1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিউনিখের বাংলাদেশিদের ভোট ভাবনা

আসমা মিতা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

‘জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ভোটারদের মাঝে ততই তার উত্তাপ ছড়াচ্ছে' বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই কথা যতটা সত্যি জার্মানির ‘টেক হাব' খ্যাত মিউনিখের ভোটারদের বেলায় যেন ঠিক তার উল্টো৷

https://p.dw.com/p/2k7lO
ছবি: DW/A. Mita

বিশেষত বাংলাদেশি জার্মান ভোটাররা তো এক সপ্তাহ পরে ভোট বলে আরও কয়েকটা দিন ভাবতে চান, তারপরই সিদ্ধান্ত৷

২৪শে সেপ্টেম্বর জাতীয় নির্বাচন কিন্তু মিউনিখে নির্বাচনের প্রচার খুঁজতে রীতিমতো হন্যে হয়ে খুঁজতে হয়েছে ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদককে৷ এত নিরুত্তাপ কেন মিউনিখ?

‘‘আসলে মানুষের যখন কাজ থাকে, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয় তখন আর তার রাজনীতি নিয়ে ততটা উৎসাহ থাকে না৷ একইসাথে এটাও ঠিক মানুষকে যদি তাদের ভালমন্দ বুঝতে দেয়া হয় তাহলে তারা আর ঐভাবে মিছিল মিটিং এ যাবে না৷ রাজনীতিবিদরাও জানেন, যেখানে মানুষ আত্মনির্ভরশীল সেখানে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাবে৷ এটাই নিয়ম৷ অনেক সময় হাতে থাকলে তবেই না মানুষ মিছিল মিটিং করবে৷ সব শ্রেণির ভোটারকেই এখানকার প্রার্থীরাও টার্গেট করে৷ কিন্তু তারপরও তারা জানে যে মিউনিখে খুব বেশি ভোটারকে এই জোয়ারে টানা যাবে না৷'' বলছিলেন প্রায় ১৫ বছর ধরে মিউনিখে থাকা অত্যন্ত সফল টেক ব্যবসায়ী সাইফুল্লাহ৷

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdwbengali%2Fvideos%2F10154846968465978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

এটা কি শুধু বাংলাদেশি না কি জার্মান ভোটারদের বেলায়ও সত্য?

‘‘জার্মান ভোটাররা মিডিয়াতে অনেক বেশি সময় দেয়৷ মিডিয়া তাদের শিক্ষিত করে, সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে৷ এখানকার কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল আছে যেখানে প্রার্থীদের সব বিষয় নিয়ে সরাসরি উন্মুক্ত আলোচনা হয়৷ আর সেখান থেকেই ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেন৷''

Deutschland München - Begalische Wähler zur Bundestagswahl 2017
‘সব শ্রেণির ভোটারকেই এখানকার প্রার্থীরাও টার্গেট করে’ছবি: DW/A. Mita

আরেক বাংলাদেশি সোহরাব মুন্সী৷ তিনিও দীর্ঘদিন ধরে মিউনিখে আছেন৷ পেশায় ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার৷ তিনি জানালেন, ‘‘এখানকার ভোটারদের এসব নিয়ে ভাবার সময় আসলে কতটুকু আছে বা এই ভাবনা তার জীবনে প্রত্যক্ষভাবে কতটা গুরুত্ব রাখে সেসব বিবেচনা করেন সবাই৷ এই শহরে কাজের সুযোগ প্রচুর, প্রায় সবাই ধনী, জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত৷ তাই বেশিরভাগ মানুষ তাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত৷ ভোটের প্রচার সেকারণেই চোখে পড়ে না৷''

শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কি ভোট দিতে যাবেন? সাইফুল্লাহ জানালেন, ‘‘যাবেন৷ তবে বাংলাদেশে যেমন ৬০ বা ৭০ ভাগ ভোট পড়ে তেমনটা হবে না৷ সেটা এখানকার ফলাফলে খুব একটা পার্থক্যও তৈরি করে না৷''

Deutschland München - Begalische Wähler zur Bundestagswahl 2017
‘মিডিয়া তাদের শিক্ষিত করে, সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে’ছবি: DW/A. Mita

‘‘আগের বছরগুলোর তুলনায় অবশ্য এবার ভোটের পরিবেশে কিছুটা  পার্থক্য আছে৷ কারণ জার্মানি প্রায় ১০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ তাদের কারণে অনেকে অনেক রকম আশংকা করে৷ দুই একটা অঘটন যে ঘটেনি তাও নয়৷ কিন্তু সেটা তো অন্য আরও অনেক ক্ষেত্রেও হচ্ছে৷ বিশ্বব্যাপী রাজনীতিবিদরাই তো ঘৃণার মনোভাব ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ জার্মানিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ এখানেও একটি রাজনৈতিক দল মানুষের মাঝে এই ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন, করে যাচ্ছেন৷ এবারে মনে হচ্ছে ঐ বিষয়টা খানিকটা কাজ করেছে৷ তবে ব্রেক্সিটের পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে পরিস্থিতির৷''

অন্যদিকে সোহরাব জানালেন, ‘‘মুসলমানবিরোধী বক্তব্য দিয়ে কেউ কেউ নানা প্রচার চালিয়েছে আমি দেখেছি৷ তারা যে একেবারেই সফল হবে না তা নয়৷ তবে সংখ্যাটা খুব বেশি হবে না৷ বরং আগের বছরের তুলনায় এবার একটু বেশি ভোটারই ভোট দেবেন বলে আমার ধারণা৷''

কীভাবে সংসদে পৌঁছায় একটি দল?

