷
১৬ বছর চ্যান্সেলর থাকার পর বিদায়
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে সিডিইউ দলের পরাজয় ঘটে, আসে চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার-এর লাল-সবুজ সরকার৷ প্রথা অনুযায়ী সামরিক প্যারেড সহ বিদায় দেওয়া হয় হেলমুট কোল-কে৷
স্ত্রীবিয়োগ
২০০১ সালে আত্মহত্যা করেন হেলমুট কোল-এর ৪১ বছরের সহধর্মিনী হানেলোরে কোল৷ একটি দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে তিনি সূর্যালোক সহ্য করতে পারতেন না৷
নবজীবন
হানেলোরোর মৃত্যুর চার বছর পরে হেলমুট কোল তাঁর চেয়ে ৩৪ বছর কম বয়সের মাইকে রিশটার-কে বিবাহ করেন৷