জার্মানিতে সিরীয় শরণার্থীরা সরাসরি রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে না
২৪ নভেম্বর ২০১৬জার্মানির অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত ফেডারাল কার্যালয় বা বিএএমএফ (‘বাম্ফ') সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া থেকে আগত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদেরও শুধুমাত্র ‘সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন', অর্থাৎ সহায়ক বা সম্পূরক সুরক্ষা দিচ্ছে, জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ উদ্বাস্তু সুরক্ষা নয়৷
তফাৎটা এই যে, পূর্ণ সুরক্ষার অর্থ, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী জার্মানিতে প্রাথমিকভাবে তিন বছর ধরে বাস করার অনুমতি পাবেন এবং সাধারণত তার পরপরই স্থায়ী ‘রেসিডেন্স পার্মিট' দেওয়া হয়ে থাকে৷ এছাড়া এ ধরনের উদ্বাস্তুরা তাদের পরিবারবর্গকে জার্মানিতে নিয়ে আসতে পারেন৷
সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের মাত্র এক বছরের রেসিডেন্সি পার্মিট দেওয়া হয়ে থাকে৷ পরে তা আরো দু'বছরের জন্য বাড়ানো হতে পারে৷ কিন্তু সেই মেয়াদবৃদ্ধির জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হয়৷ এছাড়া সংশ্লিষ্ট আশ্রয়প্রার্থীর পরিবারবর্গকে ২০১৮ সালের আগে জার্মানিতে আসতে দেওয়া হবে না৷
‘বাম্ফ' এইভাবে মোট ১,১৩,০০০ উদ্বাস্তুকে সহায়ক বা সম্পূরক সুরক্ষা দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৯৪,০০০ জন এসেছেন সিরিয়া থেকে৷ ৩৩-বছর-বয়সি সিরীয় তরুণী একটি মামলা করেছিলেন৷ সেই মামলার রায় হলো গতকাল, অর্থাৎ ২৩শে নভেম্বর, বুধবার৷
শ্লেসভিগের প্রশাসনিক আদালতের প্রাথমিক রায় অনুযায়ী, সেই তরুণীর পূর্ণ উদ্বাস্তু সুরক্ষা পাওয়ার কথা৷ কিন্তু ‘বাম্ফ' এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর প্রশাসনিক আদালতে আপিল করে৷ সিরীয় নারীর বক্তব্য ছিল, দামেস্কে তাদের বসবাসের এলাকায় একটি ‘গণহত্যার' পর তারা সপরিবারে পলায়ন করেন৷ পথে বন্দুকধারীরা তাদের হত্যা করার ভয় দেখিয়েছে বলেও তিনি জানান৷ ওই নারীর স্বামী ও চার সন্তান আপাতত তুরস্কে রয়েছেন৷
শ্লেসভিগের উচ্চতর প্রশাসনিক আদালতের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি উটা স্ট্রিজ বলেছেন, ‘‘সিরীয়া যে (দেশে প্রত্যাবর্তনকারী) সকলকেই বিরোধী বলে সন্দেহ করে, তার কোনো প্রমাণ নেই৷'' ‘সেনেট', অর্থাৎ বেঞ্চের মতে সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তনকারীদের যে নিয়মিত জেরা করা হয়, সে সম্বন্ধেও আদলতের কাছে কোনো খবর নেই৷ কাজেই ফরিয়াদী সিরীয় নারীকেই দেখাতে হবে যে, তাঁর রাজনৈতিক নিপীড়নের আশঙ্কা রয়েছে৷ শুধুমাত্র সিরিয়া থেকে পলায়ন রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার কারণ হতে পারে না৷ অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত ফেডারাল কার্যালয় ‘বাম্ফ' ঠিক এই যুক্তিই দেখিয়েছিল৷
সারা জার্মানিতে আপাতত ৩২,০০০ এ ধরনের মামলা বিভিন্ন প্রশাসনিক আদালতে ঝুলছে৷ এ পর্যন্ত যে ৩,৪৯০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, তার তিন-চতুর্থাংশ মামলায় রায় গেছে উদ্বাস্তুদের দিকে৷ নয়তো বহুকাল ধরে ইরিত্রিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ‘সহায়ক সুরক্ষা' দিয়ে আসা হচ্ছিল৷ অন্যদিকে সিরীয়রা প্রায় বিনা ব্যতিক্রমে পূর্ণ সুরক্ষা পাচ্ছিলেন৷ ২০১৬ সালের মার্চে ‘দ্বিতীয় অ্যাসাইলাম প্যাকেজ' গৃহীত হবার পর সিরিয়া থেকে উদ্বাস্তুদের আগমন হ্রাস করা হবে ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি পাওয়ার নিয়মাবলী আরো কঠিন করা হবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ অতঃপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উদ্বাস্তুদের পক্ষের উকিলরা সন্দেহ করছেন৷
প্রতিবেদন: ভোলফগাং ডিক/এসি
সম্পাদনা : আশীষ চক্রবর্ত্তী