কথা হলো নাদিয়া মল্লিকের সাথে৷ নাদিয়া এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন৷ ভোট নিয়ে তার ভেতরে বেশ উৎসাহ কাজ করছে বলে জানালেন৷ বললেন, ‘‘নিজেকে বেশ ক্ষমতাবান মনে হচ্ছে৷ কারণ আমি এবার এত বড় একটা মতামত দেয়ার সুযোগ পাচ্ছি৷''  তবে নাদিয়ার যেসব বন্ধুরা আগের বছরই ভোটার হয়েছেন তাদের মধ্যে নাকি ভোট নিয়ে কোন আলোচনাই নেই৷ পড়ালেখা, স্কুল, বন্ধুবান্ধব এসব নিয়ে আলাপ করতেই বেশি ভালবাসেন তারা৷ নাদিয়া তাহলে এতটা আগ্রহী কেন? ‘‘বাসায় বাবা মা এসব নিয়ে আলাপ করে৷ তারা তো অনেক বছর ধরে এসব ফলো করেন৷ কে ক্ষমতায় আসলে আমাদের ভাল হবে সেসব বোঝেন৷ তাই আমারও একটু আগ্রহ হয়েছে৷ তবে এখনও বুঝতে পারছি না৷ কাকে ভোট দেব৷ দেখি ইন্টারনেট ঘেটে আর বাসায় আরেকটু কথা বলে তবেই সিদ্ধান্ত নেব৷''

Deutschland München - Begalische Wähler zur Bundestagswahl 2017
এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন নাদিয়া মল্লিক (ডানদিক থেকে প্রথম)ছবি: DW/A. Mita

প্রকৌশলী রাজীব আহসানের মতে, ‘‘কোন কিছুতে উৎসাহের বেশি প্রকাশ না দেখানোই জার্মান সংস্কৃতির অংশ৷ এত বছর এই দেশে থেকে তা বুঝে ফেলেছি৷ কাজেই স্বাভাবিকভাবে ভোট নিয়েও যে তারা খুব একটা বেশি কথা বলবেন না সেটা ধরেই নেয়া যায়৷ তবে যাদের খবর রাখার তারা ঠিকই খবর রাখছেন বলেই আমার বিশ্বাস৷ ভোট দেবার বেলায়ও আমরা অনেক বেশি আবেগি সিদ্ধান্ত নিই৷ এই দেশে এসবের কোন জায়গা নেই৷''

নামকরা একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেন শামীমা করিম বেলি৷ তিনি জানালেন, ‘‘বড় এক রাজনৈতিক দলের এক প্রার্থী একা একা একদিন সকালে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন ভোট চাইতে৷ এতে তার বিস্ময়ের সীমা ছিল না৷'' ‘এখানে প্রায়ই এমন হয়' জানালেন তিনি৷ বললেন, ‘‘এখানে কোন একটা অঘটন ঘটলেও কেউ সেটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে না৷ এটা ভোটরদের জন্য খুব কাজ করে৷''

শামীমার সহকর্মী এবং বন্ধু খুরশিদা আক্তার বললেন, ‘‘অনেক প্রার্থী এই দেশে বিদেশিদের দেখতে চায় না৷ আমরা জানি তারা কারা৷ কাজেই আমাদের যারা এখানে চায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশিদের টিউশন ফি যারা কমাবে, নানা সুযোগ দেবে তাদেরই আমরা ভোট দেব৷ দুই একদিনের মধ্যেই পোস্টাল ব্যালটে আমি ভোট দিয়ে ফেলবো৷''  এই পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা থাকায় বাংলাদেশের মতো ভোটের দিন কখনোই এখানে কেন্দ্রে লম্বা লাইন চোখে পড়ে বলেও জানালেন তিনি৷

মিউনিখে বহু বছর ধরে থাকা একদল সফল মানুষের সাথে কথা বলে কেবল যে বাংলাদেশি ভোটারদের মনোভাবই জানা গেছে তা নয়৷ বরং যেকোন বিদেশি এমনকি জার্মান ভোটারদের মনোভাবও বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷

মিখনিখে জার্মানির প্রথম শ্রেণির একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছেন ফাহমিদা আহসান৷ তিনি বললেন, ‘‘এদেশে ইংরেজিতে পড়ালেখা চালু করেছে যে দল তারা বিদেশিদের কাছে বেশি জনপ্রিয়৷ আমিও স্বাভাবিকভাবেই তাদের পছন্দ করি৷ আমরা যারা অন্য দেশ থেকে এসেছি, আমাদের স্বার্থ যারা বেশি রাখতে চান তাদেরই ভোট দেব৷ দ্বৈত নারিকত্ব, পরিবার পরিজনকে এখানে এনে রাখার সুযোগ...এসব বিষয় যারা দেখবেন তাদের কথাই বিদেশি ভোটাররা বেশি মাথায় রাখবেন বলে আমার মনে হয়৷'' 

এ বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য