জার্মানির নদীতে খুদে সেনাদের অভিযান
১৩ জানুয়ারি ২০১৮দূষণ নিয়ে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি আগে থেকেই যথেষ্ট সচেতন৷ বনে অনুষ্ঠিত সবশেষ পরিবেশ সম্মেলনেও দূষণ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে৷ বস্তুত আবর্জনা রিসাইকেলের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই সচেতন জার্মানি৷ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং প্লাস্টিক আবর্জনার রিসাইকেলের বিষয়ে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু তাতেও কি প্লাস্টিকের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচানো যাচ্ছে?
সম্প্রতি জার্মানির বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়৷ নর্থ জার্মান রিসার্চ ল্যাব কিলার ফোরশুংসভ্যার্কসাটের তরফ থেকে পরীক্ষাটির ব্যবস্থা করা হয়৷ এবং তার ফলাফল যথেষ্ট আশঙ্কাজনক৷
১০ থেকে ১৪ বছরের শিক্ষার্থীদের জার্মানির বিভিন্ন নদী সংলগ্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল৷ তাদের কাজ ছিল নদী থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করা৷ স্কুল পর্যায়ের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী তাতে যোগদান করে৷ তাদের সংগ্রহ করা আবর্জনা এরপর পাঠানো হয় গবেষণাগারে৷ শিক্ষিকা এবং গবেষক কাটরিন ক্রুজ সেই আবর্জনা পরীক্ষা করে এখনও পর্যন্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন, তা ভয়াবহ৷
কাটরিন বলেন, ‘‘এতদিন মনে করা হতো সমুদ্র দূষণে জার্মানির বিশেষ ভূমিকা নেই৷ কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, জার্মানির অসংখ্য নদীর পানি শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে গিয়ে মেশে৷ মূলত উত্তর সাগর এবং বাল্টিক সমুদ্রে৷ এবং নদীতে প্লাস্টিকের দূষণ এতই বেশি যে, সেই পানি সমুদ্রে গিয়ে পড়ার পর তা একইমাত্রায় সমুদ্রের পানিকেও দূষিত করছে৷’’
এখনও পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সব মিলিয়ে ১০,৮৯৭ টি আবর্জনা সংগ্রহ করতে পেরেছে৷ নদী সংলগ্ন ১৬,৬১১ স্কোয়্যার মিটার অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে এই পরিমাণ আবর্জনা পাওয়া গেছে৷ গবেষণা চালিয়ে যার মধ্য থেকে প্রচুর মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া গেছে৷ অর্থাৎ, মোট আবর্জনার ৫০ শতাংশই হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক৷
দূষণের পরিমাণ বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিয়েছেন কাটরিন৷ প্রতি সেকেন্ডে রাইন নদীর ২,৯০০ কিউবিক মিটার পানি উত্তর সাগরে গিয়ে মেশে৷ গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে রাইনের পানির সঙ্গে ১৪,৫০০টি মাইক্রো প্লাস্টিক উত্তর সাগরে গিয়ে পড়ছে৷ এটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক৷
কিছুদিন আগে উত্তর সাগরের উপকূলে তিমি মাছেরা আটকে পড়েছিল৷ সে সময় বেশ কিছু তিমির পাকস্থলী থেকেও মাইক্রো প্লাস্টিক উদ্ধার করা হয়েছিল৷ বস্তুত পৃথিবী জুড়েই এই বিষয়টি নিয়ে গবেষকেরা কাজ করছেন৷ তাঁরা দেখাচ্ছেন, কীভাবে সমুদ্রের জলে মাইক্রো প্লাস্টিক বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এবং মাছেরা সেই প্লাস্টিক খাবার ভেবে গিলে ফেলছে৷ শুধু দূষণ নয়, জীববৈচিত্র রক্ষার ক্ষেত্রেও এটি একটি আশঙ্কার বিষয়৷
সারা পৃথিবীতেই নদী সংস্কার এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে৷ চীনের ইয়াংসিকিয়াং এবং ভারতের গঙ্গায় দূষণ কমানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে৷ বস্তুত, নব্বইয়ের শেষ দিকে ব্রিটেনের টেমসকে পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নদী বলে ধরা হতো৷ দূ‘হাজার সালের পর টেমস সংস্কারের একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়৷ আপাতত টেমস পৃথিবীর পরিষ্কার নদীগুলির অন্যতম৷ অর্থাৎ, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়৷ নদী সংস্কার করতে চাইলে, প্লাস্টিকহীন করতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব৷
জার্মানির গবেষকদের আশা, টেমসের মতোই জার্মানির নদীগুলিকেও প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ এবং সে ক্ষেত্রে তারিফ করতেই হবে জার্মানির স্কুলের খুদে ছাত্রদের৷ তাদের অভিযানের জন্যই এত তথ্য পাওয়া সম্ভব হলো৷
কাটারিনা ভেকার/এসজি