জার্মানিতে সমালোচনার মুখে ফেসবুক
১৬ জানুয়ারি ২০১৮ছবিটি ‘বারবারা’ নামের একটি ফেসবুক পাতায় পোস্ট করা হয়েছিল৷ বারবারা আসলে একটি ছদ্মনাম৷ এই পাতার পেছনের মানুষটি একজন স্ট্রিট আর্টিস্ট৷ তাঁর কাজেকর্মে অনেক হাস্যরসের উপাদান থাকে৷ এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন সাইন পালটে তা দিয়ে রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে হাস্যরস তৈরির চেষ্টা করেন তিনি৷ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্রিমে অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিলেন বারবারা৷
আলোচিত ছবিটি মুছে দেয়ার পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন তিনি৷ ছবিটি কেন মোছা হয়েছে, তার কারণ জানানো হয়নি৷ ফলে বিষয়টিকে ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হুমকির চেয়েও বেশি কিছু মনে করছেন বারবারা৷
অবশ্য জার্মানিতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হওয়া একটি আইনের কারণে ছবি মোছা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটিই জানিয়েছেন বারবারা৷ নতুন আইনটি ‘নেৎসডিজি’ নামে পরিচিত৷ অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো রোধে এই আইন তৈরি করা হয়৷ এছাড়া অশোভন, আপত্তিকর ও অবৈধ তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধও এই আইনের উদ্দেশ্য৷ ফলে এ ধরণের বিষয়াদি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য সংশ্লিষ্ট সাইট কিংবা সামাজিক মাধ্যম৷ তা করতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ৫০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
কয়েকদিন আগে টুইটারও একটি স্যাটায়ারধর্মী টুইট মুছে দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল৷
এসব ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি নতুন আইনের সমালোচনা হচ্ছে৷ বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, আইনটি ঠিকভাবে লেখা না হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমগুলো এমন ‘ওভারব্লকিং’ করছে৷ বাম দলের পেট্রা সিট্টে ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘যখন শক্ত ডেডলাইনের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমগুলোকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন এমন সমস্যার (যেমন স্যাটায়ার বিষয়টি কীভাবে দেখা হবে) উদ্ভব হয়৷’’
সবুজ দলের রাজনীতিক কন্সটান্টিন ফন নোৎস মনে করেন, নতুন আইন সামাজিক মাধ্যমগুলোকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে৷ শিল্পকর্মের স্বাধীনতা বিষয়ে ফেসবুকের কোনো ধারণা নেই বলেও মনে করেন তিনি৷ ‘‘সব নগ্নবক্ষ সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলা হয়, এমনকি সেটা ক্লাসিক্যাল ওয়েল পেইন্টিং হলেও,’’ ডিডাব্লিউকে বলেন তিনি৷
অবশ্য অনলাইনে প্রকাশ হওয়া অবৈধ বিষয়াদি সরিয়ে ফেলা ও তার লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার বিষয়ে একমত রাজনীতিবিদরা৷
গণমাধ্যম আইন বিশেষজ্ঞ ইয়র্গ হাইডরিশও নতুন আইনে শব্দের ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, নেৎসডিজি একটি বিভ্রান্তিকর আইন৷ এটি বাতিল করা উচিত৷’’ ভুল করে ছবি বা তথ্য মুছে ফেলার প্রতিবাদ জানানোর একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি৷
জেফারসন চেজ/জেডএইচ