জার্মানিতে স্বাস্থ্য বিমাহীন মানুষদের দুরবস্থা
৮ মে ২০১৩কিন্তু তিনিও তাঁর চিকিৎসা করতে রাজি হননি৷
এর কারণ সম্পর্কে ব্রাজিলীয় তরুণী মারিয়ানা বলেন, ‘‘আমার স্বাস্থ্য বিমা না থাকায় তাঁরা আমার কাছে ৪০০ ইউরো নগদ চান৷ কিন্তু আমার সাথে এত টাকাও ছিল না৷''
এমন পরিস্থিতিতে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে হাসপাতালে যান এই ভুক্তভোগী, কিন্তু সেখানে পড়েন আরও বড় সমস্যায়৷ ‘‘তাঁরা অসুখের ধরণ ও কারণ খুঁজে বের করতে শুধুমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দাবি করেন ৪০০ ইউরো, চিকিৎসা করার জন্য ৩০০ ইউরো এবং ওষুধপত্রের জন্য আরও ৪০০ ইউরো অগ্রিম চান৷''
ব্যথায় প্রচণ্ড কাতর হয়ে পড়া সত্ত্বেও তিনি কোনো চিকিৎসাই পাননি৷ তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন এবং বেঁচে থাকার আশাও প্রায় ছেড়ে দেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত নিজ দেশ ব্রাজিলে গিয়ে চিকিৎসা করে রক্ষা পান মারিয়ানা৷
খরচের প্রশ্ন
এটি সম্ভবত একটি চরম ঘটনা হলেও একমাত্র নয়৷ বিশেষ করে জার্মানিতে চিকিৎসকরা জরুরি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আর এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর খরচটা সমাজ কল্যাণ দপ্তর থেকেও পরিশোধ করা যেতে পারে৷ অবশ্য জরুরি পরিস্থিতি কোনটি – তা ঠিক করা নিয়ে প্রায়ই নানা রকম মতামত থাকে৷ অনেক চিকিৎসক এবং হাসপাতাল ঝামেলা ও খরচের ভয়ে স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া বিদেশিদের চিকিৎসা হাতে নিতে চান না৷
এর সাথে রয়েছে আরেকটি অনিশ্চয়তা৷ আর তা হলো, রোগীর ইমিগ্রেশন অফিসে নিবন্ধন করা আছে কিনা, তা দেখা৷ কারণ কিছুদিন আগেও জার্মান অভিবাসন আইনে বিধান ছিল যে, জার্মানিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী কোন মানুষের চিকিৎসা করতে হলে চিকিৎসকদের অভিবাসন কর্মকর্তাদের তা জানাতে হবে৷ তবে ২০০৯ সালে এই বিধান পরিবর্তন করা হয় এবং সেই থেকে চিকিৎসকরা এমন পরিস্থিতিতে রোগীর তথ্য গোপন রেখে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন৷
বহিষ্কার হওয়ার চেয়ে রোগী থাকাই ভালো
জার্মান কেন্দ্রীয় চিকিৎসক পরিষদের এথিক্স কমিশন তাই স্বাস্থ্য বিমা বিহীন রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের উদারনৈতিক বিধি বিধানের পক্ষে৷ সম্প্রতি বার্লিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে চিকিৎসক পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার উলরিশ ক্লেভার বলেন, ‘‘অভিবাসী হওয়ার কারণে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ে কিংবা বিমা না থাকায় কোনো মানুষ দেরিতে চিকিৎসা পাবে কিংবা আদৌ চিকিৎসা পাবে না তা হতে পারে না৷''
এথিক্স কমিশনের হিসাবে, জার্মানিতে দুই লাখ থেকে ছয় লাখ মানুষের কোনো স্বাস্থ্য বিমা নেই৷ এদের মধ্যে বহিষ্কার এড়াতে আত্মগোপন করে থাকা মানুষ, আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থী, রাষ্ট্রীয় পরিচয়হীন এবং অবৈধভাবে বসবাসকারী দম্পতিদের সন্তানেরা রয়েছে৷ এছাড়া রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা, বিশেষ করে বুলগেরিয়া ও রুমানিয়া থেকে আসা মানুষরা যাদের কোনো বিমা নেই এবং নির্মাণ কাজে ও বাড়িঘরের কাজে অবৈধভাবে নিযুক্ত কিছু ব্যক্তি৷
দাতব্য সংস্থাগুলো সব চাহিদা মেটাতে পারে না
অনেক শহরে স্বাস্থ্য বিমাহীন মানুষদের পরিচয় গোপন রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ করে মেডিনেটস এবং মালটেসার মাইগ্র্যান্ট মেডিসিন (এমএমএম)-এর মতো চিকিৎসকদের কিছু দাতব্য সংস্থা৷ এমএমএম সংস্থাটি গত ১২ বছরে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছে৷ এভাবে মালটেসার-এর মতো সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাগুলো জার্মানির স্বাস্থ্য খাতের একটি বড় অংশের অভাব পূরণ করছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতা প্রায়ই ঘটে থাকে, যে বৈধ কাগজ-পত্র বিহীন মানুষ এসব সংস্থার কাছ থেকে সেবা গ্রহণের জন্য চুক্তি করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে৷