জার্মানির ‘জাম্বো' সংসদের আসন কমানো হচ্ছে
১৪ মার্চ ২০২৩জার্মানির জনসংখ্যা প্রায় আট কোটি ৩০ লাখ হলেও সে দেশের সংসদের নিম্ন কক্ষে বর্তমানে রেকর্ড ৭৩৬ জন সদস্য রয়েছেন৷ জটিল নির্বাচনি আইনের দৌলতে গত নির্বাচনের পর এত সংখ্যক জনপ্রতিনিধি চার বছরের জন্য বেতন ও নানা আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন৷ কোনো ঊর্দ্ধসীমা না থাকায় ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ রাজকোষের উপর চাপ কমাতে বেশ কিছুকাল ধরে জার্মানির নির্বাচনি আইন সংস্কারের উদ্যোগ সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে এতকাল সাফল্য পাওয়া যায় নি৷ এবার চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে তিন দলের জোট সরকার নিজস্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সেই ‘সাহসি' পদক্ষেপ নিতে চলেছে৷
চলতি সপ্তাহে জার্মান সরকার যে আইন অনুমোদনের উদ্যোগ নিচ্ছে, তার আওতায় বুন্ডেসটাগের সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যা ৬৩০ অতিক্রম করতে পারবে না৷ গত জানুয়ারি মাসে সরকার যে খসড়া প্রস্তুত করেছিল, তাতে সেই সংখ্যা ৫৯৮ রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু সে ক্ষেত্রে কিছু নির্বাচনি কেন্দ্র থেকে কোনো জনপ্রতিনিধি সংসদে প্রবেশ না করার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ঊর্ধ্বসীমা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে৷
জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিলতার মূলে রয়েছে ভোটারপ্রতি দুটি করে ভোট৷ প্রথম ভোট যায় পছন্দের প্রার্থীর জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের রাজনৈতিক দলের জন্য৷ সেই দ্বিতীয় ভোটের সংখ্যা অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলি বাড়তি সংসদ সদস্য মনোনয়ন করতে পারে৷ তার উপর সরাসরি নির্বাচিত প্রার্থী ও তালিকার দৌলতে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে জটিল হিসেবের কারণে বাড়তি কিছু আসন সৃষ্টি হয়৷ এমন সব প্রচলিত নিয়মের কারণে সংসদের নিম্ন কক্ষ ফুলেফেঁপে ওঠে৷ আইনের বর্তমান খসড়া অনুযায়ী নির্বাচনি কেন্দ্রের সংখ্যা ২৯৯ রাখা হলেও রাজ্য তালিকায় ৩৩১টির বেশি আসন থাকবে না৷
বলা বাহুল্য জার্মানির বিরোধী দলগুলির মধ্যে এই সংস্কারকে কেন্দ্র করে তুমুল অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে৷ বিশেষ করে বাভেরিয়ার সিএসইউ দল এবং বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে' সরকারের এই আইন বাতিল করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ্য হবার হুমকি দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, এই দুই দল বর্তমান নির্বাচনি নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে এসেছে৷ বিশেষ করে বাম দল মাত্র তিনটি আসন সরাসরি জিতলেও দু-দুবার সংসদীয় দলের মর্যাদা ও বাড়তি আসন পেয়েছে৷
সংসদে প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের সিডিইউ দল এই উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছে, নির্বাচনি আইনের সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের যে দস্তুর রয়েছে, বর্তমান সরকার তা অগ্রাহ্য করেছে৷ ফলে বর্তমান পরিকল্পনা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না বলে দলের সাধারণ সম্পাদক মারিও চায়া দাবি করেন৷ সিএসইউ দলের প্রধান ও বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার সরকারের পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের উপর হামলা' হিসেবে বর্ণনা করেন৷ বাম দলের প্রধান জানিন ভিসলারও সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষকে অবজ্ঞার অভিযোগ করে বলেন, এই পরিকল্পনার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)