জার্মানির ‘অ্যামেরিকান ওয়ে’
২৩ মার্চ ২০১৩দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয় ঘটে যে সব শক্তিদের হাতে, তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম করতে হয়৷ আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি সহযোগী৷ এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে৷ বন শহরের ‘‘হাউস ডেয়ার গেশিশ্টে'' বা যুদ্ধপরবর্তী ইতিহাস মিউজিয়ামে একটি প্রদর্শনী চলেছে, যার নাম: ‘‘দ্য অ্যামেরিকান ওয়ে৷ জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্র৷''
প্রদর্শনীতে বিভিন্ন বস্তু, আলোকচিত্র, অডিওটেপ ইত্যাদির মাধ্যমে বিগত ৬৮ বছরের জার্মান-অ্যামেরিকান সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে৷ ইতিহাস ভবনের পরিচালক হানো জোভাডে বলেছেন: ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জার্মানির ইতিহাসের কথা ভাবাই যায় না৷'' প্রদর্শনীটির প্রস্তুতি চলেছে দু'বছর ধরে৷ প্রদর্শনী চলবে ১৩ই অক্টোবর অবধি৷
অ্যামেরিকার ভাবমূর্তি
মার্কিনিরা জার্মানির উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তা দেখানোর জন্য প্রদর্শনীটিকে তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে: নিরাপত্তা নীতি, অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবন৷ প্রতিটি বিভাগেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের চিহ্নও স্পষ্ট৷ ১৯৪৫ সালে অ্যামেরিকান মিউজিক বলতে জার্মানরা যা বুঝতো, আর আজ তারা লেডি গাগা বলতে যা ভাবে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক৷ লেডি গাগা আর সেই অর্থে ‘মার্কিন' নন, তিনি অ্যাপল কিংবা আইপডের মতোই দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ৷
যুদ্ধে মার্কিনিরা ছিল শত্রু, তারা জার্মানির শহরগুলির উপর বোমা ফেলেছে৷ কাজেই জার্মানদের তাদের ভালো লাগার কথা নয়৷ দখলদারি শক্তি হিসেবে এসেও কিন্তু মার্কিনিরা তাদের এই নেতিবাচক ভাবমূর্তি বদলানোর চেষ্টা করেছে৷ ‘কেয়ার'-এর জন্ম সেভাবেই৷ ‘কেয়ার' বলতে সিএআরই কেয়ার, অথবা কোঅপারেটিভ ফর অ্যামেরিকান রেমিটান্সেস টু ইউরোপ, ইউরোপের প্রতি মার্কিন অর্থপ্রেরণের সমবায়৷ সেই কেয়ারের ছাপ দেওয়া প্যাকেটই বহু ক্ষুধার্ত জার্মানদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছে৷
তারপরে আসে মার্শাল প্ল্যান, যে সব দেশ যুদ্ধে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অর্থনীতিকে আবার খাড়া করার জন্য৷ মার্শাল প্ল্যান ছাড়া জার্মানির অর্থনীতি অতো অল্প সময়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না৷ ১৯৪৮-৪৯ সালে দখলদারি সোভিয়েত শক্তি পশ্চিম বার্লিনের প্রতি স্থলপথে যাবতীয় সরবরাহ নিষিদ্ধ করার পর মার্কিন বোমারু বিমান প্রায় এক বছর সময় ধরে পশ্চিম বার্লিনকে বাঁচিয়ে রাখে৷
এলভিস, এলভিস
ওদিকে মার্কিন সংস্কৃতি তখন জনপ্রিয় পাশ্চাত্য সংগীতের রূপ ধরে জার্মান বসতবাড়ি ও বৈঠকখানা ঘরে ঢুকে পড়েছে৷ পঞ্চাশ আর ষাটের দশকে এলভিস প্রেসলি ও বিল হেইলি'র মতো গায়করা ছিলেন জার্মানদের হিরো৷ তার একটি কারণ ছিল বার্লিনে মার্কিন সেক্টরের রিয়াস বেতারকেন্দ্র৷ রিয়াসের কল্যাণে সোভিয়েত সেক্টরেও মানুষরা মার্কিন গান শুনতো, যে কারণে প্রাক্তন পূর্ব জার্মানির নেতৃত্ব রিয়াসের সম্প্রচার রোখারও চেষ্টা করেছিল৷
পপকর্ন এবং ব্লু জিনস
জার্মান সিনেমা হলগুলিতেও হলিউডের জয়যাত্রা বহুদিন আগে শুরু হয়৷ সেজন্য বন'এর ইতিহাস মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে মার্কিন চলচ্চিত্রের জন্য একটি আলাদা কক্ষ রাখা হয়েছে৷ মার্কিন ছবির সঙ্গে সঙ্গে কোকাকোলা এবং পপকর্ন ও ব্লু জিনস জার্মানদের হৃদয় জয় করে ফেলে৷
প্রতিবাদ
তবে ষাটের দশকের শেষে জার্মানিতেও ‘‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের'' বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মাথা চাড়া দেয়, বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে৷ আশির দশকে জার্মানিতে মার্কিন ক্রুইজ মিসাইল স্থাপন নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন দানা বাঁধে৷ এমনকি ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয়নি৷
তবে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখলে যে বিষয়টি সবচেয়ে চমৎকৃত করে, তা হল: জার্মানি আজ কতোটা ‘মার্কিন' হয়ে পড়েছে! অপরদিকে মার্কিনিরা জার্মানি সম্পর্কে কী ভাবে? তা নিয়ে হয়তো ভবিষ্যতে আরো একটি প্রদর্শনী করার প্রয়োজন পড়বে৷