জার্মানির ট্রেড ইউনিয়নগুলো কি অনেক প্রভাবশালী?
২১ মে ২০১৯চলতি বছরের জানুয়ারির কথা৷ বাৎসরিক ছুটিতে দেশে যাবো৷ বাড়ির জন্য কেনাকাটা শেষ করে লাগেজও গুছিয়ে ফেলেছি৷ পরেরদিন ফ্লাইট৷ হঠাৎ মুঠোফোনে এক ক্ষুদেবার্তা এলো৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের ধর্মঘটের কারণে অনেক উড়াল বাতিল৷ তার মধ্যে আমারটাও আছে৷
সেই উড়াল বাতিল হওয়ায় কাঙ্খিত সময়ের দেড়দিন পর দেশে যেতে হলো৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকায় পৌঁছাতে না পারায় অভ্যন্তরীণ একটি রুটের টিকিটও বাতিল হলো৷ সব মিলিয়ে কিছুটা আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হলাম৷
জানি, ধর্মঘটের কারণে ক্ষতির শিকার আমার মতো অনেকে হয়েছেন৷ কারো হয়ত ক্ষতি আরো বেশি হয়েছে৷ তারপরও জার্মানিতে যখন কোনো ধর্মঘট দেখি, তখন কেন যেন সঙ্গে সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নকে দায়ী করতে পারি না৷ কেন বলছি?
আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, জার্মান ট্রেড ইউনিয়গুলো কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকে না৷ বরং ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় এই দেশে ধর্মঘটের হার অনেক কম৷ এ দেশে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দিনের পর দিন আলোচনার মাধ্যমে যে-কোনো ইস্যু সমাধানের চেষ্টা করে৷ একান্তই যখন সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়, তখন ধর্মঘটের মতো কঠোর আন্দোলনে নামে সংগঠনগুলো৷ আর সেটা করা হয় আইনি কাঠামোর মধ্যেই৷
এদেশে ধর্মঘটের মানে এই নয় যে, রাস্তায় নেমে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির মাধ্যমে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে৷ বরং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর্মবিরতির মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করা হয়৷ আর যেসব দাবিতে সেই ধর্মঘট, তার প্রতি পেশাজীবীদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থনও দেখা যায়৷
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়৷ সেটা হচ্ছে, ট্রেড ইউনিয়নগুলো কোনো একক ব্যক্তির স্বার্থ দেখার চেয়ে সামগ্রিকভাবে পুরো গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়৷ ফলে পেশাজীবীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়মিত তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে৷ দেখা যায়, মাসের পর মাস ধরে তারা বেতন বাড়ানো বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আর আলোচনার টেবিলেই তারা অধিকাংশ সমাধান পেয়ে যায়৷ ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সদস্যরা হয়ত সেসব আলোচনার কথা ভালোভাবে জানেনও না৷
আমি মনে করি, শ্রমিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়ন থাকা জরুরি৷ জার্মানি এক্ষেত্রে এক চমৎকার উদাহরণ৷ এদেশে বিভিন্ন পেশার মানুষরা, বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা যে ভালো আছেন, তার পেছনে এক বড় অবদান এই ইউনিয়নগুলোর৷ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও জার্মানিতে পেশাজীবীরা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাচ্ছেন৷
মোটের উপর, সংগঠনগুলো যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, একক কোনো ব্যক্তি সেগুলো দিয়ে লাভবান হচ্ছে না৷ এমনকি কেউ অন্যায় করে সংগঠনের জোরে পার পেয়ে যাওয়ার কথাও আমি কখনো শুনিনি৷ তাই সেগুলো ক্রমশ আরো প্রভাবশালী বা শক্তিশালী হয়ে উঠলেও ক্ষতি কিছু নেই৷
আমাদের দেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলো যদি ব্যক্তিস্বার্থের বদলে সামগ্রিকভাবে পুরো গোষ্ঠী বা সমাজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে কর্মজীবী শ্রেণি লাভবান হবে বলে মনে করি৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন ইউনিয়নের মধ্যে সমন্বয় এবং সেগুলোকে সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা জরুরি মনে করি৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