জার্মানিতে সেবাকর্মীর ঘাটতি
১৯ অক্টোবর ২০১৩বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চলতি দশকের শেষ নাগাদ সেবা ক্ষেত্রে ২২০,০০০ কর্মীর অভাব দেখা দেবে৷ কেননা এখানে প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত৷ তাই অন্যান্য দেশ থেকে সেবাকর্মী আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার৷
দৃষ্টিতে দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশগুলি
দৃষ্টিতে রয়েছে দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশ স্পেন গ্রিস, ইটালি ও পর্তুগাল৷ অন্যদিকে এইসব দেশে অর্থনৈতিক সংকট ও ব্যয়সংকোচনের কারণে বেকার সমস্যাও প্রকট৷ তাই সেসব দেশ থেকে শ্রমশক্তি আনা সহজ হবে বলে আশা করছে জার্মান সরকার৷ এ ছাড়াও সার্বিয়া ও বসনিয়া হ্যারৎসেগোভিনা এবং টিউনিশিয়া ও ফিলিপাইন্স-এও খোঁজা হচ্ছে সেবক সেবিকা৷ একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫০ জন চীনা সেবক সেবিকাকে জার্মানিতে আনা হচ্ছে৷
সরকারের এই প্রচেষ্টাকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন, বাম দলের সাংসদ নিমা মোসাভাট৷ তাঁর মতে, কয়েকটি দেশে এর নেতিবাচক ফলাফল পড়তে পারে৷ এই দেশগুলির নিজেদেরই সেবা-কর্মীর অভাব রয়েছে৷ তিনি সমালোচনা করে বলেন, ‘‘জার্মান সরকারের সাহায্যের অর্থ দিয়ে অনেক উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্যকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে৷ অন্যদিকে প্রশিক্ষিত কর্মীদের নিজ দেশে কাজে লাগার সুযোগ না দিয়ে জার্মানিতে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এটা তো অর্থহীন৷ যেমন ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে সেবক ও সেবিকা আনা হয়েছে৷''
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়নি
জার্মান সরকার আত্মপক্ষ সমর্থন করে উত্তরে জানিয়েছে যে, এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়নি৷ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে, সেই সব দেশ থেকে প্রলোভন দেখিয়ে এই সব ক্ষেত্র থেকে লোক আনা যাবে না৷ অন্য কথায় জনসাধারণের অন্তত ৮০ শতাংশের স্বাস্থ্য রক্ষা নিশ্চিত হতে হবে৷ এই পরিস্থিতি ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের বেলায় প্রযোজ্য৷ ডাব্লিউএইচও অবশ্য সক্রিয়ভাবে কর্মী আনার ব্যাপারে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে৷ সরকার বলছে এশিয়ার দেশগুলিতে বিশেষজ্ঞ কর্মীদের সক্রিয়ভাবে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে না৷
আর কোনো বিকল্প নেই
এই প্রসঙ্গে জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডানিয়েল বার বলেন, ‘‘আমরা সেই সব দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছি, যে সব দেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোনো জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে না৷''
এই মন্ত্রীর মতে বিদেশ থেকে সেবা কর্মী আনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এই সব শ্রমশক্তির ব্যাপারে আমরা এক তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে রয়েছি৷ আমরা তাদের আনার চেষ্টা না করলে এই সব কর্মী সুইজারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলিতে চলে যাবেন৷ জার্মান সরকার এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ শ্রমশক্তিকে সচল করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত হবে না৷''
অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাম্বুলেটরি সার্ভিস-এর হুবার্ট রোসার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, ‘‘বিদেশি সেবাকর্মী ছাড়া আর চলবেই না৷'' তাঁর প্রতিষ্ঠান ১০০০টি নার্সিং হোম ও নার্সিং সার্ভিসের দায়িত্বে রয়েছে৷ তবে জার্মানিতে সেবার পেশাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে কাঠামোগত সমস্যাগুলি আয়ত্তেআনতে হবে৷ রোসার সেবাকর্মীদের জন্য কাজের সুযোগ সুবিধা ও বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন৷ এছাড়া দূর প্রাচ্য থেকে আনা সেবাকর্মীরা সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বাস্তব ক্ষেত্রে কতোটা সুরাহা বয়ে আনবে সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘৮০ বছর বয়সি জরাজীর্ণ কোনো বৃদ্ধের সঙ্গে ভারত, চীন কিংবা ভিয়েতনামের কোনো সেবাকর্মীর পরিচয় করিয়ে দিলে, ব্যাপারটা কেমন হবে?''