দূর পাল্লার বাসে ভ্রমণ
১১ আগস্ট ২০১৪শুক্রবার, বার্লিনের প্রধান বাস স্টেশনের এক চিত্র: রংচঙে কয়েকটি বাস এসে থামছে, কয়েকটি ছেড়ে যাচ্ছে৷ যাত্রীরা দলে দলে বাক্সপ্যাটরা, রুকসাক নিয়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মের দিকে যাচ্ছেন৷ কেউ কেউ নামছেন বাস থেকে৷ বাসগুলি যাচ্ছে হামবুর্গ, ড্যুসেলডর্ফ, মিউনিখ, সাউয়ারলান্ড কিংবা হারৎস-এর দিকে৷
রেলেরই ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য
দূর পাল্লার যাত্রার ক্ষেত্রে ৭০ বছরেরও বেশিদিন ধরে এয়ারলাইন্সগুলির পাশাপাশি জার্মান রেলেরই ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য৷ কিন্তু ২০১৩ সালের প্রথম দিকে রেলের একচেটিয়া বাজারটি হেলে পড়ে৷ এখন তো ছোট বড় নানা কোম্পানির বাস ১৭০ এর মতো রুটে চলাচল করছে৷ যাত্রীদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ কেননা রেল ও বিমানের চেয়ে বাসের ভাড়া তুলনামূলক অনেক কম৷
বার্লিন থেকে মিউনিখে আসা যাওয়া করা যায় মাত্র ৩৪ ইউরোতেই৷ যেখানে একই পথ পাড়ি দিতে ট্রেনের বিশেষ অফারেও গুণতে হয় ৯৯ ইউরো৷ আর প্লেনের সবচেয়ে সস্তার টিকেটের দাম ১১৫ ইউরো৷
সার্ভিস ভালো
ভাড়া কম হলেও বাসের সার্ভিস কিন্তু মন্দ নয়৷ সব কোম্পানিই বাসে স্ন্যাক্স, পানীয় ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখে৷ ট্রেনের মতো বাসেও রয়েছে টয়লেট৷ রয়েছে ইন্টারনেটের সংযোগ৷
আমাদের বাস চালক স্টেফান যাত্রা শুরু করলেন৷ সেই সাথে সাদর সম্ভাষণ জানালেন যাত্রীদের৷ আজ তাঁর মেজাজটা বেশ ফুরফুরে মনে হয়৷ ঠাট্টা করে বললেন, ‘‘ড্রিংক্স পাবেন সামনে আমার কাছে৷ টয়লেট রয়েছে বাসের পেছন দিকে৷ আর হ্যাঁ ‘অ্যালার্ম' লেখাটির ওপরে লাল বাতিটাকে কিন্তু ফ্ল্যাশ বলে ভুল করবেন না৷''
বাস ড্রাইভার স্টেফান হালকা হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে টানার চেষ্টা করেন৷ ‘ফ্লেক্সিবুস' ও ‘মাইন ফ্যার্নবুস'-এর মতো বাস কোম্পানিগুলিতে নতুন এই ট্রেন্ড লক্ষ্য করা যায়৷
তরুণদের কাছে টানাই মূল লক্ষ্য
আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করার জন্য নানা ধরনের বাস ট্রিপের আয়োজন করতো৷ যাকে ‘কফি ট্রিপ' বলা হতো৷ সাধারণত অবসরভোগী প্রবীণ জনগোষ্ঠীই এই ধরনের ট্রিপে অংশগ্রহণ করতেন৷ আজকের বাসযাত্রা এই ইমেজটা দূর করতে চায়৷ বাস কোম্পানিগুলি এখন তরুণ ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে টানতে চায়, যাদের চড়া মূল্যে টিকেট কেনার সামর্থ্য নেই৷ তার বদলে যাত্রার সময়টা দীর্ঘ হলেও মেনে নেয়৷ আর তাই এই তরুণ সম্প্রদায়ের মন মানসিকতা অনুযায়ী পরিবেশটাও তৈরি করার চেষ্টা করা হয়৷ সাধারণত বাসগুলি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দেয়৷ প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রেনের চাইতে নিঃসন্দেহে অনেক মন্থর৷ সপ্তাহান্তে ও স্কুলের ছুটিকালীন সময়ে যানজটের কবলেও পড়তে হয় এই যানগুলিকে৷ ‘গতি' হয়ে পড়ে আরো শ্লথ৷
দেরিতে হলেও ঠিক মতো পৌঁছানো
ওদিকে বাস চালক স্টেফান ধীরে ধীরে বাভারিয়ার রাজধানী মিউনিখে পৌঁছালেন৷ বাইরে তখন অন্ধকার নেমেছে৷ বেশিরভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছেন৷ ভেতরে গুমোট বাতাস৷ হঠাৎ শোনা গেল স্টেফানের কন্ঠ: ‘‘প্রিয় যাত্রীরা, আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই মিউনিখের প্রধান বাস স্টেশনে পৌঁছাচ্ছি৷ যারা এখনও ঘুমাচ্ছেন, তাঁদের সময় হয়েছে জেগে ওঠার৷''
স্টেফান ধীরেসুস্থে মোটরওয়ে থেকে বের হয়ে বাসটি স্টেশনের দিকে চালাতে চালাতে ঠাট্টার সুরে ঘুম ভাঙাতে চেষ্টা করলেন যাত্রীদের৷ এর কিছুক্ষণ পর ২১ মিনিট বিলম্বে বিশাল যানটি এসে থামলো নির্দষ্ট টার্মিনালে৷ প্রায় ৮ ঘণ্টার যাত্রা শেষ হলো৷ ভাড়া লেগেছে ১৭ ইউরো৷ যাঁরা ধৈর্যশীল ও বিলাসিতার জন্য আকুল নন, তাঁদের কাছে বাসের জুড়ি নেই৷ অন্তত ভাড়ার দিক দিয়ে তো বটেই৷