শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার৷ কিন্তু এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় সাধারণ জনতা৷ তাই ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি তাদের৷ শুক্রবার সেই চত্বরে হাজির হয়েছিল লাখো মানুষ৷ এখনো সেখানটা লোকে লোকারণ্য৷ দাবি তাদের একটাই, ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই৷'
এই দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন প্রবাসীরা৷ ইতোমধ্যে স্টুটগার্ট, গ্যোটিঙেন, বার্লিন-সহ কয়েকটি শহরে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশিরা৷ জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও অংশ নেন ৬০ জনের মতো বাংলাদেশি৷ অংশগ্রহণকারীরা সেখানে রাজাকার বিরোধী পোস্টার, কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরুপ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন৷ অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মসূচির আয়োজকরা৷
রবিবার জার্মানির আরো দুটি শহরে শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশ করা হয়েছে৷ ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে একটি সমাবেশের আয়োজকদের অন্যতম শামস-উল-আরেফিন৷ ডয়চে ভেলেকে তাদের উদ্যোগ সম্পর্কে আরেফিন বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ শাস্তির দাবিতে এক সপ্তাহ আগে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একাত্মতা ঘোষণা করছি৷''
রবিবার অপর কর্মসূচিটির আয়োজন করা হয়েছে ফ্রাংকফুর্ট শহরে৷ এই কর্মসূচির ফেসবুক ইভেন্টের শিরোনাম, ‘প্রজন্ম চত্বর – যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চাই, ফ্রাংকফুর্ট – ডার্মস্টাড, জার্মানি৷' আয়োজকরা সেখানে লিখেছেন, ‘জার্মানিতে অবস্থানরত আমরা হয়ত শাহবাগে উপস্থিত থাকতে পারছি না, যদিও খারাপ লাগছে অনেক৷ কিন্তু ঐকান্তিক ইচ্ছা আর কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হতে পারলে আমরা বিশ্বাস করি ঘৃণা আর প্রতিরোধের আগুন সবখানে, সবসময়েই জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব৷'
আরেফিন জানান, প্রজন্ম চত্বরের মতো তাদের দাবিও একটাই৷ আর তা হচ্ছে, ‘‘কাদের মোল্লা এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী যাদের ইতিমধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, তাদেরকে ফাঁসি দেওয়া হোক৷ এটা আমাদের মূল দাবি৷ আমরা চাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তারা যেন কোনভাবেই ছাড় না পায়৷''
এসেন ক্যাম্পাসে সমাবেশে অংশ নেওয়া আরেক প্রতিবাদকারী সৌরভ খান জানান, ‘‘পদ্মা থেকে যমুনা, তিতাস থেকে করতোয়া, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, সব খানে আজ শাহবাগের জড়ো হওয়া প্রজন্মের জয় বাংলার গর্জনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে৷ এই আন্দোলনের সাথে আমরাও সংহতি প্রকাশ করছি৷’’
আবেদীন সোহেল বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি যা কিছু দেশের জন্য ভালো তারুণ্যের হাত ধরে তার শুরু হোক এই শাহবাগ থেকে৷’’ শুদ্ধ সৌরভের কথা হচ্ছে, ‘‘বাংলাদেশিরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একেকটা শাহবাগ থেকে ন্যায়বিচারের জন্য একই সুরে চিৎকার করে যাবে৷’’ রবিবারের প্রতিবাদ সমাবেশের পর ফেসবুক বার্তার মাধ্যমে সৌরভ খান, আবেদীন সোহেল এবং শুদ্ধ সৌরভের এই বক্তব্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন শামস-উল-আরেফিন৷
উল্লেখ্য, জার্মানিতে বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দেড় হাজারের মতো৷ এছাড়া চাকুরিজীবীর সংখ্যাও বাড়ছে৷ বর্তমানে শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা ছাড়াও এর আগে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, পেশাজীবীরা৷ এভাবে বাংলাদেশের জাতীয় ইস্যুতেও সোচ্চার প্রবাসী বাংলাদেশিরা৷